মতিউর কন্যা ইপ্সিতার সম্পদ ও বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎস কী
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৪, ১৩:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ
আসাদুজ্জামান তপন
মেকআপ আর্টিস্ট হিসাবে পরিচয় দেয়া ৩২ বছর বয়সী তরুণী ফারজানা রহমান ইপ্সিতা। প্রশ্ন হচ্ছে, অল্প এই সময় কালে আর কতই বা আয় করতে পারেন। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, এই বয়সেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাততলা বাড়িসহ শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। না। নিজের উপার্জিত অর্থে নন। বাবার বদৌলতে এই সম্পদের মালিক তিনি। বাবা হচ্ছেন, ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমান। প্রথম পক্ষের মেয়ে ইস্পিতা। শুধু এই সাত তলা বাড়ি নয়। বলাচলে সাতসমুদ্র পরিমাণ অর্থ আর বিত্তের অধিকারি তিনি ঘুষখোর বাবার সুবাদে। ইতোমধ্যেই কানাডায় তার বাড়ি-গাড়িসহ বিলাসী জীবনের ছবি ঘিরে নেট দুনিয়ায় হৈচৈ চলছে। কিন্তু কানাডার চেয়ে খোদ দেশেই তার সম্পদের পরিমাণ বেশি। বিভিন্ন ব্যবসায় তার অবিশ্বাস্য অংকের বিনিয়োগ। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে মতিউর কন্যার এত সম্পদ বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎস কী? বয়স ও পেশার সঙ্গে সম্পদের পরিমাণ স্পষ্টতই অস্বাভাবিক।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চাকরিজীবনে অবৈধ পথে বিপুল অর্থ রোজগার করেছেন মতিউর রহমান। মেয়ে ইপ্সিতার নামে থাকা বিপুল সম্পদ তারই নমুনা মাত্র। বিভিন্ন কৌশলে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বৈধ করারও অপচেষ্টা চালিয়েছেন।
আয়কর নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে ইপ্সিতা তার আয়কর নথিতে ৪২ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য তুলে ধরেন। এর মধ্যে সাত কোটি টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ৫টি কোম্পানিতে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে, সোনালী সিকিউরিটিজ, সিনাজি ট্রেডিং, গ্লোবাল সুজ, ওয়ান্ডার পার্ক ও মামুন অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস। সিনাজি ট্রেডিং লিমিটেডে ৫০ হাজার শেয়ারের মালিক হিসাবে তার বিনিয়োগ রয়েছে ৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া গ্লোবাল সুজ কোম্পানিতে ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৫৫ হাজার, ওয়ান্ডার পার্কে ১০ লাখ, মামুন অ্যাগ্রো প্রোডাক্টসে ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯০ ও সোনালী সিকিউরিটিজে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। নরসিংদী, গাজীপুর ও ঢাকায় জমি ও বাড়ির দাম দেখিয়েছেন তিনি প্রায় ১৩ কোটি টাকা। প্রকৃত অর্থে এসব সম্পদের দামই ৭০ কোটি টাকার বেশি।
আয়কর নথিতে আরো দেখা গেছে, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, নিজের কোম্পানিকে দেয়া ঋণ ও ভাইকে দেয়া ধার বাবদ তার সম্পদ আছে ২২ কোটি টাকার। নরসিংদীতে হেবামূলে দেড় একর জমির মালিক ইপ্সিতা। আয়কর নথিতে এই জমির বর্ণনা দেয়া থাকলেও দাম উল্লেখ করা হয়নি।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিলাসবহুল যে সাততলা বাড়ি ইতোমধ্যে মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছে সেই বাড়িটিও মেয়ের নামেই করেছেন মতিউর রহমান। ৫ কাঠা জায়গার ওপর ৭ তলা বাড়িটির দাম অন্তত ৫০ কোটি টাকা হলেও আয়কর নথিতে দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। বিদেশি টাইলস ও ফিটিংসে মোড়ানো বাড়িটিতে সুইমিংপুলও আছে। নীলক্ষেতে পার্কিং স্পেসসহ দেড় হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাটের দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ৬০ লাখ টাকা।