বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় বিক্ষোভের মুখে শনিবার (২ নভেম্বর) বন্ধ হয়ে যায় দেশনাটক দলের ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী। এদিন নাট্যদলটির প্রদর্শনী চলার সময়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাটক বন্ধের নির্দেশ দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
এদিকে বিষয়টি সরগরম করে তোলে সামাজিকমাধ্যম। নেটাগরিকদের অনেকেই ক্ষোভ ঝাড়েন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের ওপর। কেননা, বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যদিও জামিল আহমেদ নাটকটির প্রদর্শনী চালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।
রোববার (৩ নভেম্বর) সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি জানান, দর্শকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নাটক বন্ধ করতে হয়েছিল তাকে।
জানা গেছে, দেশনাটকের সিনিয়র সদস্য এহসানুল আজিজ বাবু ছাত্র আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্র আন্দোলন বিরোধী পোস্ট দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এমনটা করেছেন তারা। মূলত আওয়ামী দোসরদের বিশৃঙ্খলার কারণেই শিল্পকলার নাটক বন্ধ করতে বাধ্য হন ডিজি সৈয়দ জামিল আহমেদ।
নাটক প্রদর্শনী বন্ধের পর ইস্যুটি নিয়ে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিভিন্নজন বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়েে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কথা বলেন, নাট্যকার, একুশে পদক প্রাপ্ত অভিনেতা, নাট্য পরিচালক ও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চ আন্দোলনের পথিকৃৎ মামুনুর রশীদ। বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত ৫৩ বছরে এমনটি হয়নি। একটি চলমান নাটক বন্ধ করে দেয়া হয় কিভাবে? শুনলাম নাট্য দলটির একজন নাকি ফেসবুকে নানা বিতর্কিত কথা লিখেছিল। যদি তাই হবে তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। দলবল নিয়ে হামলা করে হুমকি দিয়ে কেন প্রদর্শনী বন্ধ করা হবে? যে বা যারা এটি করেছে আমি বলব, তারা অপরাধ করেছে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা নাট্যকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী রাকায়েত বলেন, চলমান একটি নাটক কেন বন্ধ করে দেওয়া হবে? প্রতিবাদ যে কেউ করতে পারে, তাই বলে একটি প্রদর্শনী যখন চলে তা বন্ধ করে নয়। কেউ যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে নাটক শেষে তার বিচারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে কিন্ত তা না করে প্রদর্শনীই বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমি একদমই প্রদর্শনী বন্ধের পক্ষে নই।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা, পরিচালক, লেখক ও নাট্যদল নাট্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা তারিক আনাম খান বলেন, আসলে বিষয়টি সত্যই অনেক দুঃখজনক। অনেক পরিশ্রম, ত্যাগের পর শিল্পকলায় বেশ কয়েকটি নাট্যমঞ্চ তৈরি হয়েছে। কিন্তু হুট করে এখন সেখানে হুমকি দিয়ে নাটক প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়াটা বেশ কষ্ট দিয়েছে আমাকে। কেউ যদি কোনো ভুল করে, তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। কিন্ত তা না করে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নাটক প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়াটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। একজন লোকের কারণে কেনো দর্শক থেকে শুরু করে পুরো দল সাফার করবে! আমি যতটুকু জেনেছি দেশ নাটকে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা বলেছিলেন যিনি একটি উসকানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কিন্ত পরে তা কতদূর কী হয়েছে, আমি জানি না। একজন বাদে দলটিতে অনেকেই আছে যারা ছাত্র আন্দলনে রাজপথে নেমেছিল। তাহলে একজনের জন্য কেন নাটক প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হবে? আমি চাই বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিক, যাতে পরবর্তীতে কেউ যেন এইসব কর্মকাণ্ড করতে না পারে। পাশাপাশি যেন কোনো নাটকের প্রদর্শনী বন্ধও না হয়।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা নাট্যকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী রাকায়েত বলেন, চলমান একটি নাটক কেন বন্ধ করে দেওয়া হবে? প্রতিবাদ যে কেউ করতে পারে, তাই বলে একটি প্রদর্শনী যখন চলে, তখন তা বন্ধ করে নয়। কেউ যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে নাটক শেষে তার বিচারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্ত তা না করে প্রদর্শনীই বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমি একদমই প্রদর্শনী বন্ধের পক্ষে নই। সূত্র: আরটিভি
আমার বার্তা/এমই