এক মাসের দীর্ঘ সিয়াম শেষে সামনে ঈদ। আর দীর্ঘ সংযমের পরে স্বভাবতই ঈদের দিন আমাদের প্রত্যেকের ভালো-মন্দ কিছু খেতে ইচ্ছা করে। আর এই ইচ্ছেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় আমাদের শরীরের জন্য, পেটের জন্য। সিয়াম পালনকারী মুসলিমদের একটা বড় অংশই এদিন নানা রকম পেটের সমস্যায় ভোগেন। বদহজম, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা কিংবা বমি, সাথে কারো কারো গ্যাসের সমস্যার কারণে পেটের অস্বস্তিতে কষ্ট পান। সেসব কিছু সমস্যা থেকে মুক্তি এবং প্রতিরোধ নিয়ে আজকের আলোচনা।
সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য নিচের নিয়মসমূহ পালন করতে চেষ্টা করতে পারেন:
এরপরও অনেক চেষ্টার পরেও আমরা নানা সমস্যায় ভুগি। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে বদহজম।
বদহজম বা গন্ধ ঢেঁকুর হলে হাতের কাছে Syp. Pink Bismol বা Syp. Peptocid রাখতে পারেন। চার থেকে ছয় চা চামচ আধা ঘন্টা পর পর সমস্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে। তবে অবশ্যই সারাদিনে ৮ বারের বেশি খাওয়া যাবে না। আর এটা খেলে পায়খানা কালো হতে পারে, ভয় পাবেন না। আপনার নিয়মিত কোন ওষুধ থাকলে সেটা খাবেন এই ওষুধ খাওয়ার দু ঘন্টা পরে।
ববি ভাব বা বমি হলে Tab. Emistat জাতীয় বমির ওষুধ খেতে পারেন। প্রতিবার বমির জন্য দুই গ্লাস করে ওরস্যালাইন খাবার চেষ্টা করুন। আগে বমির ওষুধ খেতে হবে, এর আধা ঘন্টা বা ৪০ মিনিট পরে ওরস্যালাইন খাওয়া শুরু করবেন।
হালকা পেটব্যথা থাকলে Tab. Timozin জাতীয় এন্টিস্পাসমোডিক ওষুধ কাজে লাগতে পারে।
পাতলা পায়খানা হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি জাতীয় খাবার খেলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে যাবেন। এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নাই।
প্রতিবার পাতলা পায়খানার জন্য দুই গ্লাস করে ওরস্যালাইন খাবেন। এ সময় সহজপাচ্য খাবার গুলো খাবার চেষ্টা করুন, যেমন জাউভাত, চিড়া, কলা ইত্যাদি।
যারা ওরস্যালাইন খেতে পারেন না তারা ডাবের পানি, বাসার তৈরি লবণ চিনির শরবত, বাজারে কিছু স্পোর্টস ড্রিঙ্কস পাওয়া যায় সেগুলো কিংবা SMC প্লাস ইলেক্ট্রলাইট ড্রিঙ্কস খেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে প্রতিবার পায়খানা বা বমির জন্য 500ml বা দুই গ্লাস খেতে হবে।
খাবার পরে যাদের পেট ফুলে যাচ্ছে বা গ্যাস হচ্ছে মনে হচ্ছে তারা উপসর্গ হলেই Syp. Gavilac M, চার চামচ করে খেয়ে নিবেন। দিনে চারবার পর্যন্ত এটা খেতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে, এটা খেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
তীব্র পেট ব্যথা, জ্বর, দুর্বলতা, পেট অত্যধিক ফুলে যাওয়া, শরীর ব্যথা কিংবা শরীরে লবণের ঘাটতি দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
সংযমের মাস শেষে অসংযমিক খাবারদাবার আমাদের কষ্টের কারণ, বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এ দিনটা একটু সাবধানে চলতে পারলে আমরা ঈদের খুশিটা আনন্দের সঙ্গে পার করতে পারব আশা করি।
লেখক: এম বি বি এস, এমডি (হেপাটোলজি), এফ আর সি পি (গ্লাসগো) সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
আমার বার্তা/ডা.এ বি এম শাকিল গনি/এমই