বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বুয়েটের আবরার ফাহাদ, আবু সাঈদসহ হাজারের ছাত্রের রক্তের বিনিময়ে আজকের নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তারা বাংলাদেশের একনায়ক তন্ত্রবাদ ও ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু ইউজিসিতে দেখছি এখনো ফ্যাসিজমের দোসররা বহাল তবিয়তে আছেন। তাদের কারণে বিগত সরকারের হাতে নির্যাতিত ও নিপীড়িত কর্মকর্তাদের সামনে বা মূল পদে আনতে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত ডিগ্রি নিয়ে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সনদ সত্যায়ন শীর্ষক এক কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, ফেসবুকে পোস্ট করার কারণে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আবু সাইদসহ ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৫০০ বেশি শহীদ হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি সমবেদনা জানাই। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। আমরা কমিশনের এই চেয়ারে আসতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বিগত সরকার বিভিন্ন দপ্তরে নিজেদের পছন্দের লোক বসিয়ে ফ্যাসিজম কায়েম করে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। তাদের পছন্দের লোক বসিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের ওপর ফ্যাসিজম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। কিন্তু হাজারও বেশি ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, আমাদের ভুল বা অদূরদর্শীতার কারণে যেন ফ্যাসিজম আবার ফেরত না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিগত সরকারের সময় যারা স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করেছে তাদের অনেকেই এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। অন্যদিকে যোগ্যতা থাকার পরও শুধু ফ্যাসিজম বিরোধী হওয়ায় ভালো পদায়ন ও পদোন্নতিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাদের এখনো মূল পদে আনতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনটা হলে কমিশনের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
ইউজিসির এই সদস্য বলেন, জুলাই আন্দোলনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ স্পিরিট। সেটা নষ্ট করতে কাজ করতে ফ্যাসিজমের দোসররা। সাত কলেজ নিয়ে যে আন্দোলনটা হচ্ছে সেটাতে তাদের মুভমেন্ট থাকতে পারে, এমনটা উড়িয়ে দিতে পারি না। সেজন্য জুলাই স্পিরিটের সঙ্গে যার আদর্শিক মিল আছে এমন ব্যক্তিদের কমিশনে পদায়ন করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, এটা করতে ব্যর্থ হলে দেশের পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে আবার ফ্যাসিজমের লোকজন বহাল থাকবে এবং নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করবে। এতে দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা বাড়বে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, আগের সরকারের সময়ে ইউজিসিতে যে প্রশাসন ছিল তা সরিয়ে অনেক জায়গায় ঢেলে সাজানো হয়েছে। কিন্তু ইউজিসিতে তা করা হয়নি। যার ফলে কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে একটা হুমকির মুখে পড়তে পারে ইউজিসি। তাই ইউজিসিকে ঢেলে সাজাতে হবে।
তিনি বলেন, যারা বঞ্চিত তাদের মেইনস্ট্রিমে আনা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে, কমিটির কাজ শেষ হলে ইউজিসি সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। বিশেষ অতিথি ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খোন্দকার, ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। ইউজিসির আইএমসিটি পরিচালক মো. ওমর ফারুখ এতে সভাপতিত্ব করেন।
আমার বার্তা/এমই