ই-পেপার শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বৃদ্ধাশ্রমের ঈদ : এক মলিন উৎসবের গল্প

মোসা. মিশকাতুল ইসলাম মুমু:
২৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২০

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই উৎসবের রঙ, নতুন জামা, সুস্বাদু খাবার, প্রিয়জনদের সান্নিধ্য, আর অফুরন্ত হাসি-আনন্দে ভরা দিন। ছোট-বড় সবাই মিলে ঈদের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আমাদের সমাজের এক কোণে, যেখানে উৎসবের জৌলুস ততটা প্রবল নয়, সেখানে কিছু মানুষ একাকী, অপেক্ষারত, আর কখনো কখনো বিস্মৃতপ্রায়—তারা বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দারা।

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ছুটছেন অসংখ্য মানুষ। আবার অনেকে ব্যস্ত রয়েছেন কেনাকাটা আর পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে। বাবা-মা, ভাইবোন, স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন সবাই। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা তাদের পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে দূরে একা ঈদ করবেন, কেমন কাটবে তাদের ঈদ? বলছি বৃদ্ধাশ্রমে থাকা অসহায় সেই বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের কথা।

বৃদ্ধাশ্রম বৃদ্ধ নারী-পুরুষের আবাসস্থল।প্রাচীন চীনে পৃথিবীর প্রথম বৃদ্ধাশ্রম শান রাজবংশ খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ শতকে ঘরছাড়া বৃদ্ধদের জন্য প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে খাদ্য, বিনোদনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ছিল।বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের চরম অবহেলা-অবজ্ঞার চিত্র ধরা পড়ে বৃদ্ধাশ্রমে। অসংখ্য সন্তান বৃদ্ধ বাবা-মাকে পরিবারের পরিত্যক্ত বস্তু ভেবে পাঠিয়ে দেন বৃদ্ধাশ্রমে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ কোটি ৩০ লাখের মতো প্রবীণ রয়েছেন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ প্রবীণ এবং বাংলাদেশের প্রবীণদের ৭৮ শতাংশ বিধবা।এই বৃদ্ধ মানুষগুলোর অধিকাংশেরই স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে। সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবার ছাড়িয়ে উচ্চবিত্ত পরিবারের প্রবীণ মায়েরা রয়েছেন এসব বৃদ্ধাশ্রমে।

প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রমে অসংখ্য গল্প লুকিয়ে থাকে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় এখানে এসেছেন, কিন্তু বেশিরভাগই পরিস্থিতির শিকার হয়ে এসেছেন। অনেকেই সন্তানদের অবহেলার শিকার।একজন মা হয়তো সারাজীবন সন্তানদের লালন-পালন করে বড় করেছেন, কিন্তু বয়সের ভারে যখন তিনি অসহায় হয়ে পড়লেন, তখন তার জায়গা হলো বৃদ্ধাশ্রমে। বাবাদের গল্পও আলাদা নয়, যারা একসময় পরিবারের স্তম্ভ ছিলেন, আজ তারা যেন সেই পরিবারের বোঝা হয়ে গেছেন।

আর কদিন পরেই ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ দিন ধরে বৃদ্ধাশ্রমে ঈদ পালন করেছেন অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত বাবা-মা।বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বৃদ্ধদের সন্তানরা বেশির ভাগই প্রতিষ্ঠিত। এর পরও তাদের ঈদ করতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে। আর এই বিশেষ দিনটিতে হতাশা আর শূন্যতা নিয়ে সন্তানের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এসব মানুষ।

বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালের মধ্যে ঈদের আনন্দ যেন এক অদৃশ্য দেয়ালে আটকে যায়। এই মানুষগুলো একসময় নিজেদের পরিবার গড়ে তুলেছিলেন, সন্তানদের লালন-পালন করেছিলেন, সংসার সামলেছেন, কিন্তু আজ তারা ঈদের দিনে একা। সন্তানদের অপেক্ষায় থাকেন, হয়তো কেউ আসবে, হয়তো একটু খোঁজ নেবে—এই আশায় তাদের দিন কাটে। কিন্তু সেই অপেক্ষা সবসময় শেষ হয় না।

ঈদের দিনটাও তাদের কাছে অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক কাটে। বিশেষ দিনগুলোতে একবুক শূন্যতা নিয়ে সন্তানের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান তারা। বুকের ভেতর পাথর চেপে, হতাশা নিয়ে এমনি করে পথের দিকে প্রতিদিনই চেয়ে থাকেন তারা, কারো জন্য প্রতীক্ষা, ঈদের দিনটিতে হয়তো কোনো প্রিয়জনের পথ চেয়ে একটু বেশি প্রত্যাশা। কারো কারো প্রিয়জন আসেন, কেউ কেউ একাই কাটিয়ে দেন। আবার কারো ১২ বছরেও খোঁজ তো দূরের কথা ফোনালাপ পর্যন্ত হয় না। এ রকম এক খুশির দিনে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মানুষগুলোর কষ্টের সীমা থাকে না। এটাই মনে হয় জীবনের এক কঠিন বাস্তবতা।

বৃদ্ধাশ্রমে ঈদের সকাল শুরু হয় নামাজের প্রস্তুতি দিয়ে। অনেক বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থা নামাজ পড়ার উপযুক্ত না হলেও, যারা পারেন তারা জামাতে অংশ নিতে চেষ্টা করেন। নামাজ শেষে সবাই মিলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, কিন্তু সেই উচ্ছ্বাসে পরিবারের সান্নিধ্যের যে শূন্যতা, তা বোঝা যায় তাদের ক্লান্ত হাসিতে।বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ কিংবা কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঈদের দিন বিশেষ খাবারের আয়োজন করে। খেজুর, সেমাই, পোলাও-মাংস—সবকিছুই প্রস্তুত থাকে, তবু খাবারের স্বাদ যেন কমে যায় একাকীত্বের কারণে। কিছু জায়গায় নতুন জামা উপহার দেওয়া হয়, স্বেচ্ছাসেবীরা এসে গল্প করেন, পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করেন বৃদ্ধরা। কেউ কেউ আবেগে কেঁদে ফেলেন, মনে পড়ে যায় ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। ঈদের দিনে তাদের বুক ফেটে কান্না আসে, কিন্তু সামনে কেউ থাকে না সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য।তবুও এসব মেনে নিয়ে জীবনের বাকি সময়গুলো ভালো থাকতে চান এখানকার প্রবীণরা।

বর্তমানে পরিবার ভাঙার হার বাড়ছে, বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ একসময় এই বাবা-মায়েরাই আমাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, স্বপ্ন গড়েছেন। আমাদের উচিত ঈদের দিনে তারা যাতে একটু আনন্দ পায় সেই কাজ করা। ঈদের দিনে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটালে তারা আনন্দ পাবেন। পাশাপাশি নতুন জামা, খাবার বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী উপহার দিয়েও তাদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব। সবচেয়ে জরুরি হলো পরিবারের প্রতি সচেতনতা তৈরি করা—সন্তানদের বোঝানো দরকার যে আজ যিনি সন্তান, তিনিই আগামী দিনের পিতা কিংবা মা। বৃদ্ধ বয়সে এসে মা-বাবারা যেহেতু শিশুদের মতো কোমলমতি হয়ে যায়, তাই তাদের জন্য সুন্দর জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি করাই সন্তানের কর্তব্য।বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে ভুলে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। বরং পরিবারের সবাই মিলে ঈদ উদযাপন করাই প্রকৃত আনন্দ। আর যেন কখনো কোনো পিতা-মাতার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদের জন্য তৈরি করতে হবে একটা নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী।

ঈদ শুধু নিজে আনন্দ পাওয়ার নয়, বরং অন্যকে আনন্দ দেওয়ারও উৎসব। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এই মানুষগুলো আমাদের সমাজেরই অংশ, আমাদের পরিবারেরই কেউ ছিলেন একসময়। তারা যেন ঈদের দিনে একাকীত্বের কষ্ট না পান, সেটাই হওয়া উচিত আমাদের মানবিক দায়িত্ব। , আমাদের সবার এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা উচিত যেখানে বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালের মধ্যেও ঈদের আনন্দ পৌঁছে যাবে, আর কেউ ঈদের দিনে মলিন মনে বসে থাকবে না।নাহলে বৃদ্ধাশ্রমের ঈদ রয়ে যাবে শুধুই এক মলিন উৎসব হয়ে!

লেখক : শিক্ষার্থী, গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/মোসা. মিশকাতুল ইসলাম মুমু/এমই

শিক্ষক নিয়োগে বৈধতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আমরা অপরাধী?

যখন একজন শিক্ষক জাল সনদধারী হয়েও আদালতের আশ্রয় নেন, তখন তাঁকে বাঁচাতে নড়েচড়ে বসে কিছু

আসন্ন নির্বাচন এবং ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা : সাকিফ শামীমের ভাবনা

বাংলাদেশে ২০২৬ সালের সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন উত্তাপ বাড়ছে, তখন দেশের অর্থনীতি

বাবা, তুমি আমার নীরব ভালোবাসা

আমার বাবাকে আমি অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলতে পারিনি— “বাবা, আমি তোমাকে অনেক

বিশ্ব বাবা দিবস : বাবা হচ্ছে সংসারের একজন বটবৃক্ষ

বিশ্বের প্রায় দেশেই জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করে আসছে। সে হিসেবে এবছর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুর মৃত্যু

বিএনপি সরকার গঠন করবে: রুমিন ফারহানা

কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দিলেন এনবিআর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা

আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি বলেই মব সন্ত্রাস কমেছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রূপনগরে ২০ হাজার নিমগাছ রোপণের উদ্যোগ বিএনপির

৯ বছর পর একসঙ্গে ৩ সন্তানের জন্ম দিলেন গৃহবধূ

১১ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ক্যারিবীয় বর্তমান দলের এক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে

গাজায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি : ইসরায়েলের বিরোধী নেতা

দুই ইনিংসেই ব্যাটিং ব্যর্থতা, ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ

ফরিদপুর যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাদক-অস্ত্রসসহ আটক ১৫

পিস্তল-ককটেলসহ বিএনপি নেতা আটক

ইরানকে ৩০ বিলিয়ন ডলার ও নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের

বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে দুইজনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ১০৫

মোরোলগঞ্জের খালে ভাসমান অবস্থায় ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার

চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল ২ জনের

চমক রেখে বাংলাদেশ সিরিজের ওয়ানডে দল ঘোষণা শ্রীলঙ্কার

পাটের আবাদ কমেছে নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে

চট্টগ্রামে ডাবল মার্ডার মামলার আসামি খোরশেদ গ্রেপ্তার

সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে ‘মানসিক নির্যাতনের’ অভিযোগ এমবাপের

পরীক্ষার হলে দলবল নিয়ে প্রবেশ করা সেই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার