তরুণদের মধ্যে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিয়ে গর্ব ও চেতনার প্রতিফলন দৃশ্যমান হলেও দেশ নিয়ে তাদের আশাবাদ অনেক কমেছে। এছাড়া দেশের ৫৮ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আরও আস্থা আনা প্রয়োজন বলে করেন।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ’ গবেষণা সিরিজের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফলের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের গবেষণা সিরিজটি এবার তৃতীয়বারের মতো প্রকাশ করা হয়। এর আগে ২০১০ ও ২০১৫ সালে আগের দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। আয়োজনে সরকারি ও বেসরকারি খাত, দেশি- বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মিডিয়া ও তরুণ জনগোষ্ঠীর ১২০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন।
তরুণ বাংলাদেশিদের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি, ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল এই ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪’ প্রতিবেদন শীর্ষক গবেষণার উদ্যোগ নেয়। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নীতিনির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তরুণ জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি, চাহিদা ও প্রতিবন্ধকতা গভীরভাবে উপলব্ধি করাই এ উদ্যোগের লক্ষ্য বলে জানান আয়োজকরা।
‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪’ এর ফলাফল এবং সারসংক্ষেপ সবার সামনে উপস্থাপন করেন এম অ্যান্ড সি সাচি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেস ইভালুয়েশন অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর আইবেক ইলিয়াসভ।
আইবেক ইলিয়াসভ বলেন, গবেষণায় নানা শ্রেণি ও পেশার ১৮-৩৫ বছর বয়সী মোট ৩ হাজার ৮১ জন মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। উত্তরদাতাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসে। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী (৪৬ শতাংশ) লিঙ্গ-বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। যদিও তরুণদের মধ্যে বাংলাদেশি জাতীয়তার গর্ব ও চেতনার দৃশ্যমান প্রতিফলন রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের আশাবাদ ২০১৫ সালে ৬০ শতাংশ ছিল, ২০২৪-এ তা কমে হয়েছে ৫১ শতাংশ।
৪২ শতাংশ তরুণের কাছে বেকারত্ব একটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয়। এছাড়া ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন তারা পড়াশোনা বা কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ইচ্ছুক, বিশেষ করে সৌদি আরব ২৭ শতাংশ ও কানাডায় ১৮ শতাংশ। চাকরির সুযোগ কম থাকায় এখানে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রত্যাশা বেড়েছে, প্রতি ১০ জন বাংলাদেশি তরুণের চারজনই (৪৪ শতাংশ) আগামী ৫ বছরের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
একই সঙ্গে ফলাফল থেকে আরও দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আরও আস্থা আনা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন। যেখানে নাগরিক নেতৃত্বের অভাব থাকায় নিজেদের কমিউনিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্ত হন, মাত্র ১৭ শতাংশ তরুণ। বাংলাদেশের যুব-সমাজ একটি অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশীদারত্বের স্বপ্ন দেখে।
গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। ব্রিটিশ কাউন্সিল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হেলেন সিলভেস্টার তার স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
পরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কালচারাল অ্যাঙ্গেজমেন্টের রিসার্চ অ্যান্ড ইনসাইটস ডিরেক্টর ক্রিস্টিন উইলসনের পরিচালনায় ‘স্কিলস ফর দ্য ফিউচার’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন এডিবির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর (শিক্ষা) জয়া চৌধুরী, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ জস, ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটির পরিচালক (সার্টিফিকেশন) শুভ্রা রায় এবং এইচএসবিসি বাংলাদেশের হেড অব সাসটেইনেবিলিটি সৈয়দা আফজালুন নেসা।
প্রতিবেদনে তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বেশকিছু কার্যকর সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- দক্ষতার ব্যবধান কমিয়ে আনতে ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ জোরদার করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ তৈরি করা, সুশাসন নিশ্চিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, লিঙ্গ-সমতা নিশ্চিত করা এবং সামাজিক বৈষম্যগুলোকে চিহ্নিত করা।
আমার বার্তা/এমই