বাকিরকেও হার মানিয়েছেন সিবিএ নেতা সারোয়ার!
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ২২:৫২ | অনলাইন সংস্করণ
বিশেষ প্রতিবেদক:
বিআইডব্লিউটিএ'র (সরকারি দল) এর সিবিএ নেতা সারোয়ার হোসাইন বিএনপি পন্থী সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা বাকির হোসাইন (প্রয়াত)কেও হার মানিয়েছেন। বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাস এবং বাকির এর আদর্শে অনুপ্রাণিত সারোয়ার হোসাইন এখন বিআইডব্লিউটিএ'র সরকারি দলের সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, বিআইডব্লিউটিএ'তে বিএনপি পন্থী কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং এই সিবিএ নেতার যোগসাজশে সংস্থাটির রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। কর্তৃপক্ষও অজ্ঞাত কারণে সারোয়ার হোসাইন এর রাজনৈতিক আদর্শ ক্ষতিয়ে দেখছেননা। অবৈধ আয়ের মাধ্যমে ধন-সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান। তিনি পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের চাকরি দিয়ে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে । সারোয়ার হোসাইন নিজেও একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। সিবিএ নেতা হবার বদৌলতে অসম্ভবকে সম্ভব করে সংস্থায় একতছত্র কায়েম করেছেন কুখ্যাত এই নেতা। তিনি এতোই ক্ষমতাধর যে, শ্যালকের চাকরির বয়স সীমা পেরিয়ে গেলেও তাকেও চাকরি দিতে সক্ষম হয়েছেন। স্ত্রী কামরুন নাহার মলি ট্রেসার পদে চাকরি করেন। কিন্তু স্বামী সিবিএ নেতা হওয়ায় তিনি অফিস না করেই শুধু হাজিরা খাতায় সই করে মাসিক বেতন ভাতা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ জানাগেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন বি ২১৭৬ এর সাধারণ সম্পাদক (মেয়াদ উত্তীর্ণ )হলেন সারোয়ার হোসাইন। এক বছর আগেই আবুল-সারোয়ার এর মেয়াদ শেষ হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টে মামলা থাকার দোহাই দিয়ে ইলেকশন দিচ্ছেন না। সারোয়ার হোসাইন সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন প্রায় এক বছর ধরে। এর আগে তিনি সংগঠনটির কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। সিবিএ'র প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন রফিকুল ইসলাম, তিনি অবস্বরে যাওয়ার পর সবাইকে ম্যানেজ করে সারোয়ার হোসাইন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তাছাড়া এই জুটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় প্রায় ১৮শ' কর্মচারীর অধিকাংশই তাদের উপর ক্ষুব্ধ। ইলেকশন দিলে সারোয়ার হোসাইন এই পদে আর বহাল থাকতে পারবেননা। কারণ তার দুর্নীতির পরিমাণ এতোই বেশি যে, যা কর্মচারীদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবে উপরের স্যারদের সাথে সারোয়ার হোসাইনের বেশ সখ্যতা থাকায় দুদক এর মামলা সহ সব অনিয়ম দুর্নীতি করেও বহাল তবিয়তেই আছেন। বিআইডব্লিটএ'র কর্মচারীদের প্রশ্ন, একজন সিবিএ নেতার নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা, ধন-সম্পদ এবং ব্যাংক ব্যালেন্স এর অভিযোগ। দুর্নীতিপরায়ণ এই ব্যক্তির নিকট থেকে সাধারণ কর্মচারীরা কি আশা করতে পারেন। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা থাকা সত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা। উপরন্ত সারোয়ার হোসাইন এর প্রতিনিয়ত ডিমান্ড বাড়ছেই বাড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ, বদলি এবং ইজারা ঘাট সহ বিভিন্ন তদবিরে মন্ত্রীর নাম ব্যবহারও করেন এই সিবিএ নেতা। যা মন্ত্রী নিজেও অবগত নন। তবে মন্ত্রীর একজন এপিএস তাকে সর্বদা সহযোগিতা করেন এমন গুঞ্জন আছে মতিঝিলস্থ বিআইডব্লিউটিএ ভবনে। ওই এপিএস সারোয়ার হোসাইন এর আস্তাভাজন হয়ে নিজেও এখন অনেক ধন-সম্পদের মালিক। গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাস এবং সোনালী ব্যাংকের বাকির হোসাইন (প্রয়াত) এর হাত ধরেই সারোয়ার হোসাইন এর উত্থান। ওয়াকিবহাল একটি সুত্রমতে,বিআইডব্লিউটিএ'তে বেশ কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বিএনপি পন্থী। গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও তাদের সম্পর্কে প্রতিবেদন আছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সারোয়ার হোসাইন এর প্রাণের শালি যুক্তরাজ্য প্রবাসী নুরুন্নাহার পারভিনের নামে রাজধানীর খিলগাঁও, চৌধুরীপাড়া, মাটির মসজিদ সংলগ্ন বি- ১০৮ নাম্বার বাড়ির ৭ম তলায় প্রায় কোটি টাকা খরচ ১৬ শ' বর্গফুটের ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন সারোয়ার। বর্তমানে সপরিবারে সেখানেই বসবাসা করেন তিনি। নিজের টাকায় কেনা এই অট্টালিকা ফ্ল্যাট টি শালিকার টাকায় ক্রয় করা হয়েছে বলে সারোয়ার হোসাইন এর দাবি। তিনি কেয়ারটেকার হিসেবে থাকেন শুধু। টাংগাইলের কাগমাড়ায় ( কাইয়্যামাড়া) কোটি টাকা খরচ করে জমিও ক্রয় করেছেন তিনি। সেখানে 'সারোয়ার তাজমহল' নামে একটি অত্যাধুনিক বাড়ি করার সব সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সারোয়ার হোসাইন এর অবৈধ ধন-সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্য এবং বিদেশে টাকা পাচারের ফিরিস্তি আগামী পর্বে প্রকাশিত হবে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দেলডা গ্রামে সারোয়ার হোসাইন এর বাড়ি। সেখানে বাপ-দাদার আমল থেকেই চর অঞ্চলে বেশ জমা-জমি আছে। সারোয়ার হোসাইন এলাকার মানুষের কাছে দানবীর এবং জনদরদী হিসেবে পরিচিত। চাকরী সহ বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন সারোয়ার হোসাইন। তবে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে নগদ টাকা নিয়ে চাকরি দেন।
সিবিএ নেতা সারোয়ার হোসেন পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের মধ্যে যাদের চাকরি দিয়েছেন তারা হলেন, স্ত্রী কামরুন নাহার মলি, পদবি -ট্রেসার।
আপন ফুফাতো ভাই আব্বাস আলী। আপন মামাতো ভাই আশরাফ। আপন চাচাতো শ্যালক আহসানুল হক কাইয়ুম, পদবি-শুল্ক আদায়কারী।
চাচাতো ভাই শামসুল আলম মনি।,আপন খালু আব্দুল জলিল, পদবী - শুল্ক আদায়কারী।
ভাবি - নাজমা বেগম, পদবি -সহকারি। খালাতো ভাই - আনিসুর রহমান, পদবি -শুল্ক আদায়কারী।
আপন ভাতিজির জামাই - তাইজুল, পদবি -ট্রেসার।
আপন খালাতো ভাই আনু, পদবি -সহকারি। আপন মামা ইউসুফ। চাচাতো শ্যালক কাইয়ুমের স্ত্রী রুমেনা আক্তার, পদবী -নিম্নমান সহকারী।
আপন খালাতো ভাই নজরুল ইসলাম, পদবি -গাড়ি চালক।
চাচাতো ভাই - মোজাফফর হোসেন, পদবি -অফিস সহায়ক। আপন খালাতো ভাতিজা আরশাদ, পদবি -অফিস সহায়ক। আপন ভাতিজা -আতিক হাসান, পদবী -অফিস সহায়ক।
চাচতো ভাতিজা -আতোয়ার রহমান, পদবি - অফিস সহায়ক। ভাতিজা হযরত আলী, পদবী -টার্মিনাল গার্ড। আপন ভাতিজা -জুয়েল রানা, পদবী -টিসি।
ফুফাতো ভাই আজগর, পদবী -নিম্নমান সহকারি। ভাগিনা -আনারুল ইসলাম -রেকর্ড কিপার। ভাতিজা -সোহেল রানা, পদবী -পাইলট। চাচাতো ভাতিজা -আব্দুল মালেক -পদবি- লস্কর। ভাতিজা -হাসান, পদবী -অফিস সহায়ক।
চাচাতো ভাতিজা -হযরত আলী, পদবী- টার্মিনাল গার্ড। চাচাতো ভাতিজা শান্ত, পদবি -লস্কর।
ভাতিজা সবুজ শেখ, পদবী- লস্কর। ভাতিজা মশিউর রহমান, পদবী -গ্রীজার।
ভাতিজা হাফিজুল ইসলাম, পদবী -গ্রীজার। ভাতিজা ইমরান হাসান, পদবী -গ্রীজার। ভাতিজা -আতিকুর রহমান -পদবি -মার্ক ম্যান। ভাতিজা আল আমিন, পদবী মার্ক ম্যান।
ভাতিজা জামাল, পদবী - অফিস সহায়ক। তিনি ,চেয়ারম্যানের দপ্তরে কর্মরত আছেন। ভাগিনা জিয়াউর রহমান, পদবি - নিম্নমান সহকারী। মামতো ভাইয়ের ছেল - আবদুল্লাহ, (অনিক), পদবি- সহকারী।
মামাতো ভাই আনিছুর রহমান, পদবি- শুল্ক প্রহরী এবং ভাগিনা শামিম, পদবি- ট্রাফিক। তিনি সুপারভাইজার পদে অবৈধভাবে অফিসে নিম্নমান সহকারী ডিউটি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নোয়াখালী বেল্টের প্রায় দুই শত লোকের চাকরি দিয়েছেন সিবিএ নেতা সারোয়ার হোসেন। সব মিলিয়ে প্রায় চারশ' লোকের চাকরি হয়েছে এই সিবিএ নেতার হস্তক্ষেপে। তার অনুসারীরা চাকরির বিষয় টি পজেটিভ দেখছেন। তবে এতো গুলো মানুষের চাকরি দিয়ে বিআইডব্লিটিএ তে নজির স্থাপন করেছেন সিবিএ নেতা সারোয়ার হোসাইন।
শ্রমিক ইউনিয়নের মেয়াদ শেষ ও আত্নীয় স্বজনদের চাকরি এবং বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাস ও সিবিএ নেতা বাকির হোসাইন (প্রয়াত ) এর সাথে সারোয়ার হোসাইন এর সম্পর্ক ছিলো এসব বিষয় এ জানতে চাইলে কোন জবাব মিলেনি। সারোয়ার হোসাইনকে ফোন করে এবং হোয়াটসঅ্যাপে লিখেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
আমার বার্তা/এমই