অধিক রেমিট্যান্স অর্জনে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত অভিবাসীর বিকল্প নেই
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:২১ | অনলাইন সংস্করণ
মো. জিল্লুর রহমান:
প্রতি বছর ১৮ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সকল সদস্যভূক্ত দেশে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর দিনটি বিশ্বব্যাপী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। মূলতঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক হারে অভিবাসন ও বিপুল সংখ্যক অভিবাসীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে ঘিরেই এ দিবসের উৎপত্তি। ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদ অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় ৪৫/১৫৮ নং প্রস্তাব আকারে আন্তর্জাতিক চু্ক্তি গ্রহণ করে।
অভিবাসীদের মাধ্যমে অর্জিত হয় রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদেশিক সম্পদ অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হল রেমিট্যান্স। আর রেমিট্যান্স হলো দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি এবং উন্নয়নের ভিত্তি, স্বপ্নের সোনালী সোপান ও অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তবে শক্তিশালী রেমিট্যান্সের জন্য দরকার দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি। আর দক্ষ ও প্রশিক্ষিত অভিবাসীদের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেই অভিবাসন হওয়া দরকার কিন্তু বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের বিশেষ চাহিদা থাকায় অনেক শ্রমিক অভিবাসন করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা অতি সামান্য যোগ্যতা বা দক্ষতা অর্জন করে অথবা একেবারেই অদক্ষ হয়ে অভিবাসন করছে। ফলে তারা কাঙ্ক্ষিত কাজে যুক্ত হতে পারছে না। দক্ষতার অভাবে এবং অজ্ঞতার কারণে তারা নানা অপব্যবহার ও বহুবিদ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। একটু সচেতন হলেই এই অপব্যবহার ও নির্যাতন রোধ করা সম্ভব। অধিক দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে যেমন সাহায্য করে, ঠিক তেমনিভাবে যেকোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়তেও তাদের সাহস যোগায়।
আসলে অভিবাসীদের বিদেশে গমনের আগে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ তা হলো- যে কাজ নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে সেই কাজের প্রকৃতি ও ধরন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা এবং একই সঙ্গে সেই কাজের প্রতি আগ্রহ থাকা। গন্তব্য দেশে পৌঁছানোর পর দক্ষতার সঙ্গে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযতভাবে পালন করা। নিজের দক্ষতাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শাণিত এবং বৃদ্ধি করা। চাকরিদাতার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা এবং যথাযথ কাঙ্ক্ষিত আচরণ প্রদর্শন করা। গন্তব্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং মেনে চলা। গন্তব্য দেশে অপরাধমূলক, অবৈধ ও অসামাজিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত না হওয়া এবং কষ্টার্জিত টাকা দেশে পাঠিয়ে যথাযথভাবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করা। বিদেশে দক্ষতা ও পারদর্শিতা প্রদর্শন করে দেশের সম্মান ও সুনাম বৃদ্ধি করা।
শিল্প বিপ্লবের যুগে দক্ষতাকে কাজের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে যত দ্রুত প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা যাবে যুগের সাথে তাল মেলানোটা ততই সহজ হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের শিক্ষা কারিকুলামে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ব্যবহারিক জ্ঞানচর্চা অপেক্ষা তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রকট প্রভাব কাজ করে। অথচ বাইরের দেশগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দক্ষতার ওপর নির্ভর করে নিয়োগ দান করা হয়। কারিগরি দক্ষতা তথা প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে যে সকল প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তার মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর আওতাধীন ৭১টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে দেশের অভিবাসন প্রবণ অঞ্চলগুলোতে। সরকার এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর শাখাসমূহকে উপজেলা পর্যায়ে নিতে চায়। কিন্তু এসমস্ত কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনার জন্য দক্ষ প্রশিক্ষকদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বৃদ্ধির পাশাপাশি দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবও দূর করা উচিৎ।
শুধু প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতিই নয় বরং অনেক অভিবাসী অভিবাসনের পূর্বে গন্তব্য দেশের ভাষা, আইন-কানুন, আবহাওয়া সম্পর্কে সামান্যই ধারণা রাখে। বিদেশে একসময় কাজ করেছেন এমন ১০০ জনেরও বেশি অভিবাসীদের উপর গবেষণা করে দেখা যায়, তাদের একদিকে রয়েছে প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক সচেতনতার অভাব, যোগাযোগের অদক্ষতা, নির্মাণ শ্রমিকদের নিজেদের দূর্বল শারীরিক কাঠামো, খাদ্যাভাসসহ স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব, আধুনিক যন্ত্রপাতি চালোনায় সিদ্ধহস্ত না হওয়া, পেশাদারি মনোভাবের অভাব। মজার বিষয় হলো এসকল অভাব বা দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও এ সকল অভিবাসীরা দিনের পর দিন দেশের রিজার্ভ বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে প্রযুক্তির বিকাশকে মাথায় রেখে আগামীর অভিবাসন নীতি পরিকল্পনা করা দরকার। তাই এ সময়ে প্রযুক্তির জ্ঞান আমাদের শ্রম অভিবাসন প্রত্যাশীদের মাঝে ঢুকিয়ে না দিতে পারলে আমাদের শ্রমবাজার হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। সৌদি আরব আমাদের জন্য বড় শ্রমবাজার যারা ইতোমধ্যেই সৌদিকরণ কর্মসূচি শুরু করেছে যেখানে বলা হচ্ছে একটি কারখানার অন্তত ২০ শতাংশ সৌদি নাগরিক কাজ করবে। এর প্রভাবে প্রবাসীদের ১২ ধরনের চাকুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং বড় চ্যালেঞ্জটা এখানেই। করোনার পর দেশগুলো আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশে নতুন শ্রমবাজার চালু হচ্ছে কিন্তু এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ব্যবহার হবে সর্বোচ্চ। একসময় গ্রামগুলোতে ধান মাড়াইয়ের জন্য যেখানে অনেক শ্রমিক দরকার হতো সেখানে একটি মেশিনই অনেক মানুষের কাজ করে দেয়। মেশিনের মালিক হওয়া কিংবা মেশিন চালানোর প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারা মানুষটি কিন্তু টিকে থাকছে প্রতিযোগিতায়, নতুবা হালের সাথে যুদ্ধে কালের গর্ভে বিলীন হতে হয়। তাই আমাদের বিদেশ গমনে ইচ্ছুদেরকে উন্নত প্রযুক্তির সাথে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের কারণে ভারতীয় অনেক কর্মী একদিকে আমাদের দেশে সুনামের সাথে কাজ করছে, আবার তারা আমেরিকা ও ইউরোপের কর্পোরেট কোম্পানিগুলোতেও বেশ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে রেকর্ড সংখ্যক ১০,০৮,৫২৫ জন কর্মীর মধ্যে মাত্র ৪,৩৪,০০০ দক্ষ শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হয়েছিল। ২০১৮ সালে ৭,৩৪,১৮১ জন অভিবাসীর মধ্যে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩,১৮,০০০ জন। অন্যদিকে ২০১৯ সালে ৭ লক্ষ অভিবাসীর মধ্যে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩.০৪ লক্ষ। স্বল্প দক্ষতাকে বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ৪ লক্ষ স্বল্প দক্ষ শ্রমিকের পরিবর্তে ২০১৮ সালে ২.৮৩ লক্ষ এবং ২০১৯ সালে ১.৯৭ লক্ষ স্বল্প দক্ষ শ্রমিকরা বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে গমন করেন। অন্যদিকে ২০১৭ সালে আধা-দক্ষ শ্রমিক প্রেরণ ১.৫৫ লক্ষ থেকে ২০১৮ সালে কমে ১.১৭ লক্ষ হয় এবং ২০১৯ সালে কিছুটা বেড়ে ১.৪২ লক্ষ হয়।
মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে ১৯৭৬ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের শ্রম অভিবাসনের লক্ষ্যে গমন শুরু হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে এদেশ থেকে প্রায় ১.২৫ কোটির বেশি মানুষ ১৭৪টির বেশি দেশে শ্রম দিচ্ছেন এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। এদের বেশিরভাগই কাজ করছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১১.৯৬ লক্ষ কর্মী বিদেশে গেছে এর বিপরীতে ২,৩৯১.০০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১১.৩৮ লক্ষ কর্মী বিদেশে গেছে এর বিপরীতে ২,১৬১.৭০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। সে হিসাবে জনশক্তি রফতানি বাড়লেও সে তুলনায় রেমিট্যান্স আসছে না দেশে। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স হ্রাস পাওয়ার পিছনে হুন্ডিকে দায়ী করা হলেও প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের দক্ষতা তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম ২০২০ সালেন ১৬ জুন, ‘বাংলাদেশে অভিবাসন, ফ্যামিলি রেমিট্যান্স, সম্পদ এবং দক্ষতার শ্রেণীবিভাগ’ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১৯ সালে ১০০০ রেমিট্যান্স-নির্ভর পরিবারের উপর পরিচালিত জরিপ ও মূল অংশীদারদের সাথে গুণগত আলোচনার ফলে উঠে আসা ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে এই প্রতিবেদনে। জরিপে দেখা গেছে, উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের তুলনায় অধিক অর্থ দেশে পাঠায়। দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মাসিক হারে প্রায় ২৫৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিবাসীদের দক্ষতার উপর নির্ভর করে রেমিট্যান্স কিভাবে বিনিয়োগ এবং সঞ্চয় করা হবে। দক্ষ অভিবাসীরা পরিবারের সদস্যদের সঞ্চয়ী হিসাবে বৈদেশিক মূদ্রার অর্থ বিনিয়োগ করতে অনুরোধ করে। আর অদক্ষ অভিবাসীরা অপরদিকে তাদেরও রেমিট্যান্স মূলত লোন পরিশোধে খরচ করে। উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসী কর্মীরা ভালো বেতনের চাকরিতে নিয়োগ পান এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্প দক্ষ কর্মীদের তুলনায় অধিকতর রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মী এবং রেমিট্যান্স প্রেরকদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই পুরুষ। এদের প্রায় ১২ শতাংশ অভিবাসী কর্মীরা একেবারেই স্কুলে যায় নি এবং প্রায় ৮০ শতাংশ পড়াশোনা করেছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে, অর্ধেক অংশ (৪৯ শতাংশ) কাজ করেছেন কোন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কর্মচারি হিসেবে এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৬ শতাংশ) কাজ করেছে শ্রমিক হিসেবে যার মধ্যে দিন মজুরি, খন্ডকালীন শ্রমিক আছেন। এদেশের অভিবাসী কর্মীরা অন্য দেশের দক্ষ কর্মীদের তুলনায় কম অর্থ পাঠায় বা অর্থনৈতিকভাবে কম লাভবান হন। কারণ অদক্ষ এবং স্বল্প দক্ষ কর্মীরা যে পরিমাণ অর্থ প্রেরণ করে তা দক্ষ কর্মীদের তুলনায় অনেক কম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রেমিট্যান্স মূলত স্বল্পমেয়াদী প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হয় এবং সম্পদের বৈচিত্র্য আনতে বা আর্থিক স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে খুব কমই ব্যবহৃত হয়, যা রেমিট্যান্সের উপর পরিবারের নির্ভরতা আরো বাড়িয়ে তোলে। প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের স্বল্প অর্থনৈতিক জ্ঞান তাদেরকে টেকসই উপার্জন, রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ তৈরীর ক্ষেত্রে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়।
গবেষণায় যে সকল সুপারিশসমূহ উঠে এসেছে তা হলো, প্রথমত, জেন্ডার সংবেদনশীল দক্ষতা বিকাশের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে এবং পরিবারের অর্থনৈতিক জ্ঞান এবং রেমিট্যান্স পরিচালনার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে হবে যাতে করে স্বল্প দক্ষ অভিবাসী কর্মী আরো বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারে এবং ঋণের চক্র ভেঙে বেড়িয়ে আসতে পারে। তৃতীয়ত, বিপদাপন্নতা হ্রাসে এবং আর্থিক স্বাধীনতার পথে সহায়তা প্রদানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেন উন্নত ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং সঞ্চয়ের আনুষ্ঠানিককরণ নিশ্চিত হয়। চতুর্থত, নারীদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করতে হবে যাতে করে অর্থনীতির পরিমাপ এবং টেকসই কৌশলসমূহ বিবেচনা করে সম্পদ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সর্বশেষে, অভিবাসী এবং রেমিট্যান্স প্রাপকদের জেন্ডার-সংবেদনশীল অর্থনৈতিক শিক্ষা এবং পরামর্শ দেওয়ার জন্য পার্টনারশিপ গঠনে রসুপারিশ করা হয় এই গবেষণায়।
বাংলাদেশ থেকে দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ কর্মী যাওয়ার ফলে শুধু প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু শ্রম অনুযায়ী রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এই অদক্ষ কর্মীরা বেশিরভাগই গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে আসা। তাদের নানাভাবে প্রলোভনে ফেলে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে বড় অংকের টাকা। তারা বিদেশে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও যে টাকায় বিদেশ গেছেন সেই টাকাই তুলতে পারেন না। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশের কর্মীদের মান অনেক নিচে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে লাখ লাখ কর্মী বিদেশ গেলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে না। গুণগতমান ঠিক করতে না পারলে দেশের শ্রমবাজারগুলো হারাতে হতে পারে। বিশ্বে শ্রমের বাজারে অদক্ষ বা আধা দক্ষ শ্রমিকদের কদর ক্রমান্বয়ে কমছে। অন্যদিকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। তাই দেশ গঠনে যেমন, তেমনি বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা ছাড়া বিকল্প নেই। জনশক্তি আমদানিকারী দেশগুলোর চাহিদা ও পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের জনশক্তিকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি এবং তারাই ঘুরিয়ে দিতে পারে রেমিট্যান্সের চাকা। এজন্য উন্নয়ন সহায়ক দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারকে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক : ব্যাংকার ও কলামিস্ট।
আমার বার্তা/মো. জিল্লুর রহমান/এমই