চট্রগ্রাম জেলার সাতকাননিয়া উপজেলার কেওচিয়া ও কালিয়াইশ ইউনিয়নের মধ্য দিয়া প্রবাহিত মাহালিয়া গরল খালটির পূনঃ খননেনর ফলে যেমন কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, তেমনি খাল-নির্ভর জীববৈচিত্রে ফিরেছে প্রানচাঞ্চল্য।
গত ২৫ বছর ধরে খালটি নিয়মিত ভাবে পুনঃ খনন না হওয়ায় বর্ষায় জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকটে ভুগছিল কৃষি জমি ও জীববৈচিত্র¨। চাষাবাদের পাশাপাশি খালের মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ নানা জলজ প্রানী বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল।
পুনঃখননের পর খালটির নাব্যতা যেমন ফিরে এসেছে অপরদিকে বিলুপ্তপ্রায় জলজ প্রাণী পুনরায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। খালে ছোট মাছ, ব্যাঙ, জলজ উদ্ভিদসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা এলাকার জীববৈচিত্র্যের জন্য আশার আলো।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা যায় যে, খালটি ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ার কারনে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে খাল সংলগ্ন বিলগুলোতে বর্ষাকালে জলাবদ্বতা ও শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির অভাবে কারণে প্রায় ২০০ হেক্টর জমি অনাবাদি জমি হিসেবে পড়ে ছিল।
বর্ষাকালে জলাবদ্বতার কারণে আমন ধানের চাষাবাদ এবং বোরো মৌসুমে পানির অভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব হত না। এই বছর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক মাহালিয়া গরল খালটির পূনঃখননের ফলে জলাবদ্বতার নিরসন হওয়ায় কৃষকগন চলতি আমন মৌসুমে চাষাবাদ শুরু করছে এবং কৃষকের মূখে হাসি ফুটেছে। স্থানীয় কৃষকেরা আরো জানান যে, খাল খননের ফলে খাল গভীর ও প্রসস্থ হওয়ায় নিয়মিত জোয়ারের পানিও ঢুকতেছে তাই তারা আশাবাদী আগামী বোরো মৌসুমে সেচের পানি সংকটে পড়বে না।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), দোহাজারী জোনের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ বেলাল হোসেন জানান, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ‘ভূ-পরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় নয়াখালটি ১২কিঃমিঃ পুনঃ খনন করা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৪,০০০ একর জমি জলাবদ্বতা থেকে মুক্ত হয়ে সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে।
উক্ত খালে ইতোমধ্যে ১টি ১.৫ কিউসেক সৌরচালিত এবং ২টি ১ কিউসেক ও ১টি ২ কিউসেক বিদ্যুৎচালিত পাম্প স্থাপনসহ মোট ৫,০০০ মিটার ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩৫০ একর অনাবাদি জমিকে আবাদে রূপান্তর করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরও ১৪,৬০০ মিটার ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে ৩টি ১.৫ কিউসেক সৌরচালিত, ৩টি ১ কিউসেক, ২টি ২ কিউসেক এবং ২টি ৫ কিউসেক বিদ্যুৎচালিত পাম্প অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এতে আরও ৯৫০ একর অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
বৈলতলীর কৃষক মোঃ ফোরকান বলেন, “খাল পুনঃখননের আগে বর্ষায় ফসল তলিয়ে যেত, শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানি পাওয়া যেত না। এখন সেচনালা নির্মাণের ফলে আমরা সারা বছর আখ, ধান, সবজি, ফুল চাষ করছি। খরচ কমেছে, আয় বেড়েছে”। তিনি আরো বলেন- “এই খাল পূর্ন খননের ফলে এ অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে”।
চর খাগরিয়ার কৃষক আবু তাহের টিপু বলেন, “স্বাধীনতা পরবর্তী থেকে পাইপ লাইন নির্মাণ ও খাল পুনঃখননের পূর্ব পর্যন্ত আমাদের স্কীমের প্রায় ২০০ একর জমি অনাবাদি ছিল বিএডিসির মাধ্যমে খাল খনন ও খালের পানি ব্যবহার করে সৌরচালিত সেচযন্ত্র ও পাইপ লাইন ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে জমিতে সেচ দেওয়া যায় এবং বিদ্যুৎ খরচ লাগেনা বিধায় আমাদের ফসল উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়ে।
প্রকল্প পরিচালক, জনাব প্রকৌ: মোঃ নূরুল ইসলাম জানান যে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সাতকানিয়া উপজেলায় মাহালিয়া গরল খালটির ১২ কিঃমিঃ খনন করা হয়েছে এবং চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় আরও অনেক স্কীম গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় কৃষকগন পতিত জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে আবাদে নিয়ে আসছে এবং বিএডিসি প্রকল্পের মেন্ডেড অনুযায়ী স্থানীয় কৃষকদের সহযোগীতা করে যাচ্ছে। আশা করা যায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি আবাদে আসবে এবং কৃষকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এখন খালগুলোর মাধ্যমে কৃষিপণ্য ও গৃহস্থালি জিনিস নৌপথে পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে, যা যোগাযোগ ও স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে। খালের পানি, প্রাণ ও পরিবেশে ফিরে আসা এই জীবনচঞ্চলতা যেন প্রকৃতির আপন বৈশিষ্ট্যই পুনরুদ্ধার করেছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমীন খান বলেন- “বিএডিসি সমগ্র বাংলাদেশে সার, বীজ ও সেচ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে”। বিএডিসি এর চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাহালিয়া গরল খাল পুনঃ খননে শুষ্ক মৌসুমে কৃষকেরা তাদের জমিতে সেচ সুবিধা পাবে। এর ফলে ঐ অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন বাড়বে। এই সাফল্য বিএডিসির সফল উন্নয়ন কার্যক্রমের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত”।
আমার বার্তা/এল/এমই