ই-পেপার শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
দুর্যোগে মানবিক প্রাণের মোহনায়

দায়িত্ব-কর্তব্যের অত্যুজ্জ্বল উদাহরণ সশস্ত্র বাহিনী

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান:
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:১২
আপডেট  : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:২০

ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে হঠাৎ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলার বাসিন্দাদের ওপর নেমে আসে বন্যা নামের দুর্বিষহ এক যন্ত্রণা। বানের পানিতে ডুবে যায় বাড়িঘর, পাড়া, গ্রাম ও ইউনিয়ন। পড়তে হয় ভয়ানক এক পরিস্থিতিতে। পানির তোড় ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব স্বপ্ন-সাধ। স্বজন হারানোর কান্না আর আহাজারি; শুধুই বাঁচার আকুতি। জীবন বাঁচাতে হাজার হাজার মানুষ বাড়ির ছাদে, টিনের চালে আশ্রয় নেন। খাদ্য, নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, ওষুধ, বিশ্রাম, কাপড়ের অভাবে সেখানকার জনজীবনে নেমে আসে মানবিক বিপর্যয়। এমন বিপর্যয়ে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারে, জীবন রক্ষায় কোমর বেঁধে নেমে পড়ে দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে উদ্ধার, ত্রাণ তৎপরতা ও পুনর্বাসনে সামনের কাতারে এসে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

কারও চোখে ছিল না ঘুম। সবার মাঝে এক চিন্তা-কীভাবে বানভাসি মানুষকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করা যায়। জেগে উঠে বাংলাদেশ। মানবিকতার অনন্য নজির, অভূতপূর্ব ঐক্য ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। দেশপ্রেম আর সর্বজনীন কল্যাণবোধের মানবিক গুণে উদ্ভাসিত হয়ে সৌহার্দ্য, সহানুভূতি, চিন্তাশীলতা আর ন্যায়বোধকে দেদীপ্যমান করেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। কেবলমাত্র বস্তুগত সহায়তা নয়, এক অনন্য আন্তরিক-মানবিক সংযোগও তৈরি করেন তাঁরা। দায়িত্ব-কর্তব্যের দৃঢ় বন্ধনে শুধু মানুষের প্রয়োজনে একজন মানুষ হিসেবে বাড়িয়ে দেয় গভীর সহানুভূতির হাত। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে নিরাপদে উদ্ধারের পাশাপাশি অভুক্ত মানুষের আহারের বন্দোবস্ত কিংবা বেঁচে থাকা মানুষকে সান্ত্বনা সবই ছিল তাদের প্রাত্যহিক দিনলিপিতে। সহমর্মিতা, মানবিক প্রাণের মোহনায় ঝরঝরে ছন্দের উদার মনোভাব হয়ে ওঠে উজ্জীবিত জীবনের সঞ্জীবনী। হাতে হাত মিলিয়ে তাদের প্রগাঢ় আন্তরিকতা-সহযোগিতায় ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে রক্ষা পেয়েছে অনেক প্রাণ। মানব মানসে জুগিয়েছেন অনি:শেষ প্রেরণা।

ঐক্যই দুর্যোগ-দুর্বিপাক থেকে বিপদগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধারের প্রধান শক্তি। দুর্যোগ–দুঃসময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়ানোর মহৎ গুণটি দেশপ্রমী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী রপ্ত করেছেন নিজেদের পথচলার শুরুতেই। দুর্যোগে জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়া, সহানুভূতি ও সাহসিকতার নিদর্শন অতীতেও দেখেছেন সবাই। দেশ বহুবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিবারই বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। সিডর, আইলা থেকে শুরু করে করোনা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, অগ্নিকাণ্ড কিংবা ভবনধস এমনকি মহামারির সময় সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সাধ্যানুযায়ী মানবিক কাজে সক্রিয় থেকেছেন। জনগণের পাশে থেকে সবাই মিলে দুর্যোগ অতিক্রম করে কার্যকর অবদান রেখেছেন জীবনের বুনিয়াদ অব্যাহত রাখতে। হয়ে ওঠেছেন দুর্যোগে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভরসার নাম।

বন্যার দগদগে ক্ষত নিজের দৃষ্টিতে অবলোকন করতে মানবিকতার চিরায়ত দর্শন আর মূল্যবোধের অনুশীলনে জনসাধারণের সঙ্গে নিজ বাহিনীর সদস্যদের ঐক্যের ঐকতান রচনা করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বন্যার্ত এলাকায় তাঁর সুদীপ্ত পদচারণা, আবেগ-অনুভূতির দ্যোতক বানভাসীদের হৃদয়ের উন্মুক্ত আঙিনাকে স্পর্শ করে গভীরভাবে। একাধিকবার তিনি দুর্গত এলাকায় ছুটে গিয়ে সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি উদ্ধার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন। নেতৃত্বের সৌকর্যে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন নিজ বাহিনীর সদস্যদের। পরিচালনা করেছেন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প।

একইভাবে বানভাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের অনবদ্য মেলবন্ধনে হৃদয় দিয়ে হৃদয় ছোঁয়ার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। মানবিক মূল্যবোধের জ্যোতির্ময়তায় তাঁরা নিজ নিজ বাহিনীর উদ্যোগে বিতরণ করেছেন খাবার, কাপড় ও শিশু খাদ্য। একাধিকবার বন্যার্তদের দুয়ারে ছুটে গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। হাতে তুলে দিয়েছেন ত্রাণ। বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে করেছেন মেডিকেল ক্যাম্প। আশ্বাস দিয়েছেন পুনর্বাসনেরও।

গত শনিবার (৩১ আগস্ট) আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী উদ্ধার, ত্রাণ কার্যক্রম ও চিকিৎসা সেবা ত্বরান্বিত করতে ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়িয়ে বর্তমানে বন্যা কবলিত এলাকায় সেনাবাহিনীর ৩০টি, নৌবাহিনীর ২টি, বিমান বাহিনী ১টি এবং কোস্ট গার্ডের ২টিসহ সর্বমোট ৩৫টি ক্যাম্প মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমানে ২ হাজার ৭৭৮ জন সদস্য, ৯৮টি বোট ও ৯টি হেলিকপ্টার এর মাধ্যমে উদ্ধার, ত্রাণ কার্যক্রম ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। পরদিন রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৩টি ফিল্ড হাসপাতাল ও ১৯টি মেডিকেল টিম, ১টি সেনা ক্লিনিক বন্যা দুর্গতদের নিরলসভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় (০১ সেপ্টেম্বর) সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল টিম, ফিল্ড হাসপাতাল ও সেনা ক্লিনিক এর মাধ্যমে ৯ হাজার ৮৫৭ জনকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ওইদিন ৪৮ জন বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার, ৫২ হাজার ৫১৫ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী এবং ৪৫০ জনকে রান্না করা খাবার বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়। একই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ২০ হাজার পিস পোশাক ও ৮ কার্টুন ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। এসময় সশস্ত্র বাহিনী ১০টি হেলিকপ্টার সর্টির মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। আইএসপিআর বলছে, ওইদিন পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল টিমগুলো বন্যাদুর্গত এলাকায় ৪২ হাজার ১১৩ জনকে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছে। অন্যদিকে, বিজিবি সদর দপ্তর জানায়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এখন পর্যন্ত বন্যাদুর্গত এলাকার ২ হাজার ৯১৪ জনকে উদ্ধার; ৬৩ হাজার ৭১৪টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ প্রদান করা হয়েছে ২৩ হাজার ৩১১ জন রোগীকে।

সশস্ত্র বাহিনী দেশের গর্ব ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর গৌরব শুধুমাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় দেশেও সমানভাবে অবদান রেখে চলেছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশকেই সম্মানিত করেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে শুধু সেসব দেশে শান্তি ফিরিয়েই আনেনি, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রসহ পুনর্বাসন ক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সদা প্রস্তুত রেখেছেন নিজেদের। পরিবর্তিত বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতা, উৎকর্ষ সাধনের দিকে নিবিড়ভাবে মনোনিবেশ করেছেন। প্রমাণ করেছেন শান্তিতে-সমরে সবখানেই তাঁরা অনন্য। #

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সন্ধানী বার্তা ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক; কালের আলো.কম

আমার বার্তা/এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান/এমই

বিদায়ী সরকারের ষড়যন্ত্র দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার অন্তরায়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে ঠিকই কিন্ত তাদের ষড়যন্ত্র বহাল রয়েছে।বিদায়ী সরকারের নেতা-কর্মীদের

আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত সংকট ও সম্ভাবনা

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে একের পর এক জয়ের

অধিক রেমিট্যান্স অর্জনে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত অভিবাসীর বিকল্প নেই

প্রতি বছর ১৮ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সকল সদস্যভূক্ত দেশে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের

বিভিন্ন দেশে শীতকালে আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাব

মেরু এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে শীতকাল বছরের শীতলতম ঋতু। এটি শরতের পরে এবং বসন্তের আগে আসে।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কমলনগরে জামায়াতের লরেন্স ইউনিয়ন কর্মী সম্মেলন

ব্রাহ্মণপাড়ায় ট্রাক্টরের চাপায় কলেজ ছাত্রের মৃত্যু আহত ২

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের

রাজধানীতে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল যুবকের

বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের উদ্যোগে সেমিনার

গজারিয়ায় একাধিক মাদ্রাসা ও এতিমখানায় শীতবস্ত্র বিতরণ

সাকিব ও তামিমের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলা নিয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি

এ বছর ১৫০ জনের বেশি টিভি সাংবাদিক চাকরিচ্যুত

পাকিস্তান থেকে দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে আবার এলো সেই জাহাজ

স্মৃতিস্তম্ভে জুতা পরে হিরো আলমের টিকটক, ভিডিও ভাইরাল

এশিয়াকাপ জয়ীদের জন্য বড় অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা বিসিবির

লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা

বিএনপি সমর্থিত দুই মেম্বারের সামাজিক বিরোধে প্রাণ গেল যুবকের

ঢাকা মেট্রোকে হারিয়ে ফাইনালে রংপুর

চট্টগ্রামে সাদাকা ফান্ডের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সম্মেলন অনুষ্ঠিত

চাঁদাবাজরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, সতর্ক থাকুন: হাসনাত

জুড়ীতে মরহুম আব্দুল আজিম মাস্টার মেধাবৃত্তি প্রকল্প পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

জনগণই ঠিক করবে দেশ পরিচালনা কে করবে: গয়েশ্বর

কুষ্টিয়াতে রাতের আঁধারে কৃষকের পেঁয়াজের চারা কর্তন

বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন