আন্তর্জাতিক হালাল পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভূমিকা

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ

  বিল্লাল বিন কাশেম:

ভূমিকা : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলাম ধর্ম অনুসরণকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হালাল পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। ইসলামি জীবন ব্যবস্থা অনুযায়ী, হালাল পণ্য এমন পণ্য যা ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী অনুমোদিত এবং যেখানে কোনো ধরনের হারাম (নিষিদ্ধ) উপাদান বা প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় না। আধুনিক বিশ্বে হালাল খাদ্য, পণ্য এবং সেবা বিভিন্ন দেশে একটি বড় বাজার তৈরি করেছে। বাংলাদেশও এই প্রবণতার বাইরে নয়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক হালাল পণ্যের বাজারের প্রবেশ বাংলাদেশে গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশে ইসলামী নিয়মাবলী অনুসরণ করা মানুষের সংখ্যা অত্যধিক এবং তাদের জন্য হালাল পণ্য গ্রহণ একটি মৌলিক প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশে হালাল পণ্যের বাজারে প্রবেশের জন্য এবং এর কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ইসলামী আইন, হালাল পণ্যের মান, এবং এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এই প্রবন্ধে আমরা আন্তর্জাতিক হালাল পণ্যের বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আন্তর্জাতিক হালাল পণ্যের বাজার প্রবেশ

বিশ্বব্যাপী ইসলামি অর্থনীতির উন্নতি এবং মুসলিম জনগণের বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক হালাল পণ্যের বাজারে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে, খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, সৌন্দর্য সামগ্রী, প্রসাধনী এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্য সমূহ হালাল প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হচ্ছে। মুসলিম জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা, প্রকৃত ও বিশুদ্ধ উপাদান ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হালাল পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারের মধ্যে বর্তমানে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজার দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশও এই বাজারে অংশগ্রহণ করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বহু আন্তর্জাতিক হালাল ব্র্যান্ড সন্নিবেশিত হয়েছে এবং স্থানীয় বাজারে তাদের পণ্য প্রচলিত হচ্ছে। তবে, এই পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ এবং ইসলামী শরিয়াহ আইন অনুসরণ জরুরি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ভূমিকা এবং কার্যক্রম

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা যা ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করছে। হালাল পণ্য এবং সেবা নিশ্চিত করতে ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী নির্ধারিত নিয়মাবলী অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে বাংলাদেশে হালাল পণ্য ব্যবস্থাপনার একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

১. মান নিয়ন্ত্রণ: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের হালাল পণ্যের মান নির্ধারণ এবং সেটি হালাল হিসেবে সার্টিফাই করার প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক হালাল পণ্যের সঠিক মান নিশ্চিতে সাহায্য করা হয়।

২. হালাল সার্টিফিকেশন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন সারা দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য হালাল পণ্যের সার্টিফিকেশন প্রদান করে। এটি নিশ্চিত করে যে, কোনো পণ্য শরিয়াহ বিধি মেনে তৈরি এবং ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ। এই সার্টিফিকেশন ব্যবসায়ীদের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার একটি সুযোগ সৃষ্টি করে।

৩. শিক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি: ইসলামিক ফাউন্ডেশন হালাল পণ্য এবং ইসলামী শরিয়াহ আইন সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এতে করে জনগণ হালাল পণ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা পায় এবং তা নিজেদের জীবনযাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

৪. অধ্যয়ন এবং গবেষণা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন হালাল পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহারের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে। এটি দেশীয় উৎপাদনকারীদের জন্য গাইডলাইন প্রদান করে এবং শরিয়াহ মেনে উৎপাদন কৌশল নির্ধারণে সহায়তা করে।

৫. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হালাল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও কার্যক্রম নিয়ে কাজ করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের হালাল পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এবং দেশীয় ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক হালাল বাজারে প্রবেশের সুযোগ পায়।

বাংলাদেশে হালাল পণ্যের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশে হালাল পণ্যের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় মুসলিম জনগণের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এখানে হালাল পণ্যের বাজার এক বিশাল সম্ভাবনা ধারণ করে। বিশেষ করে তরুণ জনগণ, যারা স্বাস্থ্য-conscious এবং প্রাকৃতিক পণ্য গ্রহণে আগ্রহী, তাদের মধ্যে হালাল পণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। পাশাপাশি, বিদেশি পণ্যগুলোর জন্য বাংলাদেশের বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আগামী দিনে, যদি হালাল পণ্যের উৎপাদন, পরিবহন এবং বিপণন ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়, তাহলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক হালাল বাজারে এক শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হালাল পণ্যের বাজার আরও প্রসারিত হবে এবং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

উপসংহার : বাংলাদেশে হালাল পণ্যের বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সম্পর্কিত হতে যাচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে হালাল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, গবেষণা, শিক্ষা এবং সচেতনতা সৃষ্টি করার কাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইসলামী শরিয়াহ অনুসারে নিরাপদ এবং বৈধ পণ্য খোঁজা আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব এবং এটি আমাদের জীবনে শান্তি ও বরকত বয়ে আনে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের মাধ্যমে, বাংলাদেশে হালাল পণ্যের বাজার আরও সুরক্ষিত, উন্নত এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগী হতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা অনুযায়ী হালাল পণ্য ব্যবহারের প্রচলন এবং তা বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় শামিল হওয়ার জন্য সরকার এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর কার্যক্রম ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

 

লেখক: গণসংযোগ কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা।


আমার বার্তা/বিল্লাল বিন কাশেম/এমই