আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৭ কোটি বই কম ছাপা হবে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে আগামী বছর মোট বইয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩৩ কোটি। চলতি শিক্ষাবর্ষে ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুযায়ী দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সাড়ে ৫ কোটি বই ছাপানো হয়। আগামী শিক্ষাবর্ষে আগের মতো নবম-দশম শ্রেণির বই একসঙ্গেই হবে।
২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপার টেন্ডার আগামী মাসেই শুরু হচ্ছে। গতবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার ছাপাখানাগুলোর সক্ষমতার চেয়ে বেশি বই ছাপানোর কাজ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। অনেক ছাপাখানার মালিক সক্ষমতার চেয়ে বেশি পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ পেয়েছিল ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে। এ কারণে সঠিক সময়ে পাঠ্যবই বিতরণে বিলম্ব হয়েছিল।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, সব ছাপাখানার সক্ষমতার রিপোর্ট তাদের কাছে রয়েছে। যার যে সক্ষমতা, তার ৮০ শতাংশ কাজ দেওয়া হবে। এছাড়া নতুন সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে কোনো প্রেস একটি ওয়েব মেশিন নিয়ে এনসিটিবির দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। কমপক্ষে দুটি ওয়েব মেশিন থাকতে হবে।
পেপার মিলের সঙ্গে চুক্তির কাগজ জমা দিতে হবে। থাকতে হবে অটো-বাইন্ডিং সক্ষমতাও। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের বিনা মূল্যের পাঠ্যবই চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বই ছাপানোর জন্য বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) চূড়ান্ত হয়েছে। স্পেসিফিকেশন কমিটির কাজ শেষ হয়েছে। টেক কমিটির কাজও শেষের দিকে। টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরি হয়ে গেছে। মাঠপর্যায় থেকে চাহিদা চেয়েছে এনসিটিবি। প্রয়োজনীয় কিছু পরিবর্তন-পরিমার্জন করে আগামী মাসেই বই ছাপার দরপত্র আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
এছাড়া চলতি শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাধ্যতামূলক থাকা তিনটি বই আগামী শিক্ষাবর্ষে ‘অপশনাল’ হয়ে যাচ্ছে। এই তিন শ্রেণিতে তিনটি বিষয়ের পরিবর্তে যে কোনো একটি বিষয় পড়লেই হবে। এর ফলে তিন শ্রেণিতেই বইয়ের সংখ্যা কমছে। এ বিষয়ে এনসিটিবির বিতরণ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন—ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে চারু-কারু, শারীরিক শিক্ষা এবং কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা এই তিনটি বই বাধ্যতামূলক ছিল।
আগামী বছর এসব বই অপশনাল হয়ে যাবে। এর সঙ্গে কয়েকটি সাবজেক্ট (বিষয়) আছে, যেমন—কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য, সংস্কৃত ও পালি, আরবি ও সংগীতসহ মোট ৯টি সাবজেক্টের মধ্যে যে কোনো একটি পড়তে হবে; অর্থাৎ প্রতি শ্রেণিতে তিনটি করে বই কমবে।
এছাড়া চলতি শিক্ষাবর্ষের বই ছাপা শুরুর আগে গত বছর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা অতিরিক্ত চাহিদা দিয়েছিল। আগামী শিক্ষাবর্ষে বইয়ের সংখ্যা সঠিক করার লক্ষ্যে এনসিটিবির নিজস্ব তথ্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) এবং শিক্ষা বোর্ডগুলোর মাধ্যমে পাওয়া চাহিদার তথ্যের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করা হবে। এতেও বইয়ের সংখ্যা অনেক কমবে বলে মনে করেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
এদিকে আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপা, বিতরণ এবং ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (টিএপি) অনুমোদনবিষয়ক এক সভা গত ৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের সভাপতিত্ব করেন। সবাই বই ছাপার বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে, ৭ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ৮ অক্টোবরের মধ্যে, ৮ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ১৫ অক্টোবরের মধ্যে, ৯ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ২৭ অক্টোবরের মধ্যে এবং ইবতেদায়ি সব শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ৫ নভেম্বরের মধ্যে সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমানে এনসিটিবির নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই। সম্প্রতি অবসরে গেছেন এতদিন চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান। বর্তমানে চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন সংস্থাটির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ে বিভিন্ন সময় নানান অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে কাগজের মান নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়। সরকার নির্ধারিত কাগজে মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা যাতে পাঠ্যবই ছাপতে বাধ্য হন, সেই কারণে কাগজে জলছাপযুক্ত পাঠ্যবই ছাপার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
২০২৬ সালের পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে জলছাপযুক্ত অফ-হোয়াইট কাগজে সব বই ছাপার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠক করে এনসিটিবি। বেশির ভাগ মুদ্রণপ্রতিষ্ঠান জলছাপযুক্ত কাগজে বই ছাপার পক্ষে মতামত দেয়। তবে আপত্তি ওঠে কাগজকলগুলোর পক্ষ থেকে। পালটাপালটি মতের প্রেক্ষিতে বিষয়টি এখানো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
আমার বার্তা/এল/এমই