করছাড়ের সিদ্ধান্ত এখন সংসদের হাতে: এনবিআর চেয়ারম্যান
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

করছাড়ের ক্ষমতা আর এনবিআর বা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে না—এখন থেকে কোন খাতে কতটা করছাড় দেওয়া হবে বা আদৌ দেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় সংসদ। করনীতির এ পরিবর্তনের দিকটি তুলে ধরে এমন তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে রোববার (১৬ নভেম্বর) আয়োজিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, করব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করতেই এই নতুন নীতি-কাঠামো প্রণয়ন করা হয়েছে। তাঁর ব্যাখ্যায় উঠে আসে, রাজস্ব ব্যয় ও ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার নীতিমালার আলোকে আয়কর আইন ও কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট সব বিধান সংশোধন করা হয়েছে, যেখানে বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ করছাড় আর প্রশাসনিকভাবে নির্ধারিত সিদ্ধান্ত নয়; তা হবে জনগণের ম্যান্ডেট অনুযায়ী সংসদীয় নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে।
বিদেশি উন্নয়ন অংশীদারেরা যেসব ঋণ দিয়েছে, তাদের ঋণের সুদের ওপর করমুক্তির প্রস্তাব থাকলেও বর্তমান নীতির কারণে এখন তা দেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিদেশি যারা আমাদেরকে ঋণ দিয়েছে, তাদের ঋণের সুদের ওপর যে ট্যাক্স মাফ করার কথা বলা হয়েছে, এটা আপাতত আমাদের করার সুযোগ নেই। এটা আগামী পার্লামেন্টই ঠিক করবে, জনগণ ঠিক করবে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান জানান, এর ফলে বিদেশি উন্নয়ন অংশীদারদের ঋণের সুদের ওপর করমুক্তি দেওয়ার যে প্রস্তাব ছিল, তা আপাতত বাস্তবায়নযোগ্য নয়; এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ, অর্থাৎ জনগণের ম্যান্ডেট।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান ও বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, বন্ডের অপব্যবহারে যারা জড়িত, তাদেরই যেন শাস্তি দেওয়া হয়; কারণ এ ক্ষতির ভার বহন করতে হয় নিয়ম মেনে চলা ব্যবসায়ীদের। অপব্যবহারকারীদের পরিচয় প্রকাশ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ভুলচুক হলে সেটি বন্ডধারীর দায়, অথচ অনেক সময় শাস্তি পায় নির্দোষেরা। তিনি আরও বলেন, বন্ড লাইসেন্সে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এইচএস কোড নিয়ে অযথা জটিলতা সৃষ্টি হয়। বছর শেষে পূর্ণাঙ্গ হিসাব দেওয়া হয় যখন, তখন এইচএস কোডজনিত ভুলকে মিথ্যা ঘোষণা হিসেবে দেখা অনুচিত। তাই এইচএস কোড তুলে দেওয়ার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করতে পারে।
মোহাম্মদ হাতেম অভিযোগ করেন, রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বদলির ফলে ফাইল দীর্ঘদিন আটকে থাকে, আর ছোট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়াই বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ছোট উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনার অনুরোধও জানান তিনি।
এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, কারও অদক্ষতা প্রমাণ হলে চাকরিচ্যুত করা হবে। পণ্যের এইচএস কোডজনিত বিলম্ব রোধে কাস্টমস পুরোপুরি অনলাইনে আনা হবে, যা সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) ইস্যুতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত ও স্বচ্ছ সেবা দেওয়ার জন্য কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিবিএমএস) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে তিনটি কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে ২৪টি মডিউল ব্যবহার করে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
‘মিট দ্য বিজনেস’ আলোচনায় গার্মেন্টস, নিটওয়্যার, টেক্সটাইল, লেদারগুডস খাতের শীর্ষ সংগঠনগুলো (বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিএপিএমইএ, বিটিএমএ, এলএফএমইএবি) এ সিদ্ধান্তে সমর্থন জানায়। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ইউপি-সংক্রান্ত সব সেবা সিবিএমএসের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করা হবে; এনবিআর শিগগিরই আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা জারি করবে।
আমার বার্তা/জেএইচ
