পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব
বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:১২ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৫ বছর বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তারা (বঞ্চিত কর্মকর্তারা) ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পদোন্নতি পেলেও তাদের বিরুদ্ধে এক শ্রেণির লোক ষড়যন্ত্র করছে। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় এখনও লিপ্ত রয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। ইদানীং কিছু কিছু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যা তাদের পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের ‘ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন প্রকল্প' থেকে এক শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ বিষয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। এতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকল্প পরিচালকসহ অভিযুক্তদের নামের পাশাপাশি আরেকজন নিরপরাধ কর্মকর্তা মো. ফিরোজ সরকারকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্যনির্ভর। এতে তার পেশাগত, ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বর্তমানে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন। দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সততা এবং আদর্শের কারণে টিকে ছিলেন ফিরোজ সরকার।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ওই প্রতিবেদনে অভিযুক্তরা ছিলেন প্রকল্প পরিচালক প্রনব কুমার সাহা (ইনফো সরকার-৩ প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের আস্থাভাজন ছিলেন), মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার আরিফ ইবনে আলী, নরসিংদী জেলা কার্যালয়ের প্রোগ্রামার এ এস এম মোবারক হোসেন, তিনি ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন (ইডিসি) প্রকল্পের প্রোগ্রামার (প্রকিউরমেন্ট) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন, বরগুনা জেলা কার্যালয়ের প্রোগ্রামার মো: আব্দুল্লাহ বিন সালাম, তিনি ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন প্রকল্পের প্রোগ্রামার (ডাটাসেন্টার, সিভিল, স্পেশালাইজড ল্যাব) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ঢাকা জেলা কার্যালয়ের প্রোগ্রামার মো: ওবায়দুর রহমান, তিনি ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন প্রকল্পে প্রোগ্রামার (সহকারী প্রকল্প পরিচালক-এপিডি, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। মো. ফিরোজ সরকার ওই প্রজেক্টের ডিপিডি হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। নিয়মিত প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন প্রনব কুমার সাহা। এছাড়াও টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন আইসিটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। ফলে ডিপিডির অর্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো ভূমিকা থাকে না। তবু তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ওই প্রতিবেদনে জড়ানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, প্রচারিত সংবাদে দৃষ্টে মনে হচ্ছে দীর্ঘ ১৫ বছর অমানবিক ভোগান্তির পর পদোন্নতি পেয়েছি এটা যেন আমার অপরাধ। ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের ডিপিডির কোন প্রকার সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নাই। সকল সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) এবং সকল দায়দায়িত্বও তার। এমন একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ প্রচার বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটি নীলনকশা।
এদিকে, উক্ত প্রজেক্টে শতাধিক কোটি টাকার অর্থ আত্মসাৎ বিষয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয় আইসিটি বিভাগে কর্তৃক। কমিটি বিস্তারিত তদন্ত শেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন দুদকে প্রেরণ করে। কিন্তু উক্ত অভিযোগে ডিপিডি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফিরোজ সরকারের নাম না সত্ত্বেও অভিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রনব কুমার সাহা’র নামের পরিবর্তে তার নাম জড়িয়ে সংবাদ প্রচারিত হয় যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। প্রচারিত সংবাদের ফোকাস ছিল তার প্রমোশন।
ওই কমিটি তদন্ত কাজ শেষে সার্বিক মতামতে জানায়, অভিযোগসমূহের সত্যতা পাওয়া যায়নি। পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক না থাকা, প্রকল্পের জনবল নিয়োগে বিলম্ব ও বিভাগীয় কর্মচারীদের প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া, দুর্বল প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত রেষারেষি ও প্রতিযোগিতার কারণে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সূত্রপাত ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দীর্ঘদিন বঞ্চিত কর্মকর্তাদের জড়িয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার স্বচ্ছ. জবাবদিহি ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন।
আমার বার্তা/এমই