ফ্যাসিস্ট আ.লীগের পতন হলেও যুব উন্নয়নে রং বদলে বহাল আনিসুল
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ
বিশেষ প্রতিবেদক:
★কাজ পাইয়ে দেয়ার শর্তে দরপত্রের বিপরীতে আনিসুল ১০% কমিশন ঘুষ হিসেবে অগ্রীম নিতেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে যা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অনেকটাই ওপেন সিক্রেট ব্যাপার ছিল।
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামিলীগ সরকারের পতনের পর সরকারি বিভিন্ন দপ্তর-উপদপ্তরে দূর্নীতিবাজ আওয়ামীলীগের দোসরেরা অনেকেই চাকরি ফেলে পালিয়ে গেছে, আবার অনেকেই দিয়েছেন গা ঢাকা।তবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আনিসুল ইসলাম রং বদলিতে গুছিয়ে চলেছেন তার নতুন সিন্ডিকেট। আনিসুল ইসলাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের একজন আলোচিত নাম। তিনি দীর্ঘদিন যাবত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে তার পছন্দের কিছু ঠিকাদার, ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী ও যুবলীগের বেশকিছু ক্যাডার বাহিনীর সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
আনিসুলের সিন্ডিকেটটি মূলত যুবকদের উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। এভাবে শতশত কোটি টাকা আনিসুল ও একই দপ্তরের বেশকিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে লোপাট হয়েছে যা দীর্ঘদিন সরেজমিনে অনুসন্ধান করলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। এতদিন এসব বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও ফ্যাসিষ্ট আওয়ামিলীগ সরকারের পতনের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে আনিসুলের দূর্নীতির ফিরিস্তি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, আনিসুলের সিন্ডিকেটের ঠিকাদার ছাড়া অন্য কোন ঠিকাদারের যোগ্যতা থাকলেও তাদেরকে কাজ দেয়া হতো না। তানিমা এন্টারপ্রাইজ, সনেক্স এন্টারপ্রাইজসহ ১০/১৫ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল আনিসুলের সিন্ডিকেটের সদস্য। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানই কাজ পেত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের। দরপত্র আহ্বানে শর্ত জুড়ে দিয়ে, কখনোবা স্টিমেট রেট গোপনে নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে সরবরাহ করে, এমনকি কখনো কখনো সমস্ত নিয়মনীতি উপেক্ষা করেও ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দিয়েছেন তাদের পছন্দের কোম্পানিকে। কাজ পাইয়ে দেয়ার শর্তে দরপত্রের বিপরীতে আনিসুল ১০% কমিশন ঘুষ হিসেবে অগ্রীম নিতেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে যা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে অনেকটাই ওপেন সিক্রেট ব্যাপার ছিল। এছাড়া আনিসুলের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির মাধ্যমেও কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার।
তিনি বলেন, এসকে এন্টারপ্রাইজের মালিক খালেকুজ্জামান আনিসুল ইসলামের সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হওয়ায় তিনি বিভিন্ন সময় জাল কাগজপত্র তৈরি করে জমা দিয়েও একাধিক কাজ পেয়েছেন। এমনকি খালেকুজ্জামান মুন্সি, তানিমা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সেলিমের একটি ঠিকাদারি কাজের বিপরীতে জামানত হিসেবে জমা দেয়া ৩,৩২,৩৩৪/-(তিন লাখ বত্রিশ হাজার তিনশত চৌত্রিশ) টাকার চেক তানিমা এন্টারপ্রাইজের প্যাড সিল ও স্বাক্ষর জাল জালিয়াতি করে জমা দিয়ে উত্তোলন করে নেয়। যা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে একটি নজির বিহীন ঘটনা। এ ঘটনার পেছনের নায়ক আনিসুল ইসলাম নিজে বলে জানা যায় একাধিক সূত্রে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, জাল জালিয়াতির কারণে এসকে এন্টারপ্রাইজের মালিক খালেকুজ্জামান মুন্সির চেক বিভিন্ন সময় স্থগিত রাখলে আনিসুল ইসলাম চাপ সৃষ্টি করে এসকে এন্টারপ্রাইজের চেক দিতে বাধ্য করতেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক গ্যারান্টি, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাংক্স, ভ্যাটসহ আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র সঠিকভাবে দেয়ার শর্ত থাকলেও এসকে এন্টারপ্রাইজের মালিক খালেকুজ্জামান মুন্সি এগুলো শতভাগ পূরণ না করে, কখনোবা জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে দরপত্রে অংশগ্রহণ করে আনিসুল ইসলামের সহযোগিতায় কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরেরের একাধিক সূত্র বলছে, আনিসুল দূর্নীতির টাকা অফিস থেকে নেয়ার সময় ক্রীম কালারের একটি লেদাড়ের একটি ব্যাগ ব্যবহার করতেন। ৫ই আগষ্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আনিসুল কিছুটা গাঁ ঢাকা দিয়ে ছিলেন। তবে বর্তমানে একটি দলের অনুসারী কিছু ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন। নতুন রংয়ে আনিসুলের ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে হতবাক খোদ যুব উন্নয়নেরই অনেকে।
সূত্রগুলো থেকে আরও জানা যায়, বিগত প্রায় ৭/৮ বছর আনিসুল একই পদে বহাল থেকে এসব অপকর্ম মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় দুটি বাড়ী যার আনুমানিক মূল্য ২০/২৫ টাকা। নিজ বাড়ি ঝিনাইদহেও রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এছাড়া স্ত্রী ও সন্তানদের নামেও কোটি কোটি টাকার ব্যাংক, ব্যালেন্স ও এফডিআর। বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য নিতে আনিসুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে পরিচয়সহ এসএমএস দিয়ে আবারও ফোন করেও আনিসুলের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
আমার বার্তা/এমই