২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ঋণনির্ভরতা একবারেই কমানো যাবে না বলে স্পষ্ট করলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের এবারের বাজেট কেমন হচ্ছে তার ধারণাও দেন এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেট খুব বড় হবে না। বিশেষ করে উন্নয়ন বাজেটের আকার বাড়বে না। উচ্চাভিলাষী কোনো চিন্তা আমাদের মাথায় নেই। বাস্তবভিত্তিক বাজেট তৈরির কাজ চলছে। যাতে অর্থের সংস্থানমূলক এবং বাস্তবায়নযোগ্য হয় সেই চিন্তা এবং পরিকল্পনা মাথায় রেখেই এডিপি তৈরির কাজ করা হচ্ছে।’
বাজেটে বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা নিয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘শুধু বৈদেশিক ঋণই নয়, দেশীয় ঋণও যাতে কম নিতে হয় সেই চেষ্টা থাকবে। তবে এক বাজেট দিয়ে তো আর পুরোপুরি সফল হওয়া সম্ভব নয়। আগামী অর্থবছরের বাজেট দিয়ে কাজটা শুরু করা হবে। এই ঋণনির্ভরতা একবারেই কমানো যাবে না। আমরা চেষ্টা করছি ধীরে ধীরে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার। তাই এর একটি প্রভাব থাকবে নতুন বাজেটে। এছাড়া অর্থ সংস্থানের প্রতিকূলতা এবং ব্যয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজেট ঘাটতি কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হবে আগামী অর্থবছরে।’
আগামী অর্থবছরের বাজেটে কোনো মেগা প্রকল্প হবে না জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘যেগুলো চলমান সেগুলোও যাচাই-বাছাই করে বাস্তবায়নযোগ্য অংশ চলমান রাখা হবে। ঢালাওভাবে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা হবে না। এরপরই প্রয়োজন অনুযায়ী চলতি মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি যেসব প্রকল্প আগামী অর্থবছরে সমাপ্ত করা হবে বলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে কমিটমেন্ট রয়েছে। সেগুলোতে পর্যান্ত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের বাজেটে নতুন করে রাস্তাঘাট তৈরিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বলতে গেলে বিদ্যমান রাস্তাসহ এ সংক্রান্ত অবকাঠামোগুলোর সংস্কার, সংরক্ষণ এবং প্রশস্তকরণসহ উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত থোক বরাদ্দ রাখা হবে। কেননা রাস্তা অনেক হয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো যদি চলাচলের উপযোগী রাখা না যায় তাহলে প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে না।’
আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা থাকবে জানিয়ে ড. মাহমুদ বলেন, ‘যাতে করে মূল্যস্ফীতির চাপ মানুষ বর্ধিত আয় দিয়ে সামলাতে পারে। আগামী অর্থবছরে যাতে মূল্যস্ফীতি কম থাকে সেজন্য অন্যান্য ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। গত বছর জুন-জুলাই মাসে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল এবার জুন-জুলাই মাসে এর চেয়েও অনেক কম মূল্যস্ফীতি থাকবে বলে আশা করছি।’
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমার আভাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে বরাদ্দ পর্যাপ্ত রাখা হবে। কিন্তু নতুন অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়বে না। যেসব অবকাঠামো বিদ্যমান আছে সেগুলো সচল করা এবং পরিচালন খাতে ব্যয় বাড়ানো হবে। অবকাঠামো তৈরি করে ব্যবহার না করাটা একটি বড় অপচয়। এজন্য অব্যবহৃত থাকা অবকাঠামোগুলো ব্যবহারযোগ্য করতে ব্যাপক প্রাধান্য দেওয়া হবে বাজেটে।’
দরিদ্রের হার বাড়তে পারে, বিশ্বব্যাংকের এমন শঙ্কার বিষয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এত বছরের বঞ্চনা এক বছরের বাজেট দিয়ে তো প্রতিকার সম্ভব হবে না। আমরা বঞ্চনা দূরীকরণের কাজের শুরুটা করে যেতে চাই। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ অনেকেই বলছে দারিদ্র্য হার বাড়বে। কিন্তু আমরা দেখতে চাই প্রকৃত অবস্থা কী, গত দু-তিন বছরে কতটুকু বেড়েছে এবং কী কারণে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। দারিদ্র্য কি কর্মসংস্থানের কারণে বেড়েছে, নাকি কৃষিপণ্যের দাম কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমার কারণে বেড়েছে, নাকি রোগবালাই বৃদ্ধির কারণে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ায় দারিদ্র্য বাড়ছে সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’
‘প্রকৃত কারণ না জানলে তো প্রতিকারের পন্থা বের করাটা কঠিন। এজন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে দ্রুত জরিপের একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনে বরাদ্দ থাকবে। প্রয়োজনে বাড়তি কর্মসূচির জন্য থোক বরাদ্দ থাকবে। সেটি খাতওয়ারি থাকবে, তবে দরকার হলে আমরা একটি খাত থেকে অন্য খাতে যেতে পারব সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যাপারে আমরা কোন কর্মসূচিতে বেশি গুরুত্ব দিতে পারব সেটির বরাদ্দ থাকবে নতুন বাজেটে-যোগ করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
আমার বার্তা/এমই