
দেশের শীর্ষস্থানীয় ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এলবিয়ন গ্রুপ এখন স্ক্যান্ডালের মুখে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি, নিম্নমানের ঔষধ উৎপাদন এবং একই ভবনে পশু ও মানুষের ঔষধ উৎপাদন করার অভিযোগ উঠেছে । এছাড়া অভিযোগ রয়েছে রপ্তানি নিয়ে মিথ্যা প্রচারণারও।
অনুসন্ধানে জানা ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারী চট্টগ্রামের ইনোভেটিভ ফার্মার স্বত্বাধিকারী কাজী মোহাম্মদ শহিদুল হাসান বাদী হয়ে এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাইসুল উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুনতাহার উদ্দিন এবং প্রধান এডভাইজার নিজাম উদ্দিন-এর বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গ ও প্রতারণা অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলা নাম্বার ১৫১/ ২৩ চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানা। মামলাটি পুলিশ ব্যূরো অব ইমভেষ্টিগেশন ( পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো তদন্ত করছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে ২০১৪ সালে ইনোভেটিভ ফার্মার সাথে প্রতিষ্ঠানটির ১০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, এলবিয়ন ওষুধ উৎপাদন করে বিক্রি করবে, এতে ৪০% লাভ পাবে এলবিয়ন বাকী ৬০% ইনোভেটিভ ফার্মা। বাদীর অভিযোগ ২০১৬ সালে এলবিয়ন গ্রুপ ৫–৬ কোটি টাকার ঔষধ ইনোভেটিভ ফার্মার গুদামে রাখে এর বদলে ৯টি খালি চেক জামানত হিসেবে নেয়। পরবর্তীতে ঔষধ ফেরত নিয়ে লাভতো দেয়নি উল্টো চেক ফেরত না দিয়ে ২ কোটি টাকার চাঁদা দাবি করে।
এদিকে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি রিপোর্টে, এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের উৎপাদিত ওষুধের মান নিন্ম মানের বলে বলা হয়েছে । এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত মিমক্স ক্যাপসুল’ (অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যামোক্সিসিলিন) পরীক্ষাতে অ্যামোক্সিসিলিন পাওয়া যায়নি , বরং ভিতরে সাদা দানাদার পাউডার পাওয়া গেছে।এছাড়া ‘ইনডোমেথাসিন ক্যাপসুল’-এও মাপের কম পরিমাণ ওষুধ, ২৫ মিলিগ্রামের পরিবর্তে ২২–২৪ মিলিগ্রাম পাওয়া গেছে।
এছাড়া, এলবিয়ন একই ধরনের ওষুধ বাজারে অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় প্রতিস্হাপনমূল্যে কম দামে বিক্রি করছে, যা অনেকটা মানহীন ওষুধের বিপণনের প্রমাণ।
শত শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি : দুদকে দায়ের করা অভিযোগ অনুযায়ী, এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়-বিক্রয় ও আমদানি তথ্য গোপন করে, ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকি দিয়েছে। গোপন করেছে আমদানি ও বিক্রয়ের টাকার পরিমাণ। যেমন ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১৩ কোটি ৯৫ লাখ, ৮৩ কোটি ১৯ লাখ , ২০১৮-১৯ -- ১৪ কোটি ৯৭ লাখ, ৮৯ কোটি ২১ লাখ , ২০১৯-২০-- ২৫ কোটি ৭৮ লাখ, ৯৯ কোটি ৬ লাখ, ২০২০-২১ -৪৯ কোাটি ২৬ লাখ, ১২৯ কোটি ৭৫ লাখ এবং ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১৪ কোাটি ২৮লাখ এবং ৯১ কোটি ৯৭ লাখ৷ । এদিকে এলবিয়ন ও মালিকপক্ষের নামে বেনামী জমি, ১১টি দামি গাড়ি, ৭টি প্রতিষ্ঠান ও ৯টি ব্যাংক হিসাব গোপন রাখা হয়েছে। এদিকে এলবিয়ন গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রচারিত “উচ্চমানের ওষুধ রপ্তানি” তথ্যও ভ্রান্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। এলবিয়ন গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড,এলবিয়ন অ্যানিমেল হেলথ লিমিটেড, ব্লু একোয়া ড্রিংকিং ওয়াটার, ফেভারিট লিমিটেড, ক্লিনজি ফরমুলেশন লিমিটেড, ফবিটা লিমিটেড, এলবিয়ন ট্রেডিং কর্পোরেশন, এলবিয়ন ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, সেগাফ্রেডো জেনেতি এসপ্রেসো (ইতালি) এবং এলবিয়ন স্পেশালাইজড ফার্মা লিমিটেড।
এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাইসুল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়৷ ফোন দেয়া হয় একাধিকবার কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
আমার বার্তা/এমই

