১৪ বছর বৈষম্যের শিকার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজ

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি:

গত ১৫ বছর সিভিল এভিয়েশন ছিল অনিয়ম, লুটপাট এবং সাবেক মন্ত্রী-সচিবদের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার স্বর্গরাজ্য। আওয়ামী লীগ সরকারের কালো বিড়ালদের অবৈধ হাতের ছোঁয়ায় শহীদুল আফরোজ নামের একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বৈষম্যের শিকার হয়ে ১৪টি বছর ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। প্রকৌশল বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী হওয়া সত্ত্বেও অন্যায়ভাবে তাকে স্বপদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়। জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও কালো বিড়ালদের প্রভাবে সুধেন্ধু বিকাশ গোস্বামীকে প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, সুধেন্ধু বিকাশের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে কয়েকদফা মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। বঞ্চিত করা হয় প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজকে। অন্যদিকে সুধেন্ধু বিকাশ গোস্বামী প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পাওয়ার পর সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল বিভাগে শুরু করেন লুটপাটের রাজত্ব।

তিনি ঠিকাদারদের একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে গত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের নামে ৫০০ কোটি টাকার উপর লুটপাট করেছেন। সাবেক ওই প্রধান প্রকৌশলী নিজস্ব কয়েকজন ঠিকাদারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প ও বিভিন্ন কাজের কোটি কোটি টাকার প্রাক্কলন তৈরী করে নিজের পছন্দের ঠিকাদারের মাধ্যমে নামমাত্র কাজ করেই শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন গত ১২ বছরে। এ ব্যাপারে জরুরীভিত্তিতে স্বচ্ছ তদন্ত হলেই প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে। শাহজালাল, সিলেট ওসমানী, চট্টগ্রাম শাহ আমানত, কক্সবাজার বিমানবন্দরে শুধু বিভিন্ন ভবনে রং করা ও বিমানবন্দরগুলোতে ঘাস কাটার নামে শত কোটি টাকার কাজ দেখিয়ে অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি নিজে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সেই সাথে তার পছন্দের ঠিকাদার সাবেক বিমানমন্ত্রীদের লোকজনও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার শাসন আমলে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল ও ২০২৪ সালে প্রথম ৪ মাস পর্যন্ত প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশলীদের মধ্যে তিনি
সবার সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ সালে সংসদীয় কমিটির সুপারিশে তাকে বঞ্চিত করে তার জুনিয়র সুধেন্ধু বিকাশ গোস্বামীকে প্রধান প্রকৌশলী পদে অন্যায়ভাবে নিয়োগ দেয়া হয়।

তৎকালীন বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সিভিল এভিয়েশনের প্রভাবশালী এবং আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটের ঠিকাদারদের তদবিরে মোঃ শহীদুল আফরোজকে বঞ্চিত করে সুধেন্ধু বিকাশ গোস্বামীকে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, গোস্বামী বাবুর চাকরীর মেয়াদ শেষ হবার পরেও তাকে আরো দুই দফায় প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।

পরবর্তীতে ওই চক্রটি সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্ধু বিকাশ গোস্বামীর যোগসাজশে শহীদুল আফরোজের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে এবং তখন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়; যাতে পরবর্তীতে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেতে না পারেন আওয়ামী লীগ সরকার আমলের ওই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আইনী মোকাবেলা করে এবং মাননীয় আদালত মামলা থেকে ২০২৩ সালে তাকে অব্যাহতি প্রদান করে রায় দেন। মামলায় অভিযোগ ছিল, জেনারেটরের টাকা আত্মসাৎ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলীর (রুটিন ওয়ার্ক) দায়িত্বে থাকা মো. শহীদুল আফরোজ বলেন, আমার জীবন থেকে ১৪ বছর অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়েছে সাবেক সরকারের মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়। আমার জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও সুধেন্ধু বিকাশ গোস্বামীকে প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেয়া হয়। শুধু তাই নয় পরবর্তীতে আমার নামে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে সাড়ে ৪ বছর সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা হয়। তিনি বলেন, ৭০ হাজার টাকা দামের একটি জেনারেটর ক্রয়ের পর তা তখনও চালু ছিল এখনো চালু রয়েছে। মামলার সাক্ষী প্রমাণ ও তদন্ত সাপেক্ষে আমি আদালতের নির্দেশে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছি।

জানা যায়, আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশনের সদর দপ্তর থেকে সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করে স্বপদে যোগদানের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলীর পদ শূন্য হলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাকে প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন ওয়ার্ক) হিসাবে নিয়োগ প্রদান করে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক মাস আগে আইনি লড়াই করে রায় পাওয়ার পর এ দায়িত্ব দিতে বাধ্য হয় সিভিল এভিয়েশন।

সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, চার্জশিটভূক্ত আসামি হিসাবে প্রচার করা একটি মহল আবারও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা হয়েছিল কিন্তু দীর্ঘ তদন্তের পর আদালত এ মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে স্বপদে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের।

সিভিল এভিয়েশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্ধু বিকাশ গোস্বামীর সাথে যোগাযোগ করে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার দুইটি মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এছাড়া সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান ও সাবেক বিমান মন্ত্রী মাহমুদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্ধু বিকাশ গোস্বামীর বিরুদ্ধে দুদকে মামলা ও নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন সরকার আমলে মামলা থমকে যায়।  

 

আমার বার্তা/এমই