আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজারের বেশি মানুষ ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। মারাও যায় অনেকে, তবে যারা বেঁচে থাকে তাদের হারাতে হয় দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হারও।
চিকিৎসকেরা বলছেন, স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালীর লসিকা (কোষ-রস) ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার।
>> ব্রেস্ট ক্যান্সার লক্ষণ
★ স্তনের কোন অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোন লিম্প দেখা যাওয়া।
★ স্তনের উপরের ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, অনেকটা কমলালেবুর খোসার মতো।
★ স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন।
★ স্তনবৃন্ত ভেতরে ঢুকে থাকা, অ-সমান বা বাঁকা হয়ে থাকা।
★ স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া।
★ স্তনবৃন্তের আশে-পাশে র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া অথবা র্যাশ ছাড়াও চুলকানির মতো অনুভূতি হওয়া।
★ বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া।
★ স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া।
★ স্তন এর ত্বকে লালচে, ক্ষত,ফোলাভাব দেখা দেয়া।
★ কাঁধ এবং ঘাড়ের ব্যথাও ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
>> ব্রেস্ট ক্যানসারের কারণ
স্তনের অস্বাভাবিক কোষগুলি বিভাজিত হলে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়। গবেষণা বলছে যে, বেশ কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকির কারণ রয়েছে যা স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এই ঝুঁকির কারণগুলি হলো-
★ বয়স- ৫৫ এর বেশি বয়স হলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
★ লিঙ্গ- সাধারণত মহিলাদের মধ্যে বেশি।
★পারিবারিক ইতিহাস এবং জেনেটিক্স- যদি বাবা-মা, ভাই-বোন, শিশু অথবা অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের এই জাতীয় রোগ থাকে, তবে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়।
★ ধূমপান- তামাক ব্রেস্ট ক্যান্সার সহ অনেক ধরনের ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
★ অ্যালকোহল ব্যবহার- অ্যালকোহল সেবনের ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
★স্থুলতা- ব্রেস্ট ক্যান্সারের পাশাপাশি স্থুলতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের পুনরাবৃত্তির ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
★রেডিয়েশন এক্সপোজার- যদি আগে, বিশেষ করে মাথা, ঘাড় বা বুকে রেডিয়েশন থেরাপি নেওয়া হয়, তাহলে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
★হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি- যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ব্যবহার করেন, তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
>> ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা
ব্রেস্ট ক্যান্সার হল একটি মারাত্মক ব্যাধি। তবে ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে যদি চিকিৎসা করানো হয় তাহলে এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু যদি সময় মতো চিকিৎসা না করানো হয় তাহলে ক্যান্সার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।এর ফলে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট-এ ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সফলতা আশা করা যায়। হোমিওপ্যাথি লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। রোগ ও পারিবারিক ইতিহাস এবং বর্তমান সমস্যা জেনে হোমিও ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হলে ব্রেস্ট ক্যান্সার ভাল হবে আশা করা যায়।
লেখক: ডি.এইচ.এম.এস. (ঢাকা), সিনিয়র কনসালটেন্ট- চিকিৎসক ও হোমিওপ্যাথিক গবেষক। চেম্বার- ৪৭, ফরচুন শপিং মল (পঞ্চম তলা), মৌচাক মোড়, মালিবাগ, ঢাকা।
আমার বার্তা/ডা. এ্যমিলা ফেরদৌস/এমই