মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগে নতুন নিয়ম জারি

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:২৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটির সরকারের জারি করা নতুন ১০ শর্তে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ করে দিতে পারে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির সাবেক সংসদ সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী চার্লস সান্তিয়াগো।

গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) স্থানীয় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে চার্লস সান্তিয়াগো অভিযোগ করেছেন, নতুন শর্তাবলী যেমন স্থায়ী অফিস এবং কমপক্ষে ১০ হাজার বর্গফুট জায়গা থাকতে হবে যে শর্ত দেয়া হয়েছে, তা ছোট কিন্তু নীতিগতভাবে সৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পূরণ করা অসম্ভব।

তিনি বলেন, এই কঠোর শর্তগুলো কেবল ‘বড় খেলোয়াড়রাই’ পূরণ করতে সক্ষম হবে, যার ফলে পূর্বে যারা এই খাত নিয়ন্ত্রণ করত, নতুন নিয়মে তারাই একচেটিয়া অধিকার বজায় রাখবে। তবে যে সমস্ত সংস্থা অতীতে শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে বা আর্থিক অপরাধে জড়িত ছিল, তাদের নিয়োগের অনুমতি না দেয়ার শর্তটিকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন এবং এটাকে ‘প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা’ বলে অভিহিত করেছেন।
 
অন্যদিকে অভিবাসী অধিকারকর্মী আদ্রিয়ান পেরেরা নতুন শর্তগুলোকে ‘উচ্চ স্তরের' বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি মালয়েশিয়ার বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ ব্যবস্থার কাঠামোগত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে ‘শূন্য নিয়োগ ফি’ নীতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তিনি। 
 
পেরেরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘যদি আমরা আমাদের নিজস্ব আইন সংস্কার করতে না পারি, তবে কীভাবে আমরা বিদেশী কর্মী নিয়োগ অব্যাহত রাখতে পারি? এই ১০টি মানদণ্ড মেনে চলতে গেলে যোগসাজশী ব্যবসায়ী চক্র ও সিন্ডিকেট তৈরির ঝুঁকিও রয়েছে।’
 
আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস-এর চেয়ারম্যান চার্লস সান্তিয়াগো বলেছেন, বাস্তব সংস্কার শুরু হওয়া উচিত কর্মীদের প্রতি আচরণের মাধ্যমে, কোনো এজেন্সির ভবনের আকারের মাধ্যমে নয়। তিনি বলেন, ‘সরকারকে অবশ্যই নিয়োগ সংস্থাগুলোকে অভিবাসী কর্মীদের কাছ থেকে ফি নেয়া থেকে বিরত রাখতে হবে এবং কর্মীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
 
সান্তিয়াগোর মতে, শোষণ বন্ধের মূল চাবিকাঠি হলো ‘শ্রমিক নিয়োগের ব্যয় নিয়োগ কর্তা বহন করবে’ নীতি বাস্তবায়ন করা, যেখানে নিয়োগকর্তারা সকল নিয়োগ খরচ বহন করবেন। 
 
তিনি সরকারকে এজেন্সির সংখ্যা সীমাবদ্ধ না রেখে নিয়োগ ব্যবস্থা প্রসারিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, ‘নতুন কাঠামোতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সুবিধা নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সংস্থাগুলোর সততা ও রাজনৈতিক সংযোগ নিয়মিত যাচাই করা উচিত।’
 
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল গত সপ্তাহে এক ঘোষণায় জানান, সরকার দুই বছরের স্থগিতাদেশের পর কৃষি, বৃক্ষরোপণ ও খনি খাতে বিদেশি কর্মীদের কোটার জন্য আবেদন পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে। এর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য ১০ শর্ত দেয়া হয়েছে। 

শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে: লাইসেন্স পাওয়ার পর অন্তত ৫ বছর সন্তোষজনক কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা, গত ৫ বছরে কমপক্ষে ৩ হাজার কর্মী বিদেশে পাঠানোর প্রমাণ, অন্তত ৩টি ভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন ও নিয়োগ সংক্রান্ত বৈধ লাইসেন্স, সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সদাচরণের সনদ, জোরপূর্বক শ্রম, মানবপাচার, অর্থপাচার বা অন্য কোনো অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড না থাকা, নিজস্ব প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়নকেন্দ্র থাকা যেখানে আবাসন, কারিগরী প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা মডিউল থাকবে, অন্তত ৫ জন আন্তর্জাতিক নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ইতিবাচক প্রশংসাপত্র এবং কমপক্ষে ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব স্থায়ী অফিস থাকতে হবে।
 
তবে বেশিরভাগ উৎস দেশের সরকার এরই মধ্যে মালয়েশিয়া সরকারের এই শর্তগুলোর নাকচ করে দিয়েছে। নেপাল জানিয়েছে, এসব শর্ত তাদের শ্রম আইন ও নীতির পরিপন্থি এবং একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। ফলে এই শর্তে কর্মী পাঠাবে না নেপাল।  
 
আমার বার্তা/এল/এমই