রাজধানীর মানিকনগর ওয়াসা রোড এলাকার সবজি বিক্রেতা আয়শা বেগম (৫৫) চুরির সন্দেহে একদল নারীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে রুমি আক্তার বাদী হয়ে মুগদা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
আয়শা বেগম মানিকনগর ঋষিপাড়া গলির মুখে সকালে সবজি বিক্রি করতেন এবং বিকেলে মিয়াজান গলির মুখে মেয়েদের পোশাক বিক্রি করতেন। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা নিজামুদ্দিনের শাশুড়ি ছিলেন।
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে মানিকনগর ৫৫/ডি সরদার বাড়ি মসজিদ গলির বাসিন্দা লাকি (৩৬)-এর বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণ ও রুপার গহনা চুরি হয়। চুরির অভিযোগে লাকি থানায় কোনো অভিযোগ না করে আয়শা বেগম ও তার দুই মেয়ে রুমি আক্তার (৩০) এবং রোজিনা (২৫)-কে সন্দেহ করেন। তারা চুরির অভিযোগ অস্বীকার করলে লাকি ও তার সহযোগীরা তাদের চাপ দিতে থাকেন।
১০ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২:৩০ মিনিটে আয়শা বেগম যখন সবজি বিক্রি করছিলেন, তখন আক্তার বানু (৬০) তাকে ডেকে নিজের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে লাকি, সাথী (৩২) এবং আরও ৭-৮ জন নারী উপস্থিত ছিলেন। তারা আয়শা বেগমকে চুরির দায় স্বীকার করতে বাধ্য করার জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।
যখন আয়শা বেগম চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেন, তখন লাকি, সাথী, আক্তার বানু এবং আরও কয়েকজন তাকে মারধর করতে থাকেন। কিল, ঘুষি ও লাথির আঘাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বমি করেন। এ সময় তিনি তার ছোট মেয়ে রোজিনাকে ফোন করে দ্রুত নিয়ে যেতে বলেন।
রুমি ও রোজিনা মায়ের অবস্থা দেখে দ্রুত রিকশায় করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ৯:১০ মিনিটে আয়শা বেগম মারা যান।
মৃত্যুর পরপরই মুগদা থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
১২ই ফেব্রুয়ারি নিহত আয়শা বেগমের মেয়ে রুমি আক্তার বাদী হয়ে মুগদা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে—
১. লাকি (৩৬)
২. সাথী আক্তার (৩২)
৩. আক্তার বানু (৬০)
৪. অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জন নারী
মামলা নং: ১৫/১২/২/২৫
ধারা: ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০
মুগদা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, "আয়শা বেগমের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো হবে।"
এই ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে একজন নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ ঘটনার পর মুগদা থানার পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে। স্থানীয়দের অনেকে মনে করছেন, তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
এই ঘটনা শুধু আয়শা বেগমের মৃত্যু নয়, বরং সমাজে বিচারবহির্ভূত শাস্তি ও গুজবের ভিত্তিতে নিরপরাধ মানুষকে নির্মম নির্যাতনের বাস্তবচিত্র তুলে ধরেছে। এখন দেখার বিষয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কত দ্রুত এই নৃশংস ঘটনার সুবিচার নিশ্চিত করতে পারে।
আমার বার্তা /জেএইচ/জাহিদুল আলম