সন্ত্রাসী হারিছ ও জোসেফের জাল এনআইডি এখনো সচল

ইসির ভূমিকা রহস্যজনক

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ১০:১৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আসাদুজ্জামান তপন

মিথ্যা তথ্য দিয়ে মোহাম্মদ হাসান নামে ২০১৪ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই হারিছ আহমেদ। ২০১৯ সালে তিনি এনআইডিতে ছবি পরিবর্তন করেন। এই পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করেছিলেন খোদ আজিজ আহমেদ। আরেক ভাই তোফায়েল আহমেদ জোসেফেরও দুটি এনআইডি। একটি তানভির আহমেদ তানজীল নামে, অন্যটি তোফায়েল আহমেদ জোসেফ নামে। দুটি এনআইডি এখন পর্যন্ত সচল। অথচ রহস্যজনক কারণে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

পুলিশ ও আদালতের নথিপত্র, জোসেফের সাজা মওকুফ চেয়ে মায়ের করা আবেদনসহ সরকারি প্রজ্ঞাপনে হারিছ ও জোসেফের বাবার নাম আব্দুল ওয়াদুদ ও মায়ের নাম রেনুজা বেগম। কিন্তু হারিছ যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিয়েছেন, তাতে বাবার নাম সুলেমান সরকার এবং মায়ের নাম রাহেলা বেগম।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, পরিচয়পত্র পেতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেয়া অথবা তথ্য গোপন করা অপরাধ। এ অপরাধের শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড।

২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ হাসান নামে হারিছ আহমেদের জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট তিনি এনআইডিতে নিজের ছবি পরিবর্তন করেন।

নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনআইডির তথ্য সংশোধন বা ছবি পরিবর্তনের সুযোগ আছে। এ কাজে সময় লাগলেও প্রভাবশালী কারও সুপারিশ থাকলে কাজটি দ্রুত হয়। কোনো সংশোধনের ক্ষেত্রে কেউ সুপারিশ করে থাকলে কর্মকর্তারা সুপারিশকারীর নাম আবেদনের সঙ্গে রেফারেন্স হিসেবে লিখে রাখেন এবং ওই আবেদনপত্রটি সংরক্ষণ করা হয়। হারিছের আবেদনে রেফারেন্স হিসেবে লেখা আছে ‘জেনারেল আজিজ আহমেদ, সিএএস’। সিএএস হলো চিফ অব আর্মি স্টাফ।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। আবার ওই জাতীয় পরিচয়পত্র জ্ঞাতসারে বহন করলে তিনি সাত বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি এই কাজে সহায়তা করলে তারও সাজা সাত বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড।

মিথ্যা তথ্য দিয়ে করা ভাইয়ের এনআইডির ছবি পরিবর্তনে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ যে সুপারিশ করেছিলেন, তা উল্লেখ রয়েছে আবেদনপত্রে। তবে তিনি দাবি করেন, এ অভিযোগ সঠিক নয়।

২০১৪ সালে নিজের নাম ও বাবা-মায়ের নাম বদল করে একটি এনআইডি করেন তোফায়েল আহমেদ জোসেফ। সেখানে ছবি ঠিক থাকলেও নাম লেখা তানভীর আহমেদ তানজীল।বর্তমান ঠিকানা মিরপুর ডিওএইচএসের। আর স্থায়ী ঠিকানা ঢাকা সেনানিবাসের একটি বাসার। এনআইডির ছবি তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সশরীর হাজির থাকতে হয়।

জোসেফের আরেকটি এনআইডির তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি এই এনআইডিটি করেছেন ২০১৯ সালে। এখানে আসল নাম ব্যবহার করা হয়েছে। নিবন্ধন ফরমে লেখা হয়েছে তোফায়েল আহমেদ জোসেফ। বাবার নাম আব্দুল ওয়াদুদ, মায়ের নাম রেনুজা বেগম। তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন অষ্টম শ্রেণি। পেশা দেখিয়েছেন ব্যবসা। ওই ফরমে জোসেফ সই করলেও তারিখ উল্লেখ করেননি। আবার, আগে তানজীল নামে যে এনআইডিটি নিয়েছিলেন, সেখানে বাবার নাম সোলায়মান সরকার ও মায়ের নাম ফাতেমা বেগম উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয় স্নাতক।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তোফায়েল আহমেদ জোসেফের দুটি এনআইডির মধ্যে কোনোটিই গত সোমবার দুপুর পর্যন্ত বাতিল করা হয়নি।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ও ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম আমার বার্তাকে বলেন, কেউ যদি একাধিক এনআইডি থাকার বিষয়ে এনআইডি শাখায় নির্দিষ্ট তথ্য দেয়, তাহলে সেটা তল্লাশি করে দেখা হবে।


আমার বার্তা/জেএইচ