ভোট ছাড়া সরকার গঠনের দাবি জনগণ মানবে না: সালাহউদ্দিন

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ : ছবি সংগৃহীত

সরকারি দল হওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হলে নির্বাচনে আসতে এত বাহানা কেন—এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা যখন এত আত্মবিশ্বাসী যে সরকারি দল হবেন, তাহলে নির্বাচনে আসেন না কেন? নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে কারা সরকারে যাবে আর কারা বিরোধী দলে যাবে, সেটা ঠিক করবে। আজকে এক বাহানা, কালকে আরেক বাহানা—এসব অজুহাত দেখিয়ে কেন আপনারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চান?’

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কাকরাইল ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) মিলনায়তনে সামাজিক সংগঠন অর্পণ আলোক সংঘ আয়োজিত ‘তারুণ্যের রাষ্ট্রচিন্তার তৃতীয় সংলাপ’-এ এ কথাগুলো বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেন বীথিকা বিনতে হোসাইন।

সালাহউদ্দিন বলেন, 'আজকে শিরোনাম দেখলাম, কোথাও জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করবে, বিএনপি যাবে বিরোধী দলে। তো ভাইসাব, বিএনপি বিরোধী দলে যাবে নাকি জনগণ ঠিক করবে। যারা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে না, তারাই এসব কথা বলে।’

গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরে আয়োজিত এক সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুহাম্মাদ শাহজাহান বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠনের মতো আসনে বিজয়ী হবে। জামায়াতে ইসলামী সরকারি দল হবে। বিএনপিকে বিরোধী দলে যেতে হবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। বিরোধী দল প্রসঙ্গে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন আরও বলেন, সরকার সব সময় চায় বিরোধী দল যেন মাঠে না থাকে। অথচ গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী দল দুটোই জনগণের। বিরোধী দল মানে শত্রু নয়, রাষ্ট্রের অংশ।

>> একই সময়ে কেউ সরকারি দল ও বিরোধী দল হতে পারে না

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একই সময়ে কেউ সরকারি দল ও বিরোধী দল হতে পারে না। দরজা হয় খোলা থাকে, নয় বন্ধ থাকে— এক সঙ্গে দুটো হয় না। যারা এখনো ছাত্র প্রতিনিধি হয়ে সরকারে বসে আছেন, প্রতিদিনই তাদের দায়ভার বহন করতে হচ্ছে। জনগণের সঙ্গে দ্বিমুখী আচরণ করে কোনো দল বা সংগঠন টিকে থাকতে পারে না।

>> জনগণ ভোটের মাধ্যমে পিআর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে

সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি দাবির প্রসঙ্গে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, “পিআর চাই”। আমরা বলেছি, জনগণ ভোটের মাধ্যমে তা দেবে। দাবিদাওয়াগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করে নির্বাচনে আসুন। জনগণ সমর্থন দিলে তখনই তা বাস্তবায়ন হবে। এটা-ই গণতন্ত্রের রীতি। একতরফা ঘোষণা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যায় না।’

>> জুলাই সনদ নিয়ে কোর্টের মতামত উত্তম

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়াই উত্তম। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের রায় মানা না হলে রাষ্ট্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। আদালতের রায়ের বাইরে গিয়ে কোনো রাজনৈতিক সমাধান টেকসই হয় না।

সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন মিডিয়া, ব্যবসায়ী, মাফিয়ার হাতে বন্দী হয়ে গেছে। জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব হারিয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে জবাবদিহি না করে কিছু গোষ্ঠীর কাছে জবাবদিহি করছে। এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্র কখনোই শক্তিশালী হবে না।

বর্তমান প্রজন্মের ভুল স্বীকার করার সাহস আছে বলে উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, 'আমরা তরুণ প্রজন্ম ভিন্ন। আমরা স্বীকার করি, আমাদেরও ভুল থাকতে পারে, কিন্তু ভুল স্বীকার করার সাহস আমাদের আছে। আগের প্রজন্মের অনেক রাজনীতিবিদ ভুল করেও সেটা অস্বীকার করে গেছেন, যার ফল ভুগছে পুরো জাতি। তাই নতুন প্রজন্মই পারে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে।'

হাসনাত আরও বলেন, তরুণ প্রজন্মকে আজ রাজনীতির বাইরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ তারাই দেশের ভবিষ্যৎ। তরুণেরা যদি রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত না হয়, তাহলে এই দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। এনসিপি সেই পথ তৈরি করতে চায়, যেখানে তরুণেরা নিজের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারবে।

সংলাপে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান, কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর বারী হামিম, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর আল হাদী মায়েদ প্রমুখ।


আমার বার্তা/এমই