ই-পেপার বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের পদোন্নতি, দক্ষ ব্যাংকারদের বঞ্চনা

শাহীন আবদুল বারী:
২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৪১
আপডেট  : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:১২

বিপ্লবী সরকার আমলেও ব্যাংকিং খাতে দক্ষ, সৎ এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাননি। তাদেরকে বঞ্চিত করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের মহাব্যবস্থাপক থেকে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে । ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং ব্যাংকিং খাতের ঋণ কেলেঙ্কারির যারা মূল হোতা দুর্নীতির মাস্টারমাইন ঠিক তাদেরকেই এই পদোন্নতি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন বিজ্ঞ ব্যাংক বিশ্লেষণ। কোন প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়া দুর্নীতিবাজদের পদোন্নতি দেয়ায় ব্যাংকিং খাতে কাজের স্থবিরতা ও হতাশা বিরাজ করছে। অপর দিকে আওয়ামী দোসরদের মাঝে আসফালন দেখা দিয়েছে। আর বিগত ১৬ বছর যারা সুবিধা বঞ্চিত ছিলেন এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র ও তথ্যমতে,পদোন্নতিতে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিম্নবর্ণিত মহাব্যবস্থাগণকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে গত ১০ এপ্রিল ৯ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে যুগ্ম সচিব ফরিদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এই আদেশনামা প্রেরণ করা হয়। মহাব্যবস্থাপক থেকে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পদে পদোন্নতি প্রাপ্তরা হলেন, মোঃ রেজাউল করিম (সোনালী ব্যাংক পিএলসি), মোঃ রফিকুল ইসলাম (বেসিক ব্যাংক লিমিটেড), রুবানা পারভীন, (অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি), নূরুল হুদা (ইনভেস্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ), মোঃ নজরুল ইসলাম ( জনতা ব্যাংক পিএলসি), মোহাঃ খালেদুজ্জামান (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক), মোঃ আশরাফুল আলম (জনতা ব্যাংক পিএলসি), মোঃ নূরুন নবী (সোনালী ব্যাংক (পিএলসি) ও মোহাম্মদ শাহজাহান (সোনালী ব্যাংক পিএলসি)। এদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহজাহান বড়ো ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত। বিগত ১৬ বছর তিনি ছিলেন দুর্নীতির কারিগর। তার কারণে অসংখ্য ব্যাংকার পদোন্নতি ও নানাবিধ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ রেজাউল করিম, মোঃ আশরাফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শাহজাহানকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। যাদেরকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই ছিলেন পতিত সরকারের দোসর বা গোলাম। কৃষি ব্যাংকের মোহাম্মদ খালেদুজ্জামানকে পদোন্নতি দেয়ায় ব্যাংকটিতে কাজের স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিভিন্ন টেবিলে কানাঘুষা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কোন প্রকাশ যাচাই-বাছাই ছাড়া তাকে পদোন্নতি দেয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। খালেদুজ্জামান দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তি। একই অভিযোগ উঠেছে জনতা ব্যাংকের আশরাফুল আলমকে নিয়েও। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ জনতা ব্যাংক ইউনিটির সভাপতি ছিলেন।

জানা যায়, জনতা, সোনালী, কৃষি, অগ্রণী, রুপালি, পূবালী, বেসিক, ডিবিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন (রাকাব), বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ও আইসিবি ব্যাংকের যোগ্য, দক্ষ, সৎ নিষ্ঠাবান এবং অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বিগত ১৬ বছর পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তাদের বাদ দিয়ে দেশের আর্থিক খাতের কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে আওয়ামী দোসররা। তারা এখনো বীরদর্পে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দেয়া হচ্ছে পদোন্নতি ও নানাবিধ সুবিধা। একারণে ব্যাংকিং সেক্টরে হতাশা ও স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে ভুক্তভোগী মহল জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, অধিকাংশ পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা। দেখা হচ্ছেনা তাদের অতিত খতিয়ান। অনেক ক্ষেত্রে সিনিয়রদের টপকিয়ে জুনিয়ররা পদোন্নতি পেয়েছেন। যারা, আওয়ামী সরকার আমলে শত শত কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন তারাও পদোন্নতি পেতে কোন প্রকার বেগ পেতে হচ্ছেনা।

পদোন্নতি প্রাপ্তরা আওয়ামী লীগের অতি ঘনিষ্ঠজনঃ জানা যায়, যারা এবার জিএম হতে ডিএমডি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের মধ্যে নুরুন নবী আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে তিনি সোনালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। এ সময় শেয়ার বেচাকেনায় প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে।

দিনাজপুরের আওয়ামী বিচারপতি এনায়েতুর রহিম এবং সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের আপন কাজিন তিনি। আওয়ামী সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজ এমডি আতাউর রহমান প্রধানের সময় প্রাইজ পোস্টিং হিসেবে কলকাতায় চাকরি করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে সোনালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে শেয়ার কেলেংকারীর সাথে যুক্ত ছিলেন। রেজাউল করিম: বঙ্গবন্ধু পরিষদ সোনালী ব্যাংকের প্রেসিডিয়াম মেম্বার। কুমিল্লা হোমনা উপজেলার আওয়ামী লীগের সংগঠক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। লোকাল অফিসে জিএম হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বেক্সিমকো, ওরিয়ন গ্রুপে, বসুন্ধরা গ্রুপে ঋণ প্রদানে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে তাদের পক্ষে ঋণ প্রদানে অনুকূল ভূমিকা পালন করে ব্যাপক অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। খুলনার জিএম থাকাকালে পাট ঋণ নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার অনিয়ম করেছেন। এয়ারপোর্ট শাখার ম্যানেজার হিসেবে অবৈধ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি অন্তত ৩ থেকে ৪ শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

বর্তমান অন্তরবর্তী সরকারের সময় তিনি বদলি, পদোন্নতি ও নিয়োগ-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি নিজেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার স্ত্রীর ভাগ্নে আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিয়ে ব্যাংকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। সোনালী ব্যাংক এ সাম্প্রতিক বিপুল সংখ্যক পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে অযোগ্যদের পদোন্নতি পাইয়ে দিয়ে প্রচুর অর্থ লাভবান হয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

পদোন্নতির তালিকায় এক নম্বরে থাকা এই মো. রেজাউল করিম সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম মেম্বার পদ ব্যবহার করে তিনি একজন চরম দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি লোকাল অফিসের জিএম থাকাবস্থায় প্রচুর দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন যা সর্বজনবিদিত । তিনি পতিত সরকারের আমলে নিজেকে 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সন্তান ' দাবি করতেন এবং শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি তার মাথার কাছে না থাকলে নাকি তার ঘুমই হয়না মর্মে সব সময় সবার কাছে প্রচার করতেন। ৫ আগষ্টের পর থেকে তিনি একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার স্ত্রীর মামা পরিচয় দিতে শুরু করেন এবং তার অতীত সব পরিচয় ধামাচাপা দিয়ে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন।

নজরুল ইসলাম: প্রেসিডিয়াম মেম্বার, বঙ্গবন্ধু পরিষদ। রমনা কর্পোরেট শাখায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকালে ঋণ বিতরণ, সুদ মওকুফ ইত্যাদি কাজে অবৈধভাবে যুক্ত থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তাদের একাউন্ট এই শাখায়। গুরুত্বপূর্ণ সচিবদের ব্যবহার করে, নাম ভাঙ্গিয়ে সে বিভিন্ন অপকর্ম করেছেন।

মির্জা আব্বাসের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে মন্ত্রণালয়কে ব্যবহার করে বিপুল অংকের অর্থ ঘুষ প্রদান করে পদোন্নতি বাগিয়ে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পদোন্নতি তালিকার পাঁচ নম্বরে থাকা মো: নজরুল ইসলাম একজন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তিনি সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের একজন ঘনিষ্ঠ দালাল হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ সোনালী ব্যাংক শাখার একজন প্রেসিডিয়ান সদস্য হিসাবে ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসর হিসেবে দাপটের সাথে ব্যাংকে চলাফেরা করতেন। নিরীহ লোকদেরকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিতেন। তিনি ফেয়ার কেমিক্যাল প্রাইভেট লিমিটেড সংক্রান্ত একটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন। অভিযোগ নম্বর : দুর্নীতি দমনে কমিশন প্রধান কার্যালয় , ঢাকা সি/১/২০১৭(ব্যাংক)/ গাজীপুর/অনু/ বিশেষ-২ কালিয়াকৈর( গাজীপুর) থানার মামলা নম্বর২৯ তারিখ:১৩/০২/২০১৭ সুদ আসলে ঋণের পরিমাণ: ৩৭২২৩৩৯৬৮.১৫ টাকা। এছাড়াও উক্ত ঋণের বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রির ১.৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। উক্ত মামলায় প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি সরকারি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এবং বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে মামলা থেকে নিজের নাম কাটিয়ে নেন। জিএম শওকত আলী সহ চারজন নিরীহ মানুষকে এই মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। উক্ত ব্যক্তিবর্গ এখনো মিথ্যা মামলার ঘানি টেনে বেড়াচ্ছেন। এখন এই মামলার পুন:তদন্ত ও বিচার হওয়া খুব জরুরি বলে ব্যাংকের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী মনে করেন। প্রভাব মুক্ত নিরপেক্ষ তদন্ত হলে প্রকৃত অপরাধী হিসেবে নজরুল ইসলামের নাম উঠে আসবে। মোঃ শাজাহান: বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কর্পোরেট এর দায়িত্বে ছিলেন। তার আগে দিনাজপুরের জিএম ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখায় ওয়েজ আর্নার শাখা, শিল্প ভবন শাখা, লোকাল অফিস- এসবে ডিজিএম থাকাকালে ঋণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। রফিকুল ইসলাম: দীর্ঘ ২২ বছরের চাকুরী জীবনে ২০ বছরই আইটি রিলেটেড ডিপার্টমেন্ট ও প্রকিউরমেন্টে বিপুল পরিমান আইটি সামগ্রী কেনাকাটায় যুক্ত ছিলেন। এ সময় হাজার কোটি টাকার কেনাকাটায় তার নামে সরকারি বাণিজ্যিক অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তি রয়েছে। শাখা পর্যায়ে চাকরির কোনই অভিজ্ঞতা নাই। এই অনভিজ্ঞ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে পদোন্নতি বাগিয়ে নেয়। মো: আশরাফুল আলম, জিএম জনতা ব্যাংক ভবন কর্পোরেট ব্রাঞ্চ এ কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০২৪ এ বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০২৩ সালে আনন টেক্স এর সুদ মওকুফ এ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তিনি ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিলেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তার নাম অভিযোগ এর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। দুদক এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করার বিষয়ে নিষ্পৃহ ভুমিকা পালন করেন। পতিত হাসিনা সরকারের সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ এর অতি ঘনিষ্ঠজন, ডিএমডি পদে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত মোঃ খালেদুজ্জামান বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ঢাকা, ফরিদপুর ও প্রধান কার্যালয়ে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঋণ কেলেঙ্কারি, আর্থিক অনিয়ম, পদোন্নতি ও বদলী বাণিজ্য করার মাধ্যমে বিপুল অবৈধ বিত্তবৈভব এর মালিক হওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করে তা রহস্যজনক ভাবে শেষ করে দেয়। এছাড়া বি এফ আই ইউ, ডিজিএফআই ও এনএসআই এ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন আছে। যেখানে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিন্ডিকেট গড়ে কোটি কোটি টাকা ঋণ প্রদানে অনিয়ম এবং ঢাকায় বহু ফ্ল্যাট-বাড়ি অবৈধভাবে মালিক হওয়ার অভিযোগে জড়িত আছেন ।

আনুমানিক ৩ কোটি টাকা মূল্যের “বিশেষ কৃষি ঋণ” টাঙ্গাইলের মির্জাপুর শাখা থেকে মহেরা গ্রুপ নামে প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে । সিন্ডিকেট গঠন করে একাধিক প্রতিষ্ঠানে মোট ৫৬৫ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছে । ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফ্রি মার্কেটের নাম ব্যবহার করে ৫ কিস্তিতে মোট ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়, যেখানে মর্টগেজ সম্পত্তির নথিপত্র জাল বলে জানা গেছে । ঢাকার উত্তরা, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে অন্তত ১১টি ফ্লাট ও বহুতল বাড়ি অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ রয়েছে, যা ‘ঘুষের বিনিময়ে’ অর্জিত বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিনি ২০২৪ এর আগষ্ট হতে এ পর্যন্ত শত শত কর্মকর্তা কর্মচারীকে প্রাইজ পোস্টিং পাইয়ে দিয়ে এবং কয়েকশো অযোগ্য কর্মকর্তাকে অবৈধভাবে পদোন্নতি পাইয়ে দেয়ার সুযোগ দিয়ে অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন- অর্থমন্ত্রণালয়, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিষয়ে জানলেও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আমলে না নিয়ে তাকে পদোন্নতি দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক হতে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত ডিএমডি রুবানা পারভীন। শাখা পর্যায়ে যার কর্ম অভিজ্ঞতা নুন্যতম এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনায় যার দক্ষতা হাস্যকর। তিনি প্রিন্সিপাল অফিসার হতে এসপিও এবং এসপিও হতে এজিএম পদে পদোন্নতির সময় তৎকালীন ডিএমডি ড: নুরুল আলম তালুকদার এর ঘনিষ্ঠ অনৈতিক সহযোগী হয়ে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন, যা অগ্রণী ব্যাংকে এক বহুল চর্চিত বিষয়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বংসের অন্যতম কারিগর এবং অগ্রণী ব্যাংকের সবচেয়ে ঘৃণিত এমডি শামসুল ইসলাম এর অতি আপনজন ছিলেন এই রুবানা পারভীন। ঘুষ ও অবৈধ সুবিধা নিয়ে শত সহস্র টাকা ঋণ দিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি শামস উল ইসলাম। এই শামসুল ইসলাম ঋণ প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম যেমন করেছেন, তেমনি নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎপূর্বক বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন তিনি- যা দুদকে তদন্তাধীন আছে । তার এসব কু-কর্মের প্রশ্রয়দাতা ছিলেন এই রুবানা পারভীন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে গভীর ভাবে সম্পৃক্ত থেকে এই রুবানা পারভীন অগ্রণী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপনে এমডিকে অনুপ্রাণিত করে স্বৈরাচারী সরকার এর উচ্চমহলে ও এমডির প্রিয়ভাজনে পরিণত হন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এর বর্তমান সচিব বিগত স্বৈরাচারী সরকার এর আমলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর সচিব এর দায়িত্বে ছিলেন এবং উভয়ের সাথেই জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ এর সুসম্পর্ক থাকার সুত্রে সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ঘুষ দিয়ে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। পতিত সরকার আমলে অগ্রণী ব্যাংকে অসৎ, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের রাজত্ব ছিল। যার কারণে যেমন ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তেমনি মোট ঋণ এর ৪০% ই খেলাপি হয়েছে। এই রুবানা পারভীন পতিত সরকারের আমলে চরম সুবিধাভোগী থেকে ১৬ বছরে ৫টি পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন।

অভিযোগে প্রকাশ, যে ৯ জন ডিএমডি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন, এর মধ্যে অন্তত ৫ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্পোরেট ব্রাঞ্চে চাকুরীকালীন সময়ে (এজিএম, ডিজিএম এবং জিএম পদে) আর্থিক অনিয়ম এর গুরুতর অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর পরিদর্শন শাখা কর্তৃক পরিচালিত পরিদর্শনে / বিশেষ পরিদর্শনে এদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া অন্তত ৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ তদন্তাধীন আছে। এছাড়া বিএফআইইউ, বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তর, এনএসআই ও ডিজিএফআই এবং মন্ত্রণালয়ে এদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ দায়ের করা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে এসব দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার বলে বিজ্ঞ মহল মনে করেন।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় বারংবার জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে তথাকথিত মেনিপুলেটেড মেরিট লিষ্ট বানিয়ে, ভুল তথ্য উপস্থাপন করে মেরিট লিষ্টে ভুয়াভাবে নম্বর বাড়িয়ে বিগত ১৫ বছরে নিজেদের পছন্দের চরম দুর্নীতিবাজ লোকদের পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রতি বছর আইন বহির্ভূতভাবে একাধিকবার (সর্বশেষ এবারে ২ বার) নিজেদের তৈরীকৃত পদোন্নতি নীতিমালা নিজেরাই পরিবর্তন করে অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ও জুনিয়রদের পদোন্নতি প্রদানের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশ হাইকোর্ট ডিভিশনের রীট পিটিশন নং ২৮৯৬/২০২৩ এর ২৩/০৭/২০২৩ তারিখের জাজমেন্ট বিশ্লেষণ করলে এটা পরিষ্কার যে, একজন কর্মকর্তা নিয়োগকালীন সময়ে যে চাকুরীবিধি ও পদোন্নতি নীতিমালা তার জন্য প্রযোজ্য, পরবর্তী চাকুরী কালে চাকুরী বিধি ও পদোন্নতি নীতিমালা পরিবর্তন করা হলেও পরিবর্তিত নীতিমালায় পূর্ববর্তী নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়াদি উক্ত কর্মকর্তার জন্য প্রযোজ্য হবে না। পরিবর্তিত নীতিমালা নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। মন্ত্রণালয় এই জাজমেন্ট এর চুড়ান্ত ব্যত্যয় ঘটিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করেছে।

সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পতিত সরকারের দোসর ডিএমডি নজরুল ইসলাম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ডান্ডি ডায়িং মামলার বাদী এবং এই মামলায় সে তারেক রহমানকে কঠোর শাস্তি, দীর্ঘমেয়াদি জেল জরিমানার নির্দেশনা চেয়ে আদালতে প্রার্থনা করে। এই মামলায় খালেদা জিয়া, কোকোর স্ত্রী ও তার দুই মেয়েকেও আসামী করা হয়েছিল।

আমার বার্তা/এমই

আরও দুই হাজার কোটি টাকার শরিয়াহ বন্ড ছাড়ছে সরকার

রাজশাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণ প্রকল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে সরকার

বাংলাদেশ এখন আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়

বাংলাদেশ এখন আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ

শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে

দেশের  ডিএসই ও সিএসই উভয় বাজারে দরপতন হয়।শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে দেখা

গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা দিয়েছে হামদর্দ

বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি গাজা। ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রতিটি অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আরও দুই হাজার কোটি টাকার শরিয়াহ বন্ড ছাড়ছে সরকার

আজারবাইজানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চান প্রধান উপদেষ্টা

গুরুতর অভিযোগে সিটিটিসির সাবেক এডিসি ইশতিয়াক গ্রেপ্তার

ট্রফি জিতেই শুরু, কথা রেখেছেন হান্নান সরকার

ইন্টারপোলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির সিদ্ধান্ত

ঢাকার মূল সড়কে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না

গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধীর দুই কর্মীকে কোপাল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ

জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের মতো গাজাও ফিলিস্তিনের অংশ: এরদোগান

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর কারিগরি শিক্ষা হবে মূল বিষয়: ড. দেবপ্রিয়

অপকর্ম বন্ধ না করলে বিএনপিকেও ছুড়ে মারবে জনগণ: ফখরুল

কোম্পানির মুনাফার জায়গা গোখাদ্য হতে পারে না: ফরিদা আখতার

ভিসা সহজীকরণ নিয়ে বাংলাদেশ-আজারবাইজানের আলোচনা

বাংলাদেশ এখন আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়

পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে: আসিফ মাহমুদ

বিপদ বাড়াচ্ছে খোলা তেল, ভিটামিন সমৃদ্ধ প্যাকেজিংয়ের তাগিদ

শেষ সেশনে ব্যাটিং ধসে ৬৪ রানের লিড নিয়ে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ

গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র মান্নানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া

বাংলাদেশি সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান

শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে