ই-পেপার শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

রাজনীতি কি একটি পেশা?

সাইফুল্লাহ হায়দার:
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৫

বর্তমান সময়ে রাজনীতি এবং পেশা, এ দুটি শব্দ যখন একসাথে উচ্চারিত হয়, তখন আমাদের অনেকের কাছে প্রশ্ন ওঠে: রাজনীতি কি আদৌ একটি পেশা হতে পারে? প্রশ্নটি সঙ্গত, কারণ যখন আমরা রাজনীতি শব্দটির সাথে পরিচিত হই, তখন মনে হয়, এটি শুধু জনগণের সেবা, আত্মত্যাগ এবং দেশপ্রেমের ফলস্বরূপ। কিন্তু দিন দিন রাজনীতি একটি পেশার রূপ নিতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তন কিভাবে ঘটছে এবং এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করা জরুরি।

রাজনীতি এবং পেশার পার্থক্য : প্রাচীনকালে রাজনীতি ছিল একটি ব্রত, একটি মহৎ উদ্দেশ্য যেখানে জনগণের সেবা এবং দেশপ্রেম ছিল প্রধান লক্ষ্য। তখনকার রাজনীতিবিদরা নিজেকে দেশের কল্যাণে উৎসর্গ করতেন এবং তাদের জীবনে কোনো ব্যক্তিগত লাভের আশা ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের সেবা, দেশের উন্নয়ন, এবং রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রাজনীতির সংজ্ঞা বদলে গেছে।

বিশ্বের অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মতো রাজনীতির সংজ্ঞাও পরিবর্তিত হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকেও অধিকাংশ রাজনীতিবিদদের কোনো নির্দিষ্ট পেশা ছিল না। তারা শুধুমাত্র রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের সেবা করার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু আজকাল দেখা যায়, রাজনীতির সাথে অনেক নেতাই ব্যবসা বা অন্যান্য পেশায় যুক্ত হয়ে আছেন। তারা ভোটের রাজনীতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত আর্থিক লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি করছেন, যা রাজনীতি ও পেশার মধ্যে সীমারেখা একেবারে মুছে দিয়েছে।

ম্যাক্স ওয়েবারের দৃষ্টিকোণ : বিখ্যাত জার্মান সমাজবিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার ১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে এক বক্তৃতায় রাজনীতির অর্থে নতুন এক দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করেছিলেন। ওয়েবার বলেছিলেন, "রাজনীতি একটি পেশা"। তার মতে, রাজনীতিবিদরা শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য বা জনপ্রিয়তার জন্য রাজনীতি করেন না। তাদের নৈতিক মেরুদণ্ড থাকা উচিত এবং তারা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। ওয়েবারের দৃষ্টিকোণ থেকে, রাজনীতির উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ এবং সমাজের উন্নতি হওয়া উচিত, নয়তো তা হবে কেবল ক্ষমতার লোভ।

এছাড়াও, ওয়েবার বলেছেন, একজন রাজনীতিবিদ শুধুমাত্র ভোট পাওয়ার জন্য অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন না। তাদের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য থাকা উচিত এবং তারা যখন ইতিহাসের পরিবর্তনের দিকে এগোবেন, তখন তাদের কাছে হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব এবং বিচার করার ক্ষমতা। কিন্তু আজকের রাজনীতিতে অনেকেই শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেন, যা বেশিরভাগ সময় বাস্তবে রূপ নেয় না।

১৯৭১ থেকে ২০১৮: রাজনীতিতে পেশাদারিত্বের পরিবর্তন : বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এবং ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে রাজনীতিতে পেশাদারিত্বের পরিবর্তন হতে শুরু করে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৩১ শতাংশ ছিলেন আইনজীবী, ১৮ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী, এবং কৃষক পরিবারের সদস্যরা ছিল ১১ শতাংশ। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই সংখ্যা অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে ৩১ শতাংশ আইনজীবী কমে ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, এবং ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬১ শতাংশ হয়েছে। এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে রাজনীতির পেশার পরিবর্তন ঘটেছে এবং ব্যবসায়ী শ্রেণির প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে।

এছাড়া, ২০২৩ সালের নির্বাচনে আরও ভয়াবহ পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে, যেখানে ব্যবসায়ী এবং মাফিয়া শ্রেণির সদস্যদের আধিক্য দেখা গেছে। তাদের এই প্রভাব দেশের রাজনীতির চেহারা বদলে দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, রাজনীতি এখন শুধুমাত্র ক্ষমতা অর্জনের একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক নেতা এখন ব্যবসা বা অন্যান্য পেশা নিয়েই রাজনীতি করছেন, যার ফলে রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য দেশ ও জনগণের সেবা থেকে সরে গিয়ে তা ব্যক্তিগত লাভের দিকে চলে গেছে।

নবীন রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি : এখনকার রাজনীতির চিত্র আরও জটিল। পেশাগতভাবে যারা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্যবসায়ী। তারা পেশার মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করেন, সেটি রাজনীতির জন্যও কাজে লাগান। এই পরিস্থিতি একটি কঠিন বাস্তবতা তৈরি করছে, যেখানে ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার অভাব বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যারা রাজনীতির মাধ্যমে প্রকৃত জনগণের সেবা করতে চান, তাদের জন্য এই চ্যালেঞ্জ অনেক বড়।

এখনকার রাজনীতিতে যদি পেশা এবং উপার্জনকে আলাদা করা না যায়, তবে একদিন হয়তো রাজনৈতিক দলের নেতারা শুধুমাত্র টিকিট পাওয়ার জন্যই রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন, এবং জনগণের সেবা বা উন্নতি হবে না। এই পরিস্থিতি সমাজের জন্য উদ্বেগজনক।

রাজনীতি যদি একটি পেশা হয়ে যায়, তবে তার সঙ্গে সম্পর্কিত দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্বও পাল্টে যাবে। আর্থিক লাভের জন্য যারা রাজনীতি করছেন, তাদের কাছে জনগণের সেবা একটি নৈতিক দায়িত্বের চেয়ে ব্যবসায়িক চুক্তির মতো হয়ে দাঁড়াবে। এটি দেশের রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, যদি নতুন প্রজন্মের নেতারা বৈধভাবে উপার্জন করে এবং তাদের উদ্দেশ্য থাকে জনগণের সেবা, তবে সেই রাজনীতি সমাজের জন্য কল্যাণকর হতে পারে।

লেখক: কেন্দ্রীয় সংগঠক, জাতীয় নাগরিক কমিটি।

আমার বার্তা/সাইফুল্লাহ হায়দার/এমই

শিক্ষক নিয়োগে বৈধতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আমরা অপরাধী?

যখন একজন শিক্ষক জাল সনদধারী হয়েও আদালতের আশ্রয় নেন, তখন তাঁকে বাঁচাতে নড়েচড়ে বসে কিছু

আসন্ন নির্বাচন এবং ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা : সাকিফ শামীমের ভাবনা

বাংলাদেশে ২০২৬ সালের সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন উত্তাপ বাড়ছে, তখন দেশের অর্থনীতি

বাবা, তুমি আমার নীরব ভালোবাসা

আমার বাবাকে আমি অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলতে পারিনি— “বাবা, আমি তোমাকে অনেক

বিশ্ব বাবা দিবস : বাবা হচ্ছে সংসারের একজন বটবৃক্ষ

বিশ্বের প্রায় দেশেই জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করে আসছে। সে হিসেবে এবছর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুর মৃত্যু

বিএনপি সরকার গঠন করবে: রুমিন ফারহানা

কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দিলেন এনবিআর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা

আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি বলেই মব সন্ত্রাস কমেছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রূপনগরে ২০ হাজার নিমগাছ রোপণের উদ্যোগ বিএনপির

৯ বছর পর একসঙ্গে ৩ সন্তানের জন্ম দিলেন গৃহবধূ

১১ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ক্যারিবীয় বর্তমান দলের এক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে

গাজায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি : ইসরায়েলের বিরোধী নেতা

দুই ইনিংসেই ব্যাটিং ব্যর্থতা, ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ

ফরিদপুর যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাদক-অস্ত্রসসহ আটক ১৫

পিস্তল-ককটেলসহ বিএনপি নেতা আটক

ইরানকে ৩০ বিলিয়ন ডলার ও নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের

বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে দুইজনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ১০৫

মোরোলগঞ্জের খালে ভাসমান অবস্থায় ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার

চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল ২ জনের

চমক রেখে বাংলাদেশ সিরিজের ওয়ানডে দল ঘোষণা শ্রীলঙ্কার

পাটের আবাদ কমেছে নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে

চট্টগ্রামে ডাবল মার্ডার মামলার আসামি খোরশেদ গ্রেপ্তার

সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে ‘মানসিক নির্যাতনের’ অভিযোগ এমবাপের

পরীক্ষার হলে দলবল নিয়ে প্রবেশ করা সেই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার