বুক রিভিউ : আলো-আঁধার- বিল্লাল বিন কাশেম

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

  ড. হাফিজ রহমান:

বিল্লাল বিন কাশেমের "আলো-আঁধার" একটি অসাধারণ ছোট গল্পের সংকলন, যা পাঠকদের আবেগ, সম্পর্ক, বিশ্বাস এবং জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এই বইটি কেবল একটি সাহিত্যিক রচনা নয়, বরং মানুষের অভ্যন্তরীণ আবেগের এক চমৎকার ছবি। লেখক তার গল্পের মাধ্যমে গভীর মানবিক অনুভূতিগুলিকে এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে, পাঠক সহজেই তা অনুভব করতে পারে।

"আলো-আঁধার" বইটির প্রতিটি গল্পে সমাজ, সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। গল্পগুলিতে নানা ধরনের চরিত্রের উপস্থিতি যেমন তাদের অস্থিরতা, যন্ত্রণা, ভালোবাসা এবং আত্মবিনাশী প্রবণতা দেখা যায়, তেমনি তাদের জীবনের প্রাপ্তি, অভাব এবং মানবিক সংঘাতের গভীরতা ফুটে উঠেছে। কাশেম গল্পের মাধ্যমে জানিয়ে দেন, একদিকে জীবন যখন অন্ধকারে ভরা, তখন আরেকদিকে আলো এবং প্রেমের সঞ্চার ঘটে।

প্রতিটি গল্পের মধ্যে কিছুটা বিদ্বেষ এবং পরবর্তীতে তীব্র প্রেম এবং বিশ্বাসের এক মৃদু তত্ত্ব ফুটে ওঠে। লেখক তার কাহিনির মাধ্যমে পাঠককে নানান মানবিক অনুভূতির ধ্বনি শুনান, যা তাদের নিজের জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। বিশেষ করে, গল্পগুলির মাধ্যমে কাশেম মনে করিয়ে দেন, আমরা যতই দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকি না কেন, শেষ পর্যন্ত একদিন নিজস্ব আলোকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা থাকে।

এই সংকলনের গল্পগুলো শুধুমাত্র সামাজিক প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলি জীবনের বোধ, বিশ্বাস এবং আবেগের পরস্পর জটিল সম্পর্কের সুষম রূপক। কাশেমের লেখনীতে প্রগাঢ় গভীরতা এবং মানবিক সংবেদনশীলতা প্রতিফলিত হয়। প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে নিজের কষ্ট, যন্ত্রণা, ভীতি এবং আশার স্বপ্ন একসঙ্গে চলতে থাকে, এবং পাঠক চমৎকৃত হয়ে তা অবলোকন করেন।

গল্পগুলির ভাষাশৈলী এবং কাহিনির প্রবাহ অত্যন্ত সুমধুর, যা পাঠককে বইয়ের পাতায় আটকে রাখে। "আলো-আঁধার" গল্পের মাধ্যমে বিল্লাল বিন কাশেম চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন, কীভাবে মানুষের অবহেলা, অনুতপ্ত মন, এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব একে অপরকে আচ্ছন্ন করে এবং একই সঙ্গে এভাবেও দেখা যায় যে, একসময় মানুষ তার নিজস্ব অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে এবং আলোয় প্রবাহিত হয়।

বিশেষ করে, বইটির একটির পর একটি গল্পে আবেগের প্রবাহ এবং সম্পর্কের জটিলতা গভীরভাবে আঁকা হয়েছে। এই বইটি আমাদের শিখিয়ে দেয়, সম্পর্কের মধ্যে শান্তি, ভালোবাসা এবং বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত, মানবিক সংবেদনশীলতার জয় হয়।

এই বইটি শুধুমাত্র একটি সাহিত্যিক সৃষ্টি নয়, বরং এটি মানুষের ভিতরের অনুভূতির জগতের এক অসাধারণ আখ্যান। কাশেমের লেখায় রয়েছে প্রেম, ক্ষোভ, সংঘাত এবং আত্মবিশ্বাসের সূক্ষ্ম মিলিত প্রতিফলন, যা পাঠককে নিজের জীবন এবং অনুভূতিকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে। এটি একদিকে যেমন একটি হৃদয়গ্রাহী সৃষ্টিতত্ত্ব, তেমনি মানুষের মনের গভীরতম অনুভূতিগুলির চমৎকার প্রকাশ।

পাঠককে এক অন্যরকম অনুভূতি ও ভাবনার জগতে নিয়ে যাওয়া, এটি একাধারে প্রগতিশীল এবং হৃদয়গ্রাহী। "আলো-আঁধার" একটি অসাধারণ বই, যা সামাজিক সম্পর্ক, জীবনযুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ সংগ্রামের নানা দিক নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন এনে দেয়।

অতএব, "আলো-আঁধার" একটি বই যা পাঠকদের চমৎকৃত করবে, তাদের মনকে ছুঁয়ে যাবে, এবং মানবিক আবেগের এক অনবদ্য চিত্র স্থাপন করবে।

 

লেখক: গীতিকার, গল্পকার ও কলামিস্ট