অস্থির এক সিজোফ্রেনিয়ার রোগী
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
বিল্লাল বিন কাশেম:

এ্যানি একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী নারী। নিজের জীবন সম্পর্কে তার নিজস্ব কিছু ভাবনা আছে, তবে তা প্রায়ই বাস্তবতার সাথে মেলে না। নিজেকে সে একজন বুদ্ধিমতী, দৃঢ়চেতা নারী হিসেবে কল্পনা করে, কিন্তু বাস্তবে তার জীবন চালিত হয় দ্বিধা, সন্দেহ আর উচ্চাকাঙ্ক্ষার দোলাচলে। সে সিজোফ্রেনিয়ার রোগি বটে।
সে সরকারি চাকরিজীবী একটি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পদ মর্যাদার। তার ছোট বোনও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত। একটা সময় এ্যানিও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলো। দুই বোন বাবা-মাকে নিয়ে এক বাসায় থাকে। দোতলা বাসায় এ্যানি উপরের ফ্ল্যাটটি নিজের হাউজ লোনের অর্থ ও বাবার কাছ থেকে সাত লাখ টাকা নিয়ে তৈরি করেছে। প্রতিমাসে ঋণ শোধ করতে গিয়ে তার বেশিরভাগ বেতনই চলে যায়। ফলে সবকিছুর ওপর তার এক ধরনের হতাশা কাজ করে। এছাড়া বাড়ির পাশে এক বিত্তবান বুড় তার বাবার বয়সের বেশি বয়সের লোকে বিয়ে করেছিলো। তার বাসার কাঠ ও এসসি লাগিয়ে দিয়েছিলো।
"তোর আবার কী হলো? এত রাগ কেন?" ছোট বোন মায়া প্রশ্ন করল।
"সবাই আমার ক্ষতি করতে চায়। আমার টাকায় সবাই চলে, অথচ আমার কথার দাম নেই!" এ্যানি রেগে জবাব দিলো।
এ্যানির এ পর্যন্ত চারটি বিয়ে হয়েছে, কিন্তু কোনো সম্পর্কই টেকেনি। তার সহজাত সন্দেহপ্রবণতা, রাগ আর অস্থির মনোভাবের কারণে প্রতিটি সম্পর্কই ভেঙে গেছে।
এক সময় তার অফিসের পরিচালক সুনীল দের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। সুনীল ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন। পরবর্তীতে সে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদন্নোতি প্রাপ্ত হয়। পরিচালক থাকার সময়ে তাদের মধ্যে যৌন ক্রিয়া হয়। বয়স্ক সুনীল তৃপ্তি দিতে না পারলেও শরীর নিয়ে খেলতে পারদর্শী ছিলো। অতিরিক্ত সচিব হওয়ার পর প্রথমে অফিসে, পরে সুনীলের বাড়িতেও তাদের সম্পর্কের কথা পৌঁছে যায়।
"তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো?" এ্যানি প্রশ্ন করল।
"এ্যানি, আমাদের মধ্যে যা আছে, তা বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু নয়। কিন্তু বিয়ে সম্ভব নয়," সুনীল দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বলল।
কিন্তু এ্যানি তাতে সন্তুষ্ট হলো না। একদিন সে সুনীলের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের দাবি তোলে। সুনীলের স্ত্রী প্রচণ্ড রেগে গিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে বের করে দিলো।
এ্যানি তার বর্তমান স্বামী আফসানের সাথেও সন্দেহের দোলাচলে থাকে।
"তুমি কোথায় গিয়েছিলে?" এ্যানি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।
"অফিসের কাজে বের হয়েছিলাম, এ্যানি," আফসান ধৈর্য ধরে বলল।
"মিথ্যে বলো না! তুমি নিশ্চয়ই অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে!" এ্যানির গলার স্বর চড়লো।
তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে সম্পর্ক, অর্থ ও ক্ষমতার দোলাচলে তার বিচ্ছেদ ঘটেছে। কিন্তু সে কখনও আত্ম-অনুসন্ধান করেনি।
"তোর কি মনে হয় না, কিছু ভুল তোরও আছে?" মা একদিন ধীরে ধীরে বলল।
"তোমরা সবাই আমার বিরুদ্ধে! আমার জন্য কেউ নেই!" এ্যানি তীব্র প্রতিবাদ করল।
কিছুদিন পরে এ্যানির আচরণ আরও খারাপ হতে থাকে। একসময় তার মনে হয়, সে একা হয়ে যাচ্ছে।
এক সন্ধ্যায়, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে নিজেকে দেখে। তার চোখের নিচে কালি, চেহারায় ক্লান্তির ছাপ।
"আমি কি সত্যিই ভুল করছি? আমার সব সম্পর্ক কেন ভেঙে যায়?" সে নিজেকেই প্রশ্ন করল।
আয়নার প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে এ্যানি মনে মনে ভাবতে থাকে, এবার কি সত্যিই পরিবর্তন আনবে? নাকি একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে?
লেখক: গণসংযোগ কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা।
আমার বার্তা/জেএইচ