ভারতের পরিকল্পনায় ফ্যাসিবাদী দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।
সংগঠনটির দাবি, এ ষড়যন্ত্রে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান জড়িত। এজন্য তিনজনকে ‘জাতীয় বেঈমান’ ঘোষণা করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশের মাধ্যমে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের এ কর্মসূচি শুরু হয়।
এতে সংগঠনটির আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমানের সঞ্চালনায় চিত্রশিল্পী সাইয়েদ কুতুব, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
সমাবেশে সাইয়েদ কুতুব বলেন, আমরা যে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি, এ মাটিতে এখন শহিদ আবু সাঈদ ও শহিদ মুগ্ধের তাজা রক্ত লেগে আছে৷ এ মাটিতে ফ্যাসিবাদী ও ফ্যাসিবাদীদের দোসরদের কোনো জায়গা হবে না। তাদেরকে পুনর্বাসনের সব ষড়যন্ত্র রুখতে ছাত্র-জনতার পাশে সর্বস্তরের জনগণ আছে এবং থাকবে।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক হাসান আরিফ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে ও রাজনৈতিক অধিকার দিতে ক্রমাগতভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক হয়ে আসিফ নজরুল কিভাবে ফ্যাসিবাদের পক্ষে বক্তৃতা করছেন- এ প্রশ্ন রেখে তাকে অবিলম্বে অপসারণে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
হাসান আরিফ আরও বলেন, গত ১৭ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাতে দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের লোকেরা জীবন দিয়েছে। অথচ নিজ কর্মীদের আত্মত্যাগ, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ এবং গণদাবি উপেক্ষা করে মির্জা ফখরুল এবং ডাক্তার শফিক আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলছেন।
আওয়ামী লীগের দালালি করায় মির্জা ফখরুল ও ডা. শফিককে দলীয় পদ থেকে সরাতে বিএনপি ও জামায়াতের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমন্বয়ক গালিব ইহসান বলেন, অনতিবিলম্বে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জুলাই বিপ্লবের শহিদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারির জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। যদি ক্ষমা না চায়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তার নাম মুছে ফেলতে হবে।
এ সময় জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমানের উদ্দেশে গালিব ইহসান বলেন, ফ্যসিবাদীরা যদি আপনার পরিবারের লোক হয়ে থাকে, তাহলে বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদ কায়েমের নীলনকশার সঙ্গে আপনিও জড়িত।
অনতিবিলম্বে ক্ষমা চেয়ে জামায়াতের আমিরের পদ থেকে ডা. শফিকুরকে পদত্যাগেরও আহ্বান জানান তিনি।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ বলেম, এদেশে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন হবে কি হবে না, আওয়ামী লীগের রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না সেটা ৫ আগস্ট ছাত্রজনতাই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে। আমাদের ছাত্রজনতার শেষ রক্তবিন্দু থাকতে আওয়ামী লীগ এদেশে আর মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়াতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের উদারতার অংশ হিসাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। তিনি ভারত থেকে শেখ হাসিনাকেও দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু হাসিনার ফেরার পরপরই শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যার শিকার হন। এরপরেও এবং জুলাই গণহত্যার পরেও বিএনপি কিভাবে আওয়ামী লীগকে ভোটের রাজনীতিতে আনতে চায়। তাদের এ দুঃসাহস দেখে আমাদের লজ্জা হয়, রক্ত গরম হয়ে যায়।
সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান বলেন, আমরা পরিষ্কার করে ঘোষণা করতে চাই, ভারতের যে সব দালাল এই দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চিন্তা ভাবনা করবে, আমরা তাদেরকে প্রতিহত করব। আমরা তাদেরকে হাসিনার মত পালিয়ে যেতে বাধ্য করব। এদেশে তাদের কবরও হবেনা ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যে দাবিগুলো জানিয়েছিলাম, গত ১৬ বছরে হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার যেসব অত্যাচার করেছে, গুম-খুন করেছে, সেই গুম-খুনের পরিপূর্ণ তদন্ত করে সেগুলোর বিচার করতে হবে। গত জুলাইয়ে যে গণহত্যা হয়েছে তার বিচার না করে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
ফজলুর রহমান আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার গত তিনটা নির্বাচনে আমাদেরকে ভোট দিতে দেয়নি। তারপরেও কতিপয় দালাল তাদেরকে ভোটের ময়দানে আনার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা তাদেরকে পরিস্কার জানিয়ে দিতে চাই, যে ফ্যাসিস্ট দল গণহত্যাকারী দল আমাদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে, আমাদের রক্ত ঝরিয়েছে, আমাদের ভাইদের শহিদ করেছে, আমাদের দেশ বিক্রি করে দিয়েছিল, তাদেরকে আমরা এই দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেব না। তারা এদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার রাখে না। এই ফ্যসিবাদকে বিলুপ্ত করে আমাদের দেশকে সুষ্ঠু সুন্দর পরিপূর্ণ স্বাধীন দেশে রুপান্তর করতে হবে এবং আমাদের প্রতিটি সেক্টর থেকে ফ্যাসিবাদকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। ভারতের অন্যায় হস্তক্ষেপ আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না। দালালদের প্ররোচনায় আমরা কোনো বিদেশি প্রভুর হাতে ছেড়ে দিতে কখনোই প্রস্তুত না। আমরা দালালদের জানিয়ে দিতে চাই, যদি প্রয়োজন হয়, আপনারা এই দেশ ছেড়ে চলে যান। এই দেশে আপনাদের কোনো স্থান নেই।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান বলেন, ১৬ জুলাই আবু সাঈদ ভাই ও চট্টগ্রামের ওয়াসিম আকরাম ভাই শহিদ হন। ওয়াসিম আকরাম ভাই ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সেই সক্রিয় কর্মীর রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে হবে। কেন? আপনার কর্মীর রক্তের দাম কি নেই? আপনার নিজের কাছে নিজের দলের চেয়ে কি আওয়ামী লীগ দামি? এর মানে কি? দেশের চেয়ে আপনার ভারত বড় হয়ে গেল?
তিনি আরও বলেন, গত ১৬ জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীরাও লীগের হাতে শিবির ট্যাগে মার খেয়েছে। আমাদের শহিদ আবরার ফাহাদকেও শিবির ট্যাগ দিয়ে ছাত্রলীগ হত্যা করেছে। ডাক্তার শফিকুর রহমান, আপনার কি বিন্দুমাত্রও লজ্জা নেই? আপনাদের কর্মীর রক্তের কি বিন্দুমাত্রও দাম নেই? আপনাদেরকে কি আবার আওয়ামী লীগকে ভোটে আনতেই হবে? আমি বলব, লজ্জা করুন। দেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করুন। দেশকে বিকিয়ে দেবেন না।
ঢাবির এ ছাত্র নেতা আরও বলেন, এতোবড় শক্তি এখনো আসেনি যে, বাংলাদেশকে কিনে ফেলতে পারবে। হাসিনার ক্ষমতা হয়নি ১৬ বছরে বাংলাদেশকে বিক্রি করার। আর কারোর পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব হবেনা। রাজপথে আমরা আছি, রাজপথে থাকব। আমরা অল্প লোক, তবে আমরা শক্তিশালী লোক। আমরা কোনো মেরুদণ্ডহীন লোক নই। আমরা ২০ জন হাতি দাঁড়িয়েছি এক লক্ষ তেলাপোকার বিরুদ্ধে। একলক্ষ তেলাপোকা পিষে ধুয়ে মুছে চলে যাবে ইনশাআল্লাহ। বিএনপি-জামায়াতের সাধারণ কর্মীদের বলছি, আপনারাও নিজেদের নেতাদের চিনতে শিখুন।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষের সহকারী সদস্য সচিব জিহাদী ইহসান বলেন, আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়েছি আমাদের শহিদ ভাইদের রক্তের হিস্যা বুঝে নিতে। শহিদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কোনো খুনির দোসরদের পুনর্বাসন হতে পারে না।
সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে ‘দিল্লী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘হাসিনা গেছে যে পথে ফখরুল যাবে সেপথে’, ‘হাসিনা গেছে যে পথে ডা. শফিক যাবে সেপথে’, ‘হাসিনা গেছে যে পথে আসিফ নজরুল যাবে সেপথে’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।
আমার বার্তা/এমই