১১৮৭ পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরপূর্বক বৈষম্য দূরীকরণ
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১৫:১৬ | অনলাইন সংস্করণ
কাজী সামাদ ও হাফিজুর রহমান:
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং উন্নততর শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও এডিবি এর যৌথ অর্থায়নে ২০০১ থেকে ২০০৭ মেয়াদে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (SESIP), ফলোআপ প্রজেক্ট হিসাবে ২০০৭ থেকে ২০১৪ মেয়াদে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (SESDP) সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়। পরবর্তীতে SESDP এর সকল কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ থেকে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (SESIP) বাস্তবায়িত হচ্ছে যা 7 বার বৃদ্ধি পেয়ে ডিসেম্বর, ২০২৪ সালে সমাপ্ত হবে।
>> SESIP-এর জনবল কর্তৃক পরিচালিত স্থায়ী কার্যক্রম সমূহ
SESIP-এ কর্মরত কর্মকর্তাগণ বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কারিকুলাম বাস্তবায়ন, হাতে কলমে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার, আইসিটিভিত্তিক শিক্ষার প্রসার, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণের MPO কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ, স্কুল-মাদ্রাসা মনিটরিং ও নিবিড় অ্যাকাডেমিক সুপারভিশন, মাউশি অধিদপ্তরের EMIS সেল শক্তিশালীকরণ ও সফটওয়্যারের সার্বিক তত্ত্বাবধান, সাধারণ শিক্ষা ধারার সাথে চালুকৃত ভোকেশনাল ট্রেড কোর্স বাস্তবায়নে মনিটরিং, নকল মুক্ত পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনে ট্যাগ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের বিভিন্ন ইভেন্ট পরিচালনা, শিক্ষকগণের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আয়োজনসহ প্রশিক্ষণে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। করোনা অতিমারীর সময়ে ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের মত জাতীয় কার্যক্রমে SESIP-এর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মাধ্যমিক শিক্ষায় SDG-4 বাস্তবায়ন ও জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ এর আওতায় পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের উপযোগিতা যাচাইয়ের পাইলটিং কার্যক্রমসহ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। SESIP-এ কর্মরত জনবল 10 থেকে ২২ বৎসর যাবৎ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসেবে গড়ে উঠেছে যার ফলে মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের মাধ্যমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
>> জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন :
চলমান বাস্তবতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও কাজের পরিধি পূর্বের তুলনায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ও কর্মকর্তার সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় এবং সেসিপ এর জনবলের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে SESIP-এ সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ও কর্মরত ১১৮৭ টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিগত 06/০5/২০21 এ সম্মতি জ্ঞাপন করে।
>> জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদনকৃত পদসমূহ :
সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট ০১ টি, প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ ০১টি, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ০২ টি, প্রোগ্রামার ০১টি, শিক্ষা পরিসংখ্যানবিদ ০১টি, মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার ০১টি, সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার ০৭ টি, থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ২৫টি, থানা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার ২৫টি, উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার ৪৭২টি, গবেষণা কর্মকর্তা ৮৬টি, সহকারী পরিদর্শক ২৪৪টি, সহকারী প্রোগ্রামার ৫৬টি, ডিস্ট্রিক্ট ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর ৫৯টি, সহকারী থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ২১ টি, কম্পিউটার অপারেটর ২১ টি, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ০৬টি, হিসাবরক্ষক ০১টি, হিসাবরক্ষক ১৬টি, কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহকারী ১৭টি, গাড়ি চালক ১৫টি, অফিস সহায়ক ৫৯টি, নাইট গার্ড ২৫টি, পরিচ্ছন্নকর্মী ২৫টি, সর্বমোট ১১৮৭টি ।
>> অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসম্মতি :
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৩ শাখা ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ খ্রি. ১১৮৭টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সম্মতি প্রদান না করে জনবল ব্যতীত শুধমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্গানোগ্রামে ৮০১টি পদ সৃজনের সম্মতি প্রদান করে। পরবর্তীতে ২০/০৬/২০২২ খ্রি তারিখে ১১৮৭ টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের জন্য পুনরায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে অর্থ বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হয়। ২৮/০৬/২০২২ খ্রি: তারিখে অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৩ শাখা ০৪ টি কারণ দেখিয়ে সেসিপ এর ১১৮৭টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সুযোগ নেই মর্মে পুনরায় অসম্মতি জ্ঞাপন করে যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদা, অনুমোদিত সারসংক্ষেপ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতির সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।
>> SESIP এর জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত না হলে ০১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে মাঠ পর্যায়ে উদ্ভূত সমস্যাসমূহ :
(১) মাধ্যমিক পর্যায়ের সর্বশেষ জনবল কাঠামো অনুযায়ী বিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং স্কুল এন্ড কলেজ পরিদর্শন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য উপজেলা পর্যায়ে মাত্র একজন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একজন সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা; জেলা পর্যায়ে একজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও একজন সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা; আঞ্চলিক পর্যায়ে একজন উপপরিচালক, ২ জন বিদ্যালয় পরিদর্শক (একজন পুরুষ ও একজন মহিলা); ২ জন সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক (একজন পুরুষ, একজন মহিলা) এবং একজন প্রোগ্রামার-এর পদ রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তদুপরি, বিদ্যমান পদসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে। সেসিপ-এর 1187টি পদসহ জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত না হলে এই স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষার বিশাল কর্মযজ্ঞ (প্রায় 38 হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৪.5০ লক্ষ শিক্ষক ও 1.6 কোটি শিক্ষার্থী) সম্পাদন কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না।
(২) প্রতি বছর ০১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় । সেসিপের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ব্যতীত এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা দুরূহ;
(৩) মাধ্যমিক শিক্ষায় SDG-4 বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নে সেসিপ এর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে যা জানুয়ারি ২০২৪ থেকে বাধাগ্রস্ত হবে;
(৪) সারাদেশে চলমান ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোকেশনাল কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও ৭১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত ILC কার্যক্রম তত্ত্বাবধান মাঠ পর্যায়ে সেসিপ এর প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা ব্যতীত সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হবে না;
(৫) এছাড়াও মাধ্যমিক পর্যায়ে শুরু হতে যাওয়া নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের অ্যাকাডেমিক সুপারভিশন, পরিদর্শন ও মনিটরিং কার্যক্রম সেসিপ-এর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ব্যতীত বাধাগ্রস্ত হবে ।
প্রথাগত প্রকল্পসমূহের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি বাস্তবায়ন শেষে এর আওতায় কর্মরত জনবলের দায়িত্বও সমাপ্ত হয়ে যায়। পক্ষান্তরে, সেসিপ এর জনবল শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের অপরিহার্য অংশস্বরূপ দায়িত্ব পালন করছে যা একটি চলমান প্রক্রিয়া। SESIP এ মাঠপর্যায়ে কর্মরত স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ১১৮৭টি পদের জনবল বর্তমানে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেসিপ প্রোগ্রাম সমাপ্ত হয়ে গেলেও বর্ণিত জনবলের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে না।
SESIP প্রোগ্রামে কর্মরত জনবল ১০ থেকে ২২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, অধিকাংশের বয়স ৪০-৫০ বছর এবং এই জনবল দীর্ঘদিন যাবত বৈষম্যের শিকার। প্রোগ্রামের আওতায় সকুল্য বেতন-ভাতা ব্যতীত অন্যান্য আর্থিক সুবিধা (ইনক্রিমেন্ট, টাইম স্কেল, উচ্চতর গ্রেড) হতে বঞ্চিত। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত, যোগ্যতাসম্পন্ন (অধিকাংশই বিএড/এমএডসহ মাস্টার্স ডিগ্রিধারী), যথাযথ বিধি-বিধান অনুসরণ করে চাকরিপ্রাপ্ত ও কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও চাকুরিজনিত ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে হতাশাগ্রস্ত।
আমার বার্তা/এমই