বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আজকে যদি শেখ হাসিনার পতন না হতো, শেখ হাসিনা যদি আজকে ক্ষমতায় থেকে যেতেন তাহলে আমাদের সবার ফাঁসি দিয়ে দিতেন। এই মহিলার কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই। এই মহিলা তার গদি, তার সিংহাসন রক্ষা করার জন্য কে বাঁচলো, কে মরলো, কখনোই গ্রাহ্য করেননি। যে মহিলা ক্ষমতায় থাকার জন্য ৫ বছরের শিশু আহাদকে হত্যা করতে পারে, যে মহিলা ১৪ বছরের একটি কিশোরকে ৪০টি গুলি করতে পারে, মুগ্ধের মতো একটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীকে গুলি করতে পারে, সে তো আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার কথা নয়।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার মানিকারচর এল এল মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মেঘনা উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমত, এই শিশুরা-কিশোররা তাদের অভিভাবকসহ যখন রাস্তায় নেমে এসেছে, অকাতরে জীবন দিয়েছে। সারা দেশের মানুষের রক্তের লৌহকণিকা জেগে উঠেছে। এই এক রাক্ষসী, এই এক দানব, তাকে বাঁচিয়ে রাখলে বাংলাদেশ শুধু নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, বাংলাদেশের ইজ্জত, সম্পদ আর থাকবে না। ওরা ঝাঁপিয়ে আসলো। ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণে আমরা আজকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। আমরা আজকে কিছুটা স্বস্তিতে জীবন যাপন করতে পারছি।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদেরকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও চর্চা করার জন্য অনেক কাজ করতে হবে। কোনো গড়িমসি দিয়ে গণতন্ত্রের মূল কাজগুলোকে বন্ধ রাখা চলবে না।
রিজভী বলেন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এদেশের ভোটাররা জানে কাকে ভোট দিতে হয়। সেই কারণে জনগণের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে শেখ হাসিনা একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দেননি। দিনের ভোট রাতে করেছেন। ভোটারদেরকে ভয় দেখানোর জন্য মাইকিং করে বিভিন্ন গ্রামে বলেছে যে আপনারা ভোট দিতে যাবেন না। সেসব প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ভোটে আমরা দেখলাম চতুষ্পদ প্রাণী ছাড়া ভোটকেন্দ্রের মাঠে কেউ নেই। এই পরিস্থিতি আমরা দেখেছি। ২০১৮ সালে বিএনপি যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল, ৩০ থেকে ৪০ জন বিএনপির গ্রেপ্তার করে ফেলল, মামলা দিয়েছে ঢালাওভাবে। এটা কী ছিল? এটা ছিল নির্বাচন নিয়ে একটি ছিনিমিনি খেলা। সে ছিনিমিনি খেলা শেখ হাসিনার সময় আমরা দেখলাম।
এই বিএনপি নেতা বলেন, জনগণের ক্ষমতা শেখ হাসিনা কেড়ে নিয়েছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে। তিনি মনে করতেন যে জনগণ তার শত্রুপক্ষ। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে সমস্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি এই সরকার জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
রিজভী বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার কারণটা কী আমি জানি না। তাহলে কি একটি রাজনৈতিক দল যাদের দমনপীড়ন করেছে শেখ হাসিনা, তাদের প্রতি আপনাদের কোনো আস্থা নেই? এখনকার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা। তার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে দিতে হবে। তাই পরবর্তী পর্যায়ে অন্য সকল নির্বাচন হবে। এটাতো পরীক্ষাও করতে হবে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। এটা দেখার জন্য তো আগে সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিলে তাহলে কি তারা বিশ্বাস করছেন না? তাহলে তো অবিশ্বাস থেকেই গেল। যে অবিশ্বাস শেখ হাসিনা সৃষ্টি করেছিলেন। যে অবিশ্বাসের বিরুদ্ধে এত লড়াই, এত সংগ্রাম। শেখ হাসিনা এত গুম করেছেন, এত খুন করেছেন, এত ক্রসফায়ার দিয়েছেন। সুতরাং সরকারের উচিত সব কিছুর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রাকে তরান্বিত করা।
মেঘনা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মো. ওয়াদুদ মুন্সীর সভাপতিত্বে ও মেঘনা উপজেলা যুবদল নেতা মাসুরুদ হক সরকারের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান সরকার, সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সী প্রমুখ।
আমার বার্তা/এমই