হত্যা মামলার আসামি আক্তারুজ্জামান হাসপাতালের বিলাসবহুল কেবিনে

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ১৬:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার:

রাজধানীর রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত বিএনপি নেতা ও সাবেক ঢাকা সিটি করপোরেশন কমিশনার চৌধুরী আলম গুম ও একাধিক ছাত্র হত্যা মামলার অন্যতম আসামি খান মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বর্তমানে কারাগারে থাকার কথা থাকলেও, অবৈধ অর্থের জোরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বিলাসবহুল কেবিনে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তিনি গুরুতর কোনো শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন না, বরং কারাগারের পরিবেশ এড়িয়ে হাসপাতালের বিশেষ সুবিধা ভোগ করছেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় তিনি হাসপাতালের বিশেষ কেবিনে থাকার ব্যবস্থা করেছেন।

২০১০ সালের ২৫ জুন সন্ধ্যায় ফার্মগেট সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের কালিন্দি অ্যাপার্টমেন্টের সামনে থেকে বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমকে অপহরণ করা হয়। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পরও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। এই ঘটনায় সম্প্রতি তার ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডিজিএফআইয়ের সাবেক ডিজি জিয়াউল আহসানসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলার অন্যতম আসামি খান মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান। অভিযোগ রয়েছে, চৌধুরী আলম গুমে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি আক্তারুজ্জামান বিভিন্ন গুম, হত্যা ও দখলবাজি কর্মকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের একটি বাসায় র‍্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে আক্তারুজ্জামান গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা, গুম, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও দখলবাজির মামলা রয়েছে। মিরপুর, পল্টন, খিলগাঁও, উত্তরা পশ্চিম, যাত্রাবাড়ী, রামপুরাসহ ও ভাষানটেক থানায় ছাত্র হত্যা মামলা এবং ক্যান্টনমেন্ট থানায় ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। বিশেষ করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, "আয়নাঘর জিয়া", "ডিবি হারুন", আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ আরও অনেক বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। এসব সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে তিনি বছরের পর বছর দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন।

এছাড়া, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি এবং দুদকের তদন্তাধীন একাধিক দুর্নীতির মামলা রয়েছে। পিসিআর রিপোর্ট অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে The Penal Code, 1860-এর 143, 447, 149, 323, 324, 325, 326, 307, 384, 385, 506 এবং 302, 34, 109, 114 ধারায় একাধিক মামলা চলমান।

সাধারণ বন্দিরা যেখানে ন্যূনতম চিকিৎসা সুবিধার জন্য হাহাকার করেন, সেখানে এত বড় অপরাধের আসামি হাসপাতালের বিশেষ কেবিনে থেকে সরকারি টাকায় ভিআইপি সুবিধা ভোগ করছেন। বিষয়টি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—একজন ভয়ংকর অপরাধীর জন্য এত সুবিধা কীভাবে সম্ভব?

জনগণের প্রশ্ন, আইনের চোখে সবাই সমান হলে আক্তারুজ্জামানের মতো আসামির ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম কেন? অপরাধীদের এই ‘হাসপাতাল নাটক’ বন্ধ করে দ্রুত কারাগারে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠেছে। একইসঙ্গে, তার প্রকৃত শারীরিক অবস্থা যাচাইয়ে নিরপেক্ষ মেডিকেল বোর্ড গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে। যদি তিনি সত্যিই অসুস্থ হন, তাহলে জেল হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়া হোক। আর যদি সুস্থ থাকেন, তাহলে দ্রুত কারাগারে পাঠিয়ে তার উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা হোক।

এমন ‘ভিআইপি বন্দিত্ব’ আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। দুর্নীতিবাজদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়। জনগণ জানতে চায়—এই অপরাধী এতদিন কীভাবে হাসপাতালের আড়ালে আরামদায়ক জীবনযাপন করছেন?

 

আমার বার্তা/এমই