ইসরাইল গাজার ৪৫হাজার নীরিহ নারী ও শিশুদের হত্যা করেছে

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

  কমল চৌধুরী:

আদিকাল থেকেই ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের ঘোর শত্রুতা  অব্যাহত। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর সময় থেকেই ইহুদীরা মুসলমানদের সাথে শত্রুতা করে আসছে । এই শত্রুতার যেন শেষ নেই।  অনন্তকাল পর্যন্ত মনে হয় এ শত্রুতা চলবেই।  মুসলমানদের সাথে ইহুদীদের যুদ্ধ, সংঘাত এর ধারাবাহিকতায় ইহুদীরা বিশ্বের মুসলমানদের উপর অত্যাচার করে আসছে। গাজায় সংঘাত দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্টিগুলো গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্বে আক্রমণ চালায়। শুধু প্রতিশোধ নিতে এতে একতরফাভাবে গাজায় মুসলমানদের উপর ইসরাইলের বোমা ও ড্রোন হামলা অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত হামাসের প্রায় ৪৫ হাজার মুসলমান নিহত ও ১ লক্ষ ৪০ হাজার আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৩২ হাজার শিশু, কিশোর ও  নারী রয়েছে। যুদ্বের নামে ইসরায়েলী সৈন্যরা গাজার নিরস্ত্র নীরিহ  শিশু, কিশোর ও নারীকে  অকাতরে গুলি করে হত্যা করছে। বিগত পবিত্র মাহে রমজান মাসে এবং ইদের দিনে ও তারা বোমা হামলা করেছে। ইসরায়েলীদের এ নারকীয় হত্যাযঞ্জের জন্য  সারা বিশ্বের লোকেরা(৩/৪টি আমেরিকাপন্থী দেশ ছাড়া) নিন্দা জ্ঞাপন করেছে।

বিশেষ করে মুসলমানদের উপর ইহুদিদের অত্যাচার /হামলাকে মানবতাবাদী লোকেরা কোনভাবেই মেনে নিচ্ছে না। তাই হামলা বন্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো একমত  হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘে ইসরাইল এবং গাজার যুদ্ধবন্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি বিল পাস হয়েছে। এতে আমেরিকা ভোট প্রদান করেনি এবং ভেটো ও দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিলটি পাস হয়ে যায়। কিন্তু  ইসরাইলরা জাতিসংঘের এই ঘোষণাকে ও মানছে না। তারা  গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র,জর্ডান ইহুদিদেরকে সাহায্যও সমর্থন করছে। আমেরিকা আরো ২৫০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র ইসরাইলে পাঠানোর সন্মতির সিদ্বান্তে ফিলিস্তিনিরা এবং বিশ্বের শান্তিপ্রিয় লোকেরা হতবাক।   আসলে আমেরিকা আন্তরিকভাবে চায় না যুদ্ধ বন্ধ হোক। ইসরাইলের ইহুদি সৈন্যরা এতই ভয়ংকর ও নিষ্ঠুর যে তারা গাজায় মুসলমানদের হাসপাতালে বোমা হামলা করেছে ও লাশের উপর ট্যাংক চালিয়ে লাশকে থেতলে খন্ড বিখন্ড করেছে। অতি সম্প্রতি গাজার রাফায় কয়েকটি হাসপাতালের পাশে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। এতে প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনির লাশের অস্তিত্ব/কংকাল পাওয়া যায়। জাতিসংঘের সাহায্যের জন্য যে সমস্ত শরণার্থীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেছে, তাদের উপর ইসরায়েলী সেনারা  বোমা হামলা ও গুলি করেছে।  হাসপাতালে ঢুকে তারা অক্সিজেন বন্ধ করে দিয়েছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের বের করে দিয়েছে। গাজায় শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে ইহুদী সৈন্যরা এখনো  নীরিহ শিশু, কিশোর ও নারীদেরকে হত্যা করে চলেছে। ইসরাইলীরা প্রতি ৩০ মিনিটে গাজায় একটি করে শিশু হত্যা করছে। অনেক বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছে। ইহুদীরা গাজায় মুসলমানদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিচ্ছে। গাজা নগরী এখন মহাশশ্মানে পরিণত হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েল কর্তৃক যুদ্বাপরাধ ও গণহত্যার দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্বে জাতিসংঘ অতি সম্প্রতি গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছে। যুক্তরাজ্য ও আরো ৭টি দেশ নেতানিয়াহুকে তাদের ভুখন্ডে পা রাখলে আটক করার সিদ্বান্ত নিয়েছে। ইসরায়েল গাজার রাফায় পুনরায় ন্থলযুদ্বের সিদ্বানÍ নিয়ে একতরফাভাবে বোমা হামলা চালাচ্ছে। রাফা থেকে ইতিমধ্যে জীবন বাঁচাতে ১ লক্ষ ৬০ হাজার মুসলিম অন্যত্র পালিয়ে গেছে।  ্এ যেন মড়ার উপর খাড়ার ঘা। আসলে সারাবিশ্বেই মুসলমানরা ইহুদী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের হাতে অকাতরে মার খাচ্ছে। ইসরাইল রাফা নগরী দখল করে ফেলছে। প্রতিদিন শত  লোককে ইসরাইল নির্মমভাবে হত্যা করলে ও আমেরিকা বলছে রাফায় ইসরাইল সীমিত পরিসরে আক্রমণ চালাচ্ছে। আমেরিকার আস্কারা পেয়েই ইসরাইল জাতিসংঘের  নিষেধাঞ্জা সত্বে ও রাফায় একতরফাভাবে হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। সারাবিশ্বের মুসলমান রাষ্ট্রগুলো যদি একজোট হতো, তাহলে মুসলমানদেরকে ইহুদিদের হাতে মার খেতে খেতে করুণ দুর্দশার শিকার হতে হতো না। ইসরাইল জাতিসংঘের কথা না মানাতে জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।  হিটলার যদি পৃথিবীতে আর মাত্র দুই বছর বেঁচে থাকতো, তাহলে এখন আর কোন ইহুদির বংশ কোথাও খুঁজে পাওয়া যেতো না। হিটলার মৃত্যুর পূর্বে বলেছিলÑআমি পৃথিবীতে কিছু ইহুদি রেখে গেলাম।মানুষ যাতে ইহুদীদের সম্পর্কে বুঝতে পারে- আসলে ওরা কেমন!

ইসরায়েল জাতিসংঘের নিষেধাঞ্জা অমান্য করে একতরফাভাবে গাজার নীরিহ মানুষ, নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করে চলেছে এবং ইরানের কনস্যুলেটে বোমা হামলা করেছে। এজন্য আমেরিকাতো ইসরায়েলের উপর নিষেধাঞ্জার কথা বলছে না। আমেরিকা ইউক্রেনকে গোপনে অস্ত্রের চালান পাঠাচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়াকে বলেছে, কেউ আমেরিকার সমকক্ষ নয়।  তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল বলছে, তারা আর মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বাড়াতে চায় না। আমেরিকা ইসরাইল ও ইরান দুই দেশকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছে।  আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিসিÍনপন্থী শিক্ষার্থীরা গাজার নিরীহ মুসলমানদের ্উপর ইসরায়েলী হত্যাযঞ্জ বন্ধের জন্য বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। পুলিশ গ্রেফতার করে ও বিক্ষোভকারীদের থামাতে পারেনি। কানাডা ও অষ্ট্রেলিয়ার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ও একই অবস্থা।আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো চাইলেই ইসরাইল ও হামাসের যুদ্ব বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে তাদের অস্র ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।কথায় বলে- আমেরিকা যার বন্ধু, তার নতুন কোন শত্রুর দরকার হবে না।আমেরিকা সারা বিশ্বে দাদাগিরি অব্যাহত রেখেছে।আমেরিকা,যুক্তরাজ্য,জর্ডানের মতো নাগিনদের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে আজ সারা বিশ্বের শান্তিকামী রাষ্ট্রের মানুষদের শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে।বিশ্ব থেকে শান্তির দূত যেন নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।


উল্লেখ্য যে, ইস্রায়েলের ১৮ বছরোর্ধ সকল নাগরিকের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা আবশ্যক। ।দ্য টাইমস অব ইসরায়েল-এর একটি বিশ্লেষণে, সংবাদপত্রটি লিখেছে যে "হামাস সহিংসভাবে বিশ্বের দৃষ্টি ফিলিস্তিনিদের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছে এবং ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে মার্কিন-মধ্যস্থতাতে একটি যুগান্তকারী চুক্তি অর্জনের গতিতে মারাত্মক আঘাত করেছে।" দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে যে ইসরায়েল ও সৌদির মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা ম্লান হয়ে গিয়েছে, সৌদি আরবের বিবৃতি উদ্ধৃত করে যে দেশটি ক্রমাগত "দখলদারিত্ব, ফিলিস্তিনি জনগণের বঞ্চিত ও তাদের ন্যায্য অধিকার এবং এর পবিত্রতার বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত উস্কানির পুনরাবৃত্তির ফলে পরিস্থিতির বিস্ফোরণের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছিল।"

 

লেখক : লেখক-নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সকালের সময়, ঢাকা।

 

আমার বার্তা/কমল চৌধুরী/এমই