সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্লু টিক (ভেরিফায়েড ব্যাজ) পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নতুন কিছু নয়। ব্যক্তিত্ব, ব্র্যান্ড এবং প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের পরিচিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য ফেসবুকে এই ব্লু টিক পেতে চায়। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রতারণার কৌশল
এই চক্রটি ফেসবুকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ফেক প্রোফাইল এবং ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে থাকে। তারা দাবি করে যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিলে সহজেই ব্লু টিক পাওয়া যাবে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নামে নকল অ্যাকাউন্ট খুলে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে এবং তারপর সাধারণ ব্যবহারকারীদের ফাঁদে ফেলে।
এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে তারা ভুয়া ইমেইল এবং কাস্টমার সার্ভিস নামধারী মেসেজের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা টাকা পাঠানোর পর আর কোনো যোগাযোগ পায় না, এমনকি কখনো কখনো তাদের অ্যাকাউন্টও হ্যাক হয়ে যায়।
প্রশাসনের নীরবতা ও আইনি ব্যবস্থা
অপরাধীদের এমন দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকলেও প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। যদিও কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগে মামলা করা হয়েছে, তবে প্রতারক চক্র বেশ কৌশলী হওয়ায় তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ আইন থাকলেও একে বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক ঘাটতি। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ জানালেও তা তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায় না।
ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা
রাজধানীর এক ব্যবসায়ী, মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, "আমি একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্টের কাছ থেকে ব্লু টিক পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছিলাম। ৫০,০০০ টাকা পাঠানোর পর সে আমাকে ব্লক করে দেয়। এখন আমি বুঝতে পারছি, এটি একটি প্রতারণা।"
এমন ঘটনা শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক ফ্রিল্যান্সার, উদ্যোক্তা ও তরুণ উদ্যোক্তারা এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
কীভাবে বাঁচবেন প্রতারণা থেকে?
১. ফেসবুকের অফিসিয়াল পদ্ধতি অনুসরণ করুন : ফেসবুকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ব্লু টিকের জন্য আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। কোনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আবেদন করলে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. অজানা লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন : প্রতারকরা সাধারণত সন্দেহজনক লিঙ্ক পাঠিয়ে থাকে, যা ক্লিক করলেই তথ্য চুরি করতে পারে।
৩.বিশ্বস্ত সূত্র ছাড়া লেনদেন করবেন না : ফেসবুকের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সরাসরি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ করে থাকে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাবি করলে তা যাচাই করুন।
৪. সন্দেহজনক কার্যকলাপ পুলিশ ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে জানান। প্রতারণার শিকার হলে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ফেসবুক ব্লু টিক প্রতারণা এখন বড় ধরনের সামাজিক ও ডিজিটাল নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানো না গেলে প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে। তাই, প্রতিটি নাগরিকের উচিত কোনো ধরনের লোভনীয় অফারে প্রলুব্ধ না হয়ে নিরাপদ অনলাইন ব্যবহার নিশ্চিত করা।
আমার বার্তা/এমই