শাহজালালে আশীর্বাদপুষ্টরা বহাল তবিয়তে

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১৪:২৫ | অনলাইন সংস্করণ

  শাহীন আলম:

# মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে বিজ্ঞাপনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা
# অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে তিন হাজার বর্গফুট ইজারা নিয়ে ছয় হাজার বর্গফুট দখল

এখনো বহাল তবিয়তে আছে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে আ.লীগের আশীর্বাদপুষ্টরা। অবৈধভাবে দখল করে আছে বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেখানে এখনো ঝুলে আছে ওই চক্রটির বিজ্ঞাপনী সাইনবোর্ড। আওয়ামী লীগ নেত্রী শমী কায়সার, নায়ক মাহফুজুর রহমান ও তানভীরদের নেতৃত্বে বিমানবন্দরগুলোতে অবৈধভাবে দখল করে রাখা বিজ্ঞাপনী বাণিজ্য বন্ধ হয়নি।
 

জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের পরিত্যক্ত ছাদে সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও যাত্রীসেবার লাউঞ্জে নির্মাণ করে চলছে বিজ্ঞাপনী বাণিজ্য। বুয়েট বা কোনো দক্ষ ও স্বীকৃত স্থপতি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়াই ছাদের উপর ভবন নির্মাণের ফলে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে ওই স্থান লিজের নামে অবৈধ বাণিজ্য করছে সিভিল এভিয়েশনের একটি চক্র ও আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। শুধু তাই নয়, দেশের বিমানবন্দরে ১৬টি লাউঞ্জ তৈরি করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনের জন্য স্পেস ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও সিভিল এভিয়েশন পাচ্ছে নামমাত্র অর্থ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ গোল্ডহিল এলায়েন্স, গ্লোবাল এ্যারো, এ্যারিয়াল ক্রিয়েটিভ স্পেস, ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ও নকশীকাঁথা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রীসেবায় লাউঞ্জ তৈরি করে বিজ্ঞাপনের জন্য স্পেস ভাড়া নিয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক টার্মিনালে পাঁচটি, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে তিনটি, চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দরে তিনটি, ওসমানী বিমানবন্দরে দুটি এবং সৈয়দপুরে একটি লাউঞ্জ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, তানভীর আহমেদ জাতীয় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনকে জিম্মি করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নামমাত্র অর্থ পরিশোধ করে বিজ্ঞাপনী বাণিজ্য দখল করে নিয়েছে। একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী, একটি বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি এবং একজন প্রভাবশালী সাবেক সেনা কর্মকর্তার সহযোগিতায় তানভীর আহমেদ বিজ্ঞাপনের জায়গা-জমি, স্থান লিজ নিয়ে বিজ্ঞাপনী বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের পুরাতন ভবনের ওপরে পরিত্যক্ত ছাদের ওপর অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করে কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ভাড়া দিয়েছে এবং বিজ্ঞাপনী স্থানে বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়া দিয়েছে। নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে শাহজালাল, সৈয়দপুর, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরে এ ধরনের অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ করেছে। কোনো ধরনের নকশা বা ডিজাইনের কোনো অনুমোদন ছাড়া নিজেদের ইচ্ছামাফিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন তৈরি করে সেগুলো ভাড়া দিয়ে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তানভীর আহমেদের সাথে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সাংবাদিক নামধারী কয়েকজন তার পক্ষে তদবির করছেনÑ এসব রিপোর্ট প্রকাশ না করতে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিজ্ঞাপনের জন্য স্থান বা জায়গা-জমি লিজ দিয়ে সংস্থা যে টাকা পাচ্ছে তার দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে পুরো বিমানবন্দরের সব বিজ্ঞাপনের স্থান এখন দখল করেছে তানভীর আহমেদ, অভিনেত্রী সমি কায়সার গং। বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ ভবনের ছাদে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় এখন কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তানভীর আহমেদ। এছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দরের বোর্ডিং, ব্রিজ, বিলবোর্ড, প্রান্তিক ভবন, অভ্যন্তরীণ ভবন ও লাইট বক্সসহ অধিকাংশ জায়গা বিজ্ঞাপনের জন্য এককভাবে অনুমোদন করে নিয়েছেন তানভীর আহমেদ ও সমি কায়সার। শুধু তাই নয়, নামমাত্র টাকা পরিশোধ করে এতটুকু জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণ জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে ওই চক্রটি।

অভিযোগ রয়েছে, বিজ্ঞাপনের জায়গা ভাড়া বা লিজ দেয়ার জন্য সিভিল এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান একটি কমিটি গঠন করেছেন। ওই কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে মূলত অবৈধ কাজ বৈধ করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন সাবেক চেয়ারম্যান। ওই কমিটি নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তানভীর আহমেদের সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরের আগমনী ও বহির্গমন টার্মিনালসহ বিভিন্ন লাউঞ্জে কে-মার্ক ও গোল্ডহিল অ্যালায়েন্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে বেবিচক বিজ্ঞাপনের জন্য স্থান লিজ দেয়। তারা ইজারার নীতিমালা লঙ্ঘন করে স্থাপনা তৈরি করেছে। পর্যটন করপোরেশনের নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রচার করছে ডিসপ্লে বোর্ড, এলইডি স্ক্রিনে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তানভীর আহমেদ একাই বিভিন্ন নামের প্রতিষ্ঠান তৈরি করে বেবিচকের একটি অসাধু চক্রের সহযোগিতায় এককভাবে বিজ্ঞাপনী বাণিজ্য দখল করেছেন। নীতিমালা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনী জায়গায় বিলও পরিশোধ করছেন না। ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে তানভীর আহমেদ গত ১৫ বছরে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই টাকার একটি অংশের ভাগ-বাঁটোয়ারা হচ্ছে বেবিচকের ওই অসাধু চক্রের মধ্যেও।

এদিকে গোল্ডহিল ও অ্যালায়েন্স নামে তানভীর আহমেদের এ প্রতিষ্ঠানটি শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের ছাদ বা রুফটপ লিজ নিয়েছে। সেখানে যাত্রীসেবা লাউঞ্জ ও ব্যাংকের জন্য ভাড়া দিয়েছেন তানভীর আহমেদ। বেবিচকের সাবেক পরিচালক (এটিএস) মো. মিজানুর রহমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় তিন হাজার বর্গফুট জায়গা ইজারা নিয়ে ছয় হাজার বর্গফুট জায়গা ব্যবহার করছেন তানভীর আহমেদ। ওই সব জায়গা ভাড়া দিয়ে ৩০ কোটি টাকা নিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবন বড়ই ঝুঁকিপূর্ণ। অপরিকল্পিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো ভবনের পরিত্যক্ত ছাদে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ভবন। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অবিলম্বে তা অপসাণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মানুষ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের বর্তমান চেয়ারম্যান কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি হননি। 

 

আমার বার্তা/এমই