কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অসাধু মিলার সিন্ডিকেট মিল পর্যায়ে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম বাড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা। এতে পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়ায় খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ৫-৭ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে চাল কিনতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ (২৪ জুন) তথ্যমতে, সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত আছে ১৭ লাখ ১০ হাজার ৩৩ টন। এর মধ্যে চাল আছে ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৬ টন। ধান মজুত ২ লাখ ৭ হাজার ৯৮৩ টন। আর গম আছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯ টন।
বুধবার নওগাঁ, দিনাজপুরসহ কয়েকটি স্থানে মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০০ টাকা, যা ২০ দিন আগেও ৩৫০০-৩৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নাজিরশাল ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২০০০, যা আগে ১৮০০ টাকা ছিল। বিআর২৮ জাতের চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৯০০ টাকা, যা ১৩ দিন আগেও ২৭০০ টাকা ছিল। এছাড়া মোটা জাতের চালের মধ্যে স্বর্ণা ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৭০০, যা ১৩ দিন আগে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর পাইকারি আড়তে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৩৯০০ টাকা, যা ২০ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৩৬০০ টাকা। ২৫ কেজি বস্তার নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ২১৫০, যা আগে ১৯৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি ৫০ কেজির বস্তা বিআর২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২৯৫০, যা ১৭ দিন আগেও ২৭৫০ টাকা ছিল। এছাড়া স্বর্ণা জাতের মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৭৫০, যা আগে ২৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বোরোর ভরা মৌসুমে সব ধরনের চালের দাম কমার কথা। কারণ, কৃষকের মাঠের ধান চাল হয়ে বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। কিন্তু মিলাররা সিন্ডিকেট করে কৃষকের সব ধান কিনে নিয়েছেন। কৃষকের কাছে এখন ধান নেই। তাই তারা ধানের দাম বাড়তি অজুহাত দেখিয়ে বস্তায় ৩০০-৩৫০ টাকা বাড়িয়ে মিল পর্যায়ে চাল বিক্রি করছেন। ফলে পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এতে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে। মৌসুমেও ক্রেতা বাড়তি দরে চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভালোমানের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৮৫-৮৭ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৮০ টাকা। মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, যা আগে ৭৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি কেজি নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা, যা ১০ দিন আগে ৮৫ টাকা ছিল। বিআর ২৮ ও পাইজাম চাল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা, যা আগে ৬০ টাকা ছিল। সঙ্গে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা, যা ঈদের আগে ৫৫ টাকা ছিল।
রাজধানীর মালিবাগ খুচরা বাজারে চাল কিনতে আসা জোবায়ের হাসান জানান, প্রতিবছর এ সময় নতুন চাল বাজারে আসে। এবারও নতুন চাল এসেছে, দাম কমবে; কিন্তু না কমে কেজিপ্রতি ৭ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এক কেজি চাল যদি ৯০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়, তাহলে বাজারে অন্য পণ্য কী দিয়ে কিনব। তিনি জানান, বাজারে তদারকি নেই। ফলে বিক্রেতারা আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তার পকেট কাটছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বোরো মৌসুমে চালের দাম কখনোই বাড়ার কথা না। চালের দাম বাড়লে সব শ্রেণির মানুষের সমস্যা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে কষ্টে থাকেন নিম্ন-আয়ের মানুষ। তাই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে তদারকি জোরদার করতে হবে।
আমার বার্তা/জেএইচ