ই-পেপার শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তামাক জাতীয় দ্রব্যে সতর্কীকরণ বাণী ও বিক্রি

মো. মাসুদ চৌধুরী:
০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:১০

আমরা প্রতিনিয়ত বাজার থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করছি। ক্রয় করার ক্ষেত্রে আমরা সাধারনত ক্রেতা সাবধান নীতি (Caveat emptor) ও বিক্রেতা সাবধান নীতি (Caveat venditor) অনুসরণ করে থাকি। ক্রেতা সাবধান নীতির মূল বক্তব্য হচ্ছে জেনেশুনে ক্রয় করুন কারন ক্রয় করার পরে পণ্য সম্পর্কিত কোন অভিযোগ বিক্রেতা গ্রহণ করবেন না। তাই বিক্রেতা পন্য সম্পর্কে নীরব থাকলেও, ক্রেতাকে নিজ দায়িত্বে পন্য সম্পর্কে জানতে হবে। ধরা যাক পায়েল একটি রিকন্ডিশন গাড়ি কিনতে চান। তাহলে গাড়ি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করা পায়েলের দায়িত্ব। তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে পায়েল বিক্রেতার সাহায্য নিতে পারবেন। পায়েল বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করতে পারবেন গাড়ির বর্তমান অবস্থা, গাড়ির মাইলেজ, গাড়ি রেগুলার সার্ভিস করা হয়েছে নাকি ইত্যাদি। তথ্য বিশ্লেষণ করে পায়েল গাড়িটি ক্রয় করার পরে অকেজো হলে পায়েল আর বিক্রেতাকে দায়ী করতে পারবেন না। অর্থাৎ গাড়ি নষ্ট হওয়ার কারণে বিক্রেতা পায়েলকে কোন ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন না। উল্লেখ্য, বিক্রেতা যদি ক্রয়ের সময় ক্রেতাকে মিথ্যে তথ্য প্রদান করেন, তাহলে বিক্রেতা অবশ্যই ক্রেতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন।

কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, পন্য/সেবা সম্পর্কে বিক্রেতার কাছে ক্রেতা থেকে বেশি তথ্য থাকে। এটাকে তথ্যগত অসামঞ্জস্যতা (ইনফরমেশনাল এসিমেট্রি) বলা হয়ে থাকে। যেমন, রিকন্ডিশন গাড়ির ক্ষেত্রে বিক্রেতা গাড়ি সম্পর্কে ক্রেতা অপেক্ষা বেশি জানেন। আর তাই বর্তমানে ক্রেতা সাবধান নীতির পরিবর্তে বিক্রেতা সাবধান নীতিটি বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিক্রেতা সাবধান নীতিটির মূল বক্তব্য হচ্ছে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করা। অর্থাৎ, বিক্রেতার দায়িত্ব হচ্ছে একটি নিরাপদ মানসম্পন্ন পণ্য ক্রেতাকে সরবরাহ করা। অধিকন্তু, যেহেতু পণ্যের ত্রুটি, জটিলতা ও সীমাবদ্ধতা বিক্রেতা ক্রেতা অপেক্ষা বেশি জানেন, সেহেতু বিক্রেতার দায়িত্ব হচ্ছে ক্রেতাকে পণ্য সম্পর্কে জানানো। বিক্রেতা ক্রেতাকে পণ্যের ক্ষতিকারক বিষয়সমূহ যদি না জানিয়ে থাকেন, আর ক্রেতা পণ্য/সেবাটি ভোগ/ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে বিক্রেতাকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। আর তাই তামাকজাতীয় পণ্য সিগারেটের প্যাকেটে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর/ ধূমপানে বিষ পান/ ধূমপান মৃত্যু ঘটায় কথাগুলো লেখা থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন পণ্য/সেবার সতর্কীকরণ বা ব্যবহারের নির্দেশনা লেখা হয় এই নীতির আলোকে।

কিন্তু বাংলাদেশে সকল পন্য বা সেবার ক্ষেত্রে বিক্রেতা ও ক্রেতা এসব বিষয়ে সচেতন নয়। তাই বিক্রেতা পন্য বা সেবা সম্পর্কে সঠিক তথ্য গোপন করে ক্রেতাকে সর্বদা ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকেন এবং ক্রেতাও বিক্রেতার কাছ থেকে ক্ষতিপূরন আদায় করতে ব্যার্থ হন। এতে বিক্রেতারা বেপোয়ারা হয়ে ওঠেন এবং ক্রেতাকে ঠকানো একটি স্বাভাবিক কাজ বলে মনে করেন। কিন্তু উন্নত বিশ্বে বিক্রেতা ও ক্রেতারা এসব বিষয়ে খুব সচেতন। বিক্রেতার দায়িত্ব গাফলতিতে ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, ক্রেতা ক্ষতিপূরন আদায় করতে পারেন। যেমন, ৭০ বছর বয়সী আটলান্টা মহিলার ঘটনাটি লক্ষ্য করা যাক। ডানকিন ডোনাটসের কর্মচারী তার হাতে কফি তুলে দেওয়ার সাথে সাথে তার পানীয়ের ঢাকনা খুলে যায় এবং গরম পানিতে মহিলার (ক্রেতার) উরু, কুঁচকি এবং পেট দ্বিতীয় এবং তৃতীয়-ডিগ্রি পোড়ে যায়। ভদ্র মহিলা এর ক্ষতিপূরণের জন্য আইনের আশ্রয় নেন এবং ডানকিন ডোনাটসের থেকে ৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ আদায় করেন। এক কাপ কফির দাম ৩ মিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে এই ধরনের মামলাগুলি খুব বেশি হয়েছে এবং কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতাদের ক্ষতিপূরন প্রদান করেছেন।

এবার তামাক জাতীয় পণ্য কেন বিক্রি হচ্ছে আলোকপাত করা যাক। আমাদের এই প্রশ্নের উত্তরটি আছে উপযোগিতাবাদের (ইউটিলিটারিয়ানিজম প্রিন্সিপাল) দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। উপযোগিতাবাদের মূল বিষয়বস্তু হলো যেকোনো কর্ম এবং নীতিগুলি সমাজে প্রত্যেকের জন্য তাদের উৎপন্ন সুবিধা এবং খরচের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা উচিত। অর্থাৎ কাজ বা নীতিগুলো যদি খরচের থেকে বেশি সুবিধা প্রদান করে তবে কাজগুলো সমাজে গৃহীত হবে। আর যদি সুবিধা থেকে খরচ বেশি হয় তবে তা বর্জন করতে হবে। ধরুন আপনি একটি ট্রলি গাড়ির চালক যিনি ঘন্টায় ষাট মাইল বেগে ট্র্যাকে চালাচ্ছেন। ট্র্যাকের সামনে পাঁচজন শ্রমিক বাঁধা অবস্থায় আছেন। আপনি ট্রলিটি থামানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু আপনি থামাতে পারছেন না। হঠাৎ, আপনি একটি পার্শ্ব ট্র্যাক লক্ষ্য করলেন এবং ওই ট্র্যাকে মাত্র একজন শ্রমিক বাঁধা অবস্থায় আছেন। আপনি নিশ্চয়ই ট্রলি গাড়িটিকে পাশের ট্র্যাকে ঘুরিয়ে দিয়ে পাঁচজনকে বাঁচাবেন৷ আপনি একজনকে হত্যা করেছেন সত্বেও, সমাজ আপনার কাজটি ভালোভাবে গ্রহন করবে। কারন আপনি পাঁচ জনের জীবন বাঁচিয়েছেন।

১৯৮০-এর দশকে, ফোর্ড পিন্টো নামে একটি ছোট গাড়ি তৈরি করে। পিন্টোর স্টাইলিংয়ের জন্য গ্যাস ট্যাঙ্কটিকে পিছনের অ্যাক্সেলের পিছনে স্থাপন করা হয়েছিল। ক্র্যাশ পরীক্ষায় দেখা যায় পিছন থেকে ২০ মাইল প্রতি ঘন্টা বা তার বেশি বেগে আঘাত করা হলে, গ্যাস ট্যাঙ্কটি কখনও ভেঙে যায় এবং তারপরে গ্যাস যাত্রীবাহীর বগিতে, গাড়ির নীচে ও চারপাশে প্রবেশ করে। তারপর বিস্ফোরণ এবং মৃত্যু। স্বাভাবিক ভাবেই আপনি ভাবছেন ফোর্ড গাড়ির ডিজাইন পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু না। ফোর্ড ম্যানেজাররা গ্যাস-ট্যাঙ্কের নকশা পরিবর্তন না করেই পিন্টো তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। নকশাটি সেই সময়ে সমস্ত আইনি এবং সরকারী মান পূরণ করেছিল। ফোর্ড এই সিদ্ধান্তটি ছিল উপযোগিতাবাদের দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে। ফোর্ডের একটি অভ্যন্তরীণ গবেষণায় দেখা গেছে, পুরো সমাজের জন্য এর নকশা অপরিবর্তিত রাখার চেয়ে পিন্টোকে সংশোধন করা আরও ব্যয়বহুল হবে। ফোর্ড ১২.৫ মিলিয়ন অটো শেষ পর্যন্ত নির্মিত করেছিলেন। প্রতিটি পিন্টোর গ্যাস ট্যাঙ্ক পরিবর্তন করতে প্রায় ১১ ডলার খরচ হবে। আর মোট খরচ হবে ( $১১*১২.৫ মিলিয়ন = ১৩৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ নকশা পরিবর্তন করলে, ফোর্ড এর খরচ হবে ১৩৭ মিলিয়ন ডলার। ফোর্ড গবেষনা করে দেখল: পরিবর্তন না করলে, এতে প্রায় ১৮০ জন মানুষ পুড়ে মারা যেতে পারে, ১৮০ জন গুরুতর দগ্ধ হতে পারে এবং ২,১০০ টি গাড়ি পুড়ে যেতে পারে। সেই সময় (১৯৭০) সরকার একটি মানুষের জীবনের মূল্য ২০০,০০০ ডলার করেছিল। বীমা কোম্পানি একটি গুরুতর বার্ন আঘাত মূল্য ছিল ৬৭,০০০ ডলার এবং পিন্টোর গড় অবশিষ্ট মূল্য ছিল ৭০০ ডলার। ফোর্ড এর মোট খরচ হবে ৪৯.১৫ মিলিয়ন ডলার [ (১৮০ মৃত্যু × ২০০,০০০) + (১৮০ আহত × ৬৭,০০০) + (২১০০ যানবাহন × ৭০০) = ৪৯.১৫ মিলিয়ন ডলার]। নকশা পরিবর্তন করলে, খরচ হবে ১৩৭ মিলিয়ন ডলার। আর যদি নকশা পরিবর্তন না করা হয়, তাহলে খরচ হবে ৪৯.১৫ মিলিয়ন ডলার। যেহেতু সুবিধা থেকে খরচ বেশি সেহেতু ফোর্ড ম্যানেজার মৃত্যু ঝুঁকি আছে জেনেও গাড়ির ডিজাইনটি পরিবর্তন করেননি। একই নীতি অনুসরন করে বিশ্বে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। তামাক জাতীয় পণ্য থেকে অর্জিত আয়, এর ক্ষতি থেকে অনেক বেশি বিধায় তামাক জাতীয় পণ্য বিশ্বব্যাপী অবলীলায় বিক্রি হচ্ছে।

আশার আলো হচ্ছে, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন গবেষণা বলছে তামাক জাতীয় পণ্য বিক্রি থেকে অর্জিত লাভ, তার ক্ষতি থেকে কম। যেমন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এবং আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় সম্পূর্ণ জাতীয় পর্যায়ের সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তামাকজনিত মোট বার্ষিক অর্থনৈতিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৩০৫.৬ বিলিয়ন টাকা। অন্যদিকে, বাংলাদেশে জিডিপিতে তামাক খাতের মোট অর্থনৈতিক অবদান (পারিবারিক চূড়ান্ত খরচ, বেসরকারি ও সরকারি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ এবং নেট রপ্তানির পরিপ্রেক্ষিতে) ২২৯.১ বিলিয়ন টাকা অনুমান করা হয়েছিল। এটি তামাকের আনুমানিক মোট ব্যয়ের থেকে ৭৬.৫ বিলিয়ন টাকা কম। তাই তামাক শিল্প বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য নেট অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ। উপযোগিতাবাদের নীতি (ইউটিলিটারিয়ানিজম প্রিন্সিপাল) অনুযায়ী বাংলাদেশে তামাক শিল্প অর্থনীতির লাভ থেকে বেশি ক্ষতিসাধন করছে বিধায় শিল্পটি ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়া উচিত।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

আমার বার্তা/এমই

বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তক শহীদ জিয়াউর রহমান

যে কোনো দেশের ইতিহাসে এমন এক সময় আসে যখনকার ঘটনাবলী অন্যান্য ঘটনাকে ম্লান করে দেয়।

বাংলাদেশে লোক কাহিনীর চলচ্চিত্র

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে লোক চাহিদার প্রভাব যথেষ্ঠ তাৎপর্যময়। উর্দু চলচ্চিত্রের আধিক্যের স্থলে লোক কাহিনীর চিত্রায়ন এবং

জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সংস্কার করতে হবে

দেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে রাষ্ট্র সংস্কার অপরিহার্য। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের

মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনেক পক্ষকেই ভূমিকা রাখতে হবে

মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা বন্ধে এবং মানবিক সহায়তা ও জাতীয় সমঝোতার পথ প্রশস্ত করতে পূর্ব এশিয়া
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রয়োজনে ভেঙে ফেলা হবে হাওরের সড়ক: ফরিদা আখতার

বিপ্লবে সরকার পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই বদলায়নি: গয়েশ্বর

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত অন্তত ৩২

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

কুয়াকাটায় প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা চরমে

টঙ্গীর রেলওয়ে ব্রিজে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল যুবকের

বিজিএমইএ নির্বাচনে ফোরামের প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমন চাকরি ছাড়া কিছুই ভাবতে দিচ্ছে না

প্রেসিডেন্টকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট

জুলাই বিপ্লবে ঢামেক শিক্ষার্থীদের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে: আসিফ

খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনের প্রশ্নই আসে না: সারজিস

কেরানীগঞ্জ কারাগারে হাজতির মৃত্যু

গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন হাসিনা: সাকি

ইলন মাস্ককে মস্তিষ্ক চিপ ট্রায়ালের অনুমতি দিলো কানাডা

দেশে ফ্যাসিবাদের জনক শেখ মুজিবুর রহমান: মির্জা ফখরুল

শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি হচ্ছে: শ্রম সচিব

২ মার্চকে ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি মঈন খানের

জুরাইনে ঘরে ঝুলছিল যুবকের মরদেহ

বাপের বাড়ি যেতে না দেওয়ায় অভিমানে বিষপানে গৃহবধুর আত্মহত্যা

নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান