রাজধানীর উত্তরায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) পরিচয়ে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সকালে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর থেকে মোবাইল ফিন্যন্সিয়াল সার্ভিস-নগদের ডিস্ট্রিবিউটরের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এই টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় ডিস্ট্রিবিউটিং অফিসের চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করছে পুলিশ। তবে ছিনতাইয়ে জড়িতদের শনাক্তে কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলের ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, দুটি মোটরসাইকেলে চার ব্যক্তি ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার পথে কালো একটি মাইক্রোবাস বিপরীত দিক থেকে এসে গতিরোধ করে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলের পেছনে বসা এক ব্যক্তি ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এরপর র্যাবের জ্যাকেট (কটি) পরা লোক দৌড়ে তাকে ধরে ফেলে। পরে ভুক্তভোগীদের মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়।
পুলিশ জানায়, উত্তরা-১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডে নগদের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়নের বাসা। সেখান থেকে হেঁটে গেলে মাত্র ৫ মিনিটের পথ নগদের ডিস্ট্রিবিউটিং অফিস। ওই অফিস থেকে ৪ জন গিয়ে নয়নের বাসা থেকে টাকাগুলো আনছিলেন। তারা মোটরসাইকেলে ছিলেন। রাস্তার মোড়ে একটি হায়েস গাড়িতে ওতপেতে ছিল র্যাব পরিচয়ের ছিনতাইকারীরা। তারা অস্ত্রের মুখে নগদের কর্মকর্তাদের আটকায়। চারজনের মধ্যে কাউসার, লিয়াকত ও আব্দুর রহমান নামের তিনজনকে টাকার ব্যাগসহ হায়েস গাড়িতে ওঠানো হয়। ওমর হোসেন নামের আরেকজন দৌড়ে পালাতে সক্ষম হন। এরপর ছিনতাইকারীরা নগদের প্রতিনিধিদের উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ফেলে রেখে যায়।
এ ঘটনায় নগদের চার প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছেন, দুটি মোটরসাইকেলে টাকা আনা হচ্ছিল। এক মোটরসাইকেলে ছিল ১ কোটি ৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা। ওমর হোসেন যে ব্যাগ নিয়ে পালাতে সক্ষম হন সেটিতে এক লাখের কিছু বেশি টাকা ছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম জানান, ডিস্ট্রিবিউটর অফিসটির দুজন পার্টনার। একজন আব্দুল খালেক নয়ন অপরজন তারিকুজ্জামান। টাকাটা নয়নের বাসায় রাখা ছিল। কেন তার বাসায় টাকাগুলো রাখা হয়েছিল, বন্ধের দিনে এত সকালে এতগুলো টাকা কেন বাসা থেকে অফিসে নেওয়া হচ্ছিল সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের কাছে। দুটি মোটরসাইকেলের মধ্যে যেটিতে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা বহন করা হচ্ছিল সেটি টার্গেট করাটা সন্দেহজনক। অনেক সময় ভেতরেই ইনফরমার থাকে। আমরা এখনো জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। তবে ক্লু পেতে গাড়ির নম্বর সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য নিয়ে কাজ করছি।
এ ঘটনায় নগদের পরিবেশক এম আর করপোরেশনের মালিক তারিকুজ্জামান বলেন, যখন তারা টাকা নিয়ে বের হয় তখন একটি মাইক্রোবাসে দশ-বারোজনের মতো লোক আসে। তাদের গায়ে র্যাবের জ্যাকেট ছিল। টাকা নিয়ে যাচ্ছিল চারজন, তাদের একজনের কাছে টাকার ব্যাগ ছিল। যার কাছে ব্যাগ ছিল সে পালানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি। একজন দৌড়ে অফিসের নিচে গিয়ে লোকজন ডেকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। এর আগেই বাকি তিনজনকে ওই মাইক্রোতে তুলে নেওয়া হয়। আধা ঘণ্টা পর আমরা খবর পাই ওদের ১৭ নম্বর সেক্টরে ফেলে গেছে। ওদের চোখ, হাত-পা বাঁধা ছিল। এরপর আমরা থানায় অভিযোগ করি এবং তারা এটা নিয়ে কাজ করছে। আমাদের আশ্বাস দিয়েছে টাকা উদ্ধারের।
টাকাগুলো কিসের এবং কোথায় নেওয়া হচ্ছিল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংকে নেওয়া হচ্ছিল সিআরএম (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) করার জন্য। এই টাকাগুলো আমি ব্যাংকে জমা দিয়ে রিসিট নিয়ে যখন নগদকে দেব তখন নগদ আমাকে ই-মানি দেবে। ই-মানি দিলে আমি এগুলো দোকানে দোকানে দিতে পারব।
মানি এসকর্ট সেবা নেননি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কী? যেটা হয়ে গেছে সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। তবে আমাদের পুলিশি সহায়তা নেওয়া দরকার ছিল। এটা আমাদের ভুল ছিল। কাউকে সন্দেহ করছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আসলে কাউকে সন্দেহ করতে পারছি না। যে চারজন টাকা নিয়ে যাচ্ছিল তারা আমার খুব পুরোনো লোক। এরা সবাই মোটামুটি বিশ্বস্ত। কারণ, এরাই মূলত লেনদেনটা করে।
এদিকে শনিবার দুপুরে র্যাব-১ এর কার্যালয়ে সাংবাদিকরা এই ছিনতাই নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা যদি র্যাবের হন ছাড়া পাবেন না। অনেক সময় র্যাব-পুলিশের পোশাক পরে অনেকে অনেক অপকর্ম করছে তারাও পার পাবে না।
আমার বার্তা/এল/এমই