ই-পেপার বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২

আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ পাসপোর্ট পরিচালক তৌফিকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

হাবিবুর রহমান:
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:২০
তৌফিকুল ইসলাম খান : ছবি সংগৃহীত

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক তৌফিক ২০১৯ সালে একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ জিজ্ঞসাবাদে সেচ্ছায় দুর্নীতির স্বীকার উক্তি দেন। স্বীকার উক্তির অন্যতম বিষয় ছিল অধিদপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে কিভাবে পরিচালক পদ বাগিয়ে নেন- এ বিষয়ে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও সচিবের পিএস-এর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাপক ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে পরিচালক পদ বাগিয়ে নেন। এরপর তার নিজস্ব জবানবন্দীর উপর ভিত্তি করে দুদুক নড়েচড়ে বসে এবং প্রায় ও বছরের তদন্তকালে প্রথমে ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৬৩ টাকার বৈধ উৎস না পেয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। এরপর অধিকতর তদন্ত শেষে অবৈধ টাকার কুমির পাসপোর্টের পরিচালক তৌফিকের বিরুদ্ধে ৮ জানুয়ারি ২০২৫ দুদক চার্জশিট দেয়। কিন্তু তিনি এখনও আদালতের মুখোমুখি বা গ্রেফতার হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসপোর্টের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন 'দুদকের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ২ কোটি টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে গ্রেফতার এড়িয়ে বহাল তবিয়তে অফিস করছেন বলে তৌফিক বলে বেড়াচ্ছেন। এটি সংকর্মকর্তাদের জন্য একটি আতংকের নাম।'

তৌফিকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: পরিচালক তৌফিকের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ তিনি স্বেচ্ছাই স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তিনি জোই কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, শহিদুজ্জামানকে ৭৫ লাখ ও তার একান্ত সচিব (বর্তমান যুগ্ম সচিব) সইদুল হককে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দেন। এছাড়াও এই পদোন্নতির জন্য যুবলীগ নেত্রী নাসিমা ইসলামকে ৮ লাখ টাকা ঘুষ দেন। যা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। এরপর তিনি সিংগাপুর ক্যাসিনোতে জুয়া খেলে লোকসান করেন-২ কোটি ৫০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে যে সমস্ত অপরাধমূলক কর্মকান্ড করেছেন তারই জবানিতে একটি সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো-

বিগত আওয়ামীলীগের আমলে তিনি খুনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বেড রুমে প্রবেশাধিকার ছিল। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর স্ত্রীকে কয়েকশ ভরি স্বর্ণালংকার কিনে দেন। আওয়ামীলীগ নেতা আহমেদ হোসেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদের হোসেনের আত্মীয় পরিচয়ে অধিদপ্তরে একক আধিপত্য বিস্তার করেন। এর মাধ্যমে বদলি বাণিজ্যসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জন করেন কোটি কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের পরিচালক সাইদুল ইসলাম ও তৌফিক ডিবি হারুনের বন্ধু পরিচয়ে অধিদপ্তরকে তটস্থ রাখতেন। এই ২ জন পরিচালক মিলে ডিবি হারুনকে বেআইনীভাবে সাধারণ পাসপোর্ট প্রদান করেন। এর আগে পুলিশের সাবেক আইজিপি আলোচিত বেনজীর আহমেদও জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট নেন। সরকারি কর্মকর্তা হলেও তার পাসপোর্টে পেশার স্থানে 'প্রাইভেট জব' লেখা ছিল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেনজীর আহমেদকে দেওয়া পাসপোর্ট চক্রটিই হারুন অর রশিদকে পাসপোর্ট পেতে সহায়তা করেছে। এই কাজে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক সাইদুল ইসলাম ও সিলেট বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময় এই কর্মকর্তারা ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শেষ অফিসিয়াল পাসপোর্ট নবায়ন করেন হারুনুর রশিদ। ওই পাসপোর্টের। মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর তিনি ২০১৭ সালের ১৫ জুন সরকারি পাসপোর্ট জমা দিয়ে গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে নতুন সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেন। তার আবেদনের মাত্র ১১ দিনের মধ্যেই তিনি সাধারণ পাসপোর্ট তুলে নেন। এই পাসপোর্টের মেয়াদও ছিল ৫ বছর। অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১৮ জুন থেকে ২০২২

সালের ১৭ জুন পর্যন্ত। এতো রক্ত ও গনহত্যার পরও ডিবি হারুনদের বন্ধুরা বহাল তবিয়তে; যা গোটা দেশে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।

জানা যায়, ২০০৪ সালে ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের একজন সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন তৌফিকুল ইসলাম খান। তার প্রথম পোস্টিং হয় যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। চাকরি জীবনে তিনি নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, ঢাকার যাত্রাবাড়ী, ঢাকার হেড অফিস, খুলনা এবং বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ের পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এর মধ্যে তিনি সহকারী পরিচালক ছিলেন ৭ বছর, উপপরিচালক ছিলেন ৮ বছর এবং উভয় পদে মোট ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে পরিচালক পদে পদোন্নতি পান। এ সময় তিনি সর্বসাকুল্যে যথাক্রমে ৫৫ হাজার, ৬৫ হাজার এবং বর্তমানে ৭৫ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন তুলছেন। অভিযোগ রয়েছে, চাকরি জীবনে তিনি ঢাকায় ৮টি ফ্ল্যাট, ৭টি প্লট ও বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ও দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, গাসপোর্টের এই পরিচালকের নামে রয়েছে ঢাকার উত্তরায়। ১৫শ' বর্গফুটের ফ্ল্যাট। সেটি কেনা হয় ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। ধানমন্ডিতে রয়েছে ২ হাজার বর্গফুটের প্লট, যা কেনা হয়েছে ২ কোটি টাকায়। তার মালিকানাধীন গ্রিন রোডে সাড়ে ১২শ' বর্গফুটের ৩টি ফ্ল্যাট আছে, একেকটির মূল্য ৮০ লাখ টাকা, লালমাটিয়ায় ১৩শ' বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যার মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ইন্দিরা রোডে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন ৬৫ লাখ টাকায়-ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নামে বুকিং দিলেও মূল্য পরিশোধ করেছেন তিনি। শান্তিনগরে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। এটি ভাইয়ের নামে 'পরিশোধ' দেখান। রাজধানীর নীলক্ষেতে আছে ২টি দোকান, একত্রে কেনা হয় ২ কোটি ২০ লাখ টাকায়। বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে ৬৪ লাখ টাকার।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, যখন যেখানে ইচ্ছে তিনি প্লট কিনেছেন। এর মধ্যে মিরপুর রূপনগর (সম্প্রসারিত) প্রকল্পে ২ কাঠার প্লট কেনেন ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। উত্তরায় ৩ কাঠার প্লটটি কেনেন ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে, বর্তমানে যার বাজার দর ২ কোটি টাকা। রাজধানীর বনশ্রীতে শাশুড়ির নামে সাড়ে ৩ কাঠার প্লট কিনেছেন, যার বাজার মূল্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তৌফিকুল ইসলাম খানের নিজ জেলা নেত্রকোনায় ১৪.৫৭ শতাংশ জমির ওপর দোতলা বাড়ি রয়েছে। এটি ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় কেনা। নেত্রকোনায় রয়েছে আরেকটি ৬ তলা বাড়ি। কিনেছেন ২ কোটি টাকায়। নেত্রকোনা নিজ গ্রামে এক দাগে কিনেছেন ৪ একর কৃষি জমি, এটির আনুমানিক দাম ১ কোটি ৮০ লাখ। মোহনগঞ্জে ৮০ লাখ টাকায় কিনেছেন একসঙ্গে ১৩ একর জমি।

মোট নগদ অর্থ রয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ব্যাংকে রয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। স্বর্ণালংকার আছে ৪৫ ভরি, মূল্য ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পারিবারিক ব্যবহারের জন্য কিনেছেন দুটি গাড়ি। একটি ফিল্ডার, আরেকটি নোয়াহ। দুটি গাড়ির মূল্য ২২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। নগদ রয়েছে ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ৭০০ সিঙ্গাপুরের ডলার। ইউরো রয়েছে ৯ হাজার।

গত ১৩ জানুয়ারী এক প্রশ্নের জবাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুদক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু তৌফিকুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে, সেখানে তাকে অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাকে গ্রেফতারে কোনও বাধা নেই। এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অথচ আজ অবদি তিনি দুদককে ম্যানেজ করে চলেছেন। গ্রেফতার হননি।

অথচ কাস্টম কমিশনার মতিউর রহমানের বেলায় দুদক মহাপরিচালক মীর মো: জয়নুল আবেদিন শিবলী বলেছিলেন-চার্জশীট হলে আসামীরা থাকবে বেলে। নয় তো জেলে। কিন্তু তৌফিকের বিষয়ে এই কথার কোন কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে তৌফিকুল ইসলাম খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

আমার বার্তা/এমই

আত্মগোপনে যমুনা অয়েলের তেল চোর সিন্ডিকেট প্রধান হেলাল উদ্দিন

যমুনা অয়েলের তেল চোর সিন্ডিকেটের সেকেন্ড ইন কমান্ড সিবিএ নেতা মুহাম্মদ এয়াকুব গ্রেফতার হয় ১২

জেল হাজতে যমুনা অয়েলের তেল মাফিয়া এয়াকুব, অবসান হতে যাচ্ছে সাম্রাজ্য

যমুনা লেবার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, সিবিএ নেতা মুহাম্মদ এয়াকুবকে অবশেষে অত্যান্ত গোপনীয় ভাবে রোববার আদালতে

যমুনা অয়েলের তেল চুরি সিন্ডিকেট প্রধান হেলালের প্রধান সেনাপতি এয়াকুব গ্রেপ্তার

যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের তেল চোর সিন্ডিকেট প্রধান সদ্য বিদায়ী ডিজিএম অপারেশন হেলাল উদ্দিন সিন্ডিকেট

বিতর্কিত মাসুদুল ইসলামই হতে যাচ্ছে যমুনা অয়েলের এমডি

অবশেষে যমুনা অয়েলের সেই  বিতর্কিত কর্মকর্তা মো : মাসুদুল ইসলামকেই এমডি নিয়োগ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিজিটালাইজেশনের কারণে দুর্নীতি-ভোগান্তি অনেক কমেছে: আইন উপদেষ্টা

সীমান্ত হত্যা বন্ধের বার্তা দিতে বিজয় দিবসে ‘ফেলানী অ্যাভিনিউ’ উদ্বোধন: আদিলুর

বৃহত্তর চীন শাখার উদ্যোগে চীনে বিজয় দিবস উদযাপন বিএনপির

মানুষকে মূল্যায়নের যে মাপমাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে হাদিসে

প্রতি কার্যদিবসে বাড়ছে ১৫৯ বিও হিসাব

মিয়ানমারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন

আইপিএল নিলাম শেষে ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজির চূড়ান্ত দল

নরসিংদীর বিল থেকে হাদিকে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও ৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

তেজগাঁও কলেজের সামনে পুলিশ মোতায়েন

সোনার দাম বেড়ে ভরি ছাড়াল ২ লাখ ১৭ হাজার

প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সংখ্যা চার লাখ ৪৫ হাজার ছাড়ালো

ফিফা দ্য বেস্টে পিএসজির দাপট, বর্ষসেরা উসমান দেম্বেলে

নির্বাচনে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন ছাড়াল সাড়ে ৪ লাখ

বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় ব্যবসায়িক ঝুঁকিতে রয়েছে বারাকা পাওয়ার

জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠাচ্ছে ইইউ

দূষিত শহরের তালিকায় আজ চতুর্থ ঢাকা, শীর্ষে সারায়েভো

বাংলাদেশে ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

তেঁতুলিয়ায় এক সপ্তাহ ধরে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

আরও ৭ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

গাজার ধ্বংসস্তূপে মিলল সালেম পরিবারের ৩০ সদস্যের লাশ