রাজনৈতিক অংশগ্রহণে সাইবার বুলিং এক বড় বাধা
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দেশে দ্রুত বিকাশমান ডিজিটাল প্রেক্ষাপটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীদের প্রতি সাইবার বুলিংয়ের প্রবণতা বাড়ছে। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এ ধরনের সহিংস আচরণ বিশেষ করে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নারীদের ক্ষেত্রে মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আবদুল্লাহ ফারুক কনফারেন্স হলে ‘বাংলাদেশ রেজোনেয়ার’ আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারী রাজনৈতিক কর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার, হুমকি, ও মানহানিকর প্রচারণার শিকার হয়েছেন; যা গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণে এক অন্ধকার ছায়া ফেলেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতিতেও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় ধর্ষণের হুমকি ও চরিত্রহননের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীদের অংশগ্রহণে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
বক্তারা আরও বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে দেশে সাইবার বুলিংয়ের শিকারদের মধ্যে নারী ও কিশোরীর সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে রিভেঞ্জ পর্নোগ্রাফি, ভুয়া প্রোফাইল তৈরি, ব্ল্যাকমেইল, এবং অশালীন মেসেজ বা বার্তা প্রেরণ। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইন নির্যাতনের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, যেখানে অনেকে সপ্তাহে একাধিকবার এমন হয়রানির শিকার হন। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর ভয়াবহ প্রভাবও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন নারী ভুক্তভোগীর একজন মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হন। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালে রিপোর্টকৃত অনলাইন অপরাধের ৫২ শতাংশই সাইবারবুলিং সম্পর্কিত, যার একটি বড় অংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
যদিও সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সহ বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে, তবুও বাস্তব প্রয়োগে ঘাটতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে জেনারেশন-জেড নারী ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে, যারা অনলাইন সহিংসতার প্রধান ভুক্তভোগী।
এই বাস্তবতার আলোকে বাংলাদেশ রেজোনেয়ারের এই সেমিনারটির মূল লক্ষ্য হলো অনলাইন হয়রানির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানসিক পুনরুদ্ধার ও ক্ষমতায়নের পথ দেখানো এবং তরুণ সমাজের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে অনুপ্রেরণা জোগানো।
এ সময় বক্তারা আইনগত সুরক্ষা এবং সাইবার বুলিংয়ের মানসিক ও শারীরিক প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন।
সেমিনারে রেজোনেয়ার বাংলাদেশের চেয়ারপারসন জান্নাতুন নওরীণ উর্মি বলেন, এই উদ্যোগ শুধু অনলাইন নিরাপত্তা নয় বরং তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করার একটি প্রচেষ্টা। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া, যেখানে তরুণীরা হয়রানির ভয় ছাড়াই নেতৃত্ব দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আয়োজন বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও নারী ক্ষমতায়নের যাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে থাকবে।
সেমিনারে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
সামাজিক সংগঠন দ্য বাংলাদেশ রেজোনেয়ার (টিবিআর) সমাজের যুব শ্রেণি বিশেষ করে নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রাজনৈতিক অধিকার, সাইবার বুলিংসহ নানা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে কাজ করে আসছে।
সেমিনারের অতিথি ছিলেন ডা. মো. রাহানুল ইসলাম, এমবিবিএস, এমডি (সাইকিয়াট্রি), বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়; রেসিডেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট, সেন্ট্রাল ড্রাগ অ্যাডিকশন ট্রিটমেন্ট সেন্টার, ঢাকা।
অ্যাডভোকেট আশরাফ জলাল খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী; আইন উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংক ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়; লিগ্যাল অ্যাডভাইজর, রাজউক, সিটি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক ও লেজার ট্রিট।
সানজিদা ইসলাম জুঁই, সহ-সম্পাদক, কালের কণ্ঠ।নিবেদিতা বিশ্বাস, প্রতিষ্ঠাতা, পলিটি অ্যাকশন ল্যাব (PAL), ভারত।
এ ছাড়া সেমিনারে উপস্থিত থাকবেন সাইবারবুলিংয়ের পাঁচজন নারী ভুক্তভোগী। তাঁদের পরিচয় গোপন রাখা হবে, যদি না তাঁরা নিজেরা প্রকাশে সম্মতি দেন।
আমার বার্তা/এল/এমই
