বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে আপিল বিভাগের রায়ের ফলে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি আরও বলেছেন, আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের আগামী সংসদে ইন্টারেস্টিং এবং কনস্ট্রাক্টিভ বিতর্ক হবে, যার মাধ্যমে ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) একটি স্থায়ী রূপ লাভ করবে।
রোববার (১ জুন) জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার বিষয়ে দলটির করা আপিল আবেদনের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় দেওয়ার পর আইনজীবী শিশির মনির এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তার নিবন্ধন ফিরে পেলো। রাজনৈতিক উদ্দেশে দায়েরকৃত মামলার মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো।
এই আইনজীবী আরও বলেন, আমরা আশা করি এই রায়ের পরে বাংলাদেশে সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাণবন্ত সংসদ গঠিত হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে বেছে নেবে। এবং আমরা এটাও প্রত্যাশা করি যে, বাংলাদেশের আগামী সংসদে ইন্টারেস্টিং এবং কনস্ট্রাক্টিভ বিতর্ক হবে যার মাধ্যমে ডেমোক্রেসি একটি স্থায়ী রূপ লাভ করবে।
শিশির মনির জানান, আজকে মাননীয় আপিল বিভাগ হাইকোর্টের যে রায় ছিল সে রায়কে বাতিল ঘোষণা করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্ট্রেশন এবং অন্য যেসব ইস্যু কমিশনের সামনে আসবে সেগুলো যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করেন তারা। এর মাধ্যমে আজকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফিরে পেলো এবং প্রতীকের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সামনে রেফার করা হলো ‘আদার ইস্যু’ হিসেবে। এজন্য আমরা মামলার শর্ট অর্ডার (সংক্ষিপ্ত আদেশ) চেয়েছি। আমরা আশা করি আগামীকালের (সোমবার) মধ্যেই মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশ আমরা হাতে পাব। এই আদেশ আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অ্যাপ্রোচ করব এবং কমিশন অতি দ্রুত জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক বুঝিয়ে দেবেন-এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
এর আগে, রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ও অন্যান্য বিষয়ে দলটির করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রোববার (১ জুন) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ।
একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা একই বছর আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দলটি।
তবে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর চেম্বার জজ আদালত। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।
আমার বার্তা/জেএইচ