জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে রাজধানীর চাঁনখারপুলে আনাসসহ ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় পলাতক চারজনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৪ জুন) একটি বাংলা দৈনিক ও একটি ইংরেজি দৈনিকে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বলা হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে তারা হলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
মঙ্গলবার (৩ জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিন আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর শহিদুল ইসলাম সরদার।
এর আগে, এদিন বেলা ১১টায় এই মামলায় কারাগারে থাকে চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন- শাহবাগ থানার ওসি অপারেশন মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
চাঁনখারপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করে গত ২১ এপ্রিল চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।
তদন্তে উঠে এসেছে, পলাতক আসামি হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য আসামিরা ঘটনাস্থলে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন অথবা তা তত্ত্বাবধান করেছেন। তারা অধীনস্থদের নির্দেশ প্রদান, সহযোগিতা ও সহায়তার মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটনে ভূমিকা রাখেন।
এ ছাড়া তারা এসব অপরাধ সংঘটন থেকে অধীনস্থদের বিরত রাখেননি বা পরবর্তী সময়ে কোনো ব্যবস্থাও নেননি। এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর জানান, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী মোট ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সংযুক্ত আছে ১৯টি ভিডিও, ১১টি পত্রিকার প্রতিবেদন, ২টি অডিও, ১১টি বই ও রিপোর্ট এবং ছয়টি মৃত্যু সনদ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ২৫ মে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন।
ওইদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করেন। বিস্তারিত শোনার পর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার কারণ রয়েছে। তাই তা আমলে নেওয়া হলো।
পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হলো। ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়। ফরমাল চার্জের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিচারের জন্য আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার মাধ্যমে একটি বিচারপ্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।
আমার বার্তা/জেএইচ