রিয়ালকে ৪ গোলে উড়িয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে পিএসজি
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ১১:১১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

নিউজার্সিতে প্রায় ৯৫ শতাংশ রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তদের মাঝে আবদ্ধ ছিল প্যারিসিয়ান সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) শিবির। প্রায় স্বাগতিক মেজাজে খেলতে নামা লস ব্লাঙ্কোসদের সেই আমেজ স্তব্ধ করে দিতে সময় লাগেনি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নদের। খেলার মাত্র ৯ মিনিটেই ডিফেন্ডারদের ভুলে জাবি আলোনসোর রিয়াল জোড়া ধাক্কা খায়। সেই ঘোর থেকে তারা আর বেরোতে পারেনি। শেষমেষ রিয়ালকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল পিএসজি।
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ দিয়েই রিয়ালের সঙ্গে যাত্রা শুরু হয়েছে কোচ আলোনসোর। ঘরোয়া ও ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় শিরোপাহীন মৌসুম কাটানো দলটি এমনিতেই অগোছালো, তার ওপর নতুন কোচের অধীনে ভিন্ন ফরমেশনে পুরোপুরি মানিয়েও নিতে পারেনি। কিন্তু তাই বলে ক্লাব বিশ্বকাপের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা পাত্তাই পাবে না তা হয়তো ভাবেননি কেউই। উড়তে থাকা পিএসজি তাদের যেন বাস্তবতাই দেখাল! ফরাসি জায়ান্টদের পক্ষে ফ্যাবিয়ান রুইজ দুটি, উসমান দেম্বেলে ও গঞ্জালো রামোস একটি করে গোল করেছেন।
কার্ডজনিত কারণে রিয়াল মাদ্রিদ সেমিফাইনালে ডিফেন্সের নতুন ভরসা ডিন হুইজসেনকে ছাড়াই খেলতে নামে। কিন্তু ম্যাচের আগমুহূর্তে ইনজুরির কারণে ছিটকে যান আরেক বড় সাইনিং ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আরনল্ড। ফলে রক্ষণে দুজনকে হারানোর ধাক্কা রিয়ালের পারফরম্যান্সে বেশ ভালোভাবেই পড়েছে। থিবো কোর্তোয়া প্রথম চার মিনিটে দুটি দুর্দান্ত সেভ করলেও, পরক্ষণেই ডিফেন্ডারদের ভুল পিএসজিকে মোমেন্টাম এনে দেয়। পুরো ম্যাচে ৬৯ শতাংশ পজেশন রেখে ১৭টি শট নেয় পিএসজি, যার ৭টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে রিয়াল ১১ শটের মধ্যে ২টি লক্ষ্যে রাখতে পারে।
রিয়াল-পিএসজির সেমিফাইনাল নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট দেরিতে শুরু হয় যানজটের কারণে। তবুও সাদা জার্সিধারী রিয়াল সমর্থকদের উত্তেজনায় ঠাসা ছিল মেটলাইফ স্টেডিয়াম। বিরুদ্ধ আবহে খেলতে নেমেও রুইজ-দেম্বেলে-কাভারৎস্খেলিয়া-হাকিমিরা সেটি থোড়াই কেয়ার করলেন। ৬ষ্ঠ মিনিটে ম্যাচে প্রথম লিড নেয় পিএসজি। রিয়ালের সেন্টারব্যাক রাউল অ্যাসেনসিও পেনাল্টি স্পটের কাছে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে দেম্বেলের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারান। কোর্তোয়া তাকে কড়া ট্যাকেল করলেও রুইজকে খুঁজে নেন দেম্বেলে। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার বল জালে জড়াতে ভুল করেননি।
মিনিট তিনেক বাদে রিয়ালের খলনায়ক বনে যান অ্যান্টনিও রুডিগার–ও। সতীর্থকে বলটি তিনি ঠিকঠাক বাড়াতেই পারলেন না। তার দুর্বলতায় দেম্বেলে পেছন থেকে ছুটে গিয়ে আড়াআড়ি শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। ২৪তম মিনিটে আসে তৃতীয় গোল। দুর্দান্ত গতিতে রিয়ালের রক্ষণ ভেঙে আশরাফ হাকিমির চমৎকার পাস পেয়ে যান রুইজ। এরপর ঠাণ্ডা মাথায় তিনি বল জালে জড়িয়ে দেন, নাগাল পাননি গোলরক্ষক কোর্তোয়া। পুরো প্রথমার্ধে একেবারে তটস্থ ছিল রিয়াল। বলের নিয়ন্ত্রণও ঠিকঠাক রাখতে পারছিল না, পজেশন ছিল মাত্র ২০ শতাংশ।
বিরতির পর কিছু বুঝে ওঠার আগে মিনিট দুয়েকের মাথায় আবারও গোল হজম করে রিয়াল। কিন্তু দেজিরে দুয়ে’র করা গোল অফসাইডে কাটা পড়ে। ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা পিএসজি এরপর দেম্বেলে-কাভারাৎস্খেলিয়াকে তুলে নেয় ৬০ মিনিটের আগে। তবুও সেভাবে কার্যকর কিছু করতে পারছিল না রিয়াল। লুকা মদ্রিচ শেষবারের মতো এবং গত অক্টোবরের পর প্রথমবার মাঠে নামলেন দানি কারভাহাল। তবুও ৮৮ মিনিটে রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকে পিএসজি। বদলি নামা গঞ্জালো রামোস ডি-বক্সের ভেতর জোরালো শটে দলের চতুর্থ গোল করেন। এরপর উদযাপনে স্মরণ করেন তার স্বদেশি পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড দিয়েগো জোতাকে।
বড় জয়ে প্রথমবার ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল মাসখানেক আগে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী লুইস এনরিকের পিএসজি। এবার এই স্প্যানিশ কোচের সামনে আরও একটি মেজর ট্রফি জয়ের ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছে। এর আগে তিনি বার্সেলোনার কোচ হিসেবে ২০১৬ সালে ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিলেন। চলমান এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে পিএসজির প্রতিপক্ষ একবারের চ্যাম্পিয়ন চেলসি। আগামী রোববার তারা শিরোপা নির্ধারণী মহারণে মুখোমুখি হবে।
আমার বার্তা/জেএইচ