
দিনাজপুরের মেয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে জেলাজুড়ে। দলের চেয়ারপারসনকে হারিয়ে শোকাহত দলীয় নেতাকর্মীরা। শোক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মাঝেও।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা-ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা গনেশতলা বিএনপির জেলা দলীয় কার্যালয়ে আসতে শুরু করেন। প্রিয় নেত্রীকে বিদায়ে তাদের চোখ অশ্রুসিক্ত।
দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, আমাদের দিনাজপুরের কন্যা বিএরপির চেয়ারপারসন ছাড়া আমরা কিছুই বুঝি না। তাকে দিনাজপুর -৩ (সদর) আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর মাত্র কয়েকদিন আগেই আমরা কয়েকজন জেলার নেতা তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তার শিশুসুলভ আচরণ আমাদের মোহিত করেছিল। আমরা দিনাজপুরের মানুষ তাকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে নির্বাচিত করার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। আমদের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। জাতির বড় প্রয়োজনের সময়ে তাকে হারালাম। তবে এই দেশ ও জাতি যতদিন থাকবে, মানুষ তাকে ততদিন মনে রাখবেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহম্মেদ কচি বলেন, দিনাজপুরের মেয়ে হয়ে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়েছে তখনই তিনি দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন, এটা আমাদের জন্য গৌরবের। আমরা তাকে সম্মান করেছি। এমন নেতা আর জন্মাবে না। রাজনীতির অঙ্গনে আমরা আজ একজন অভিভাবক হারালাম। এ সময়ে তার বড় বেশি প্রয়োজন ছিল।
জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মোকাররম হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। দিনাজপুরে মেডিকেল কলেজ, জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন হাসাপাতাল ও রিচার্স সেন্টার, শিক্ষাবোর্ডসহ যত উন্নয়ন হয়েছে সব হয়েছে দেশনেত্রীর হাত ধরে। উনার যে স্বপ্নগুলো রয়ে গেছে তা বাস্তবায়ন করবো।
দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা রওশনারা ছবি বলেন, তিনি যেমন দেশের জন্য গর্বের ছিলেন, তেমনি আমরাও গর্ব করে বলতাম বেগম খালেদা জিয়া এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বড় অসময়ে চলে গেলেন।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালের ৩৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চিরবিদায় নেন তিনি। এদিন সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
বেগম খালেদা জিয়ার দিনাজপুরে বেড়ে ওঠা:
ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার সুবাদে পরিবার নিয়ে দিনাজপুরে আসেন। তারা দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। মায়ের নাম বেগম তৈয়বা মজুমদা। বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম নাম খালেদা খানম পুতুল। ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ সালে দিনাজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়। পরে তারা শহরের বালুবাড়ী শহীদ মিনার মোড়ে তৈয়বা ভিলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। বাড়িটি বর্তমানে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। সেই বাড়িটিতে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল চলছে। বাবা, মা ও বড় বোনের কবর রয়েছে দিনাজপুর ফরিদপুর গোরস্থানে।
বেগম খালেদা পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন এরপর তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। একই বছর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসের পূর্বে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে (বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি কলেজ) পড়াশোনা করেন।
দিনাজপুরে প্রথম প্রার্থী হওয়া:
দিনাজপুর শহরে খালেদা জিয়ার জন্ম ও শৈশবের বেড়ে ওঠা হলেও রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো এই এলাকার জনপ্রতিনিধি হতে প্রার্থী হননি। সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার বড় বোন খুরশীদ জাহান হক।
নিজের জন্মস্থানে এবার প্রথম প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ (সদর) আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র গত ২৮ ডিসেম্বর জমা দিয়েছিলেন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তাকে নির্বাচিত করার জন্য অধীর আগ্রহে মুখিয়ে থাকা দিনাজপুর বাসীর স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।
আমার বার্তা/এল/এমই

