কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শুরু থেকেই পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে ভারত। তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ তদন্তে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছে ইসলামাবাদ। তারপরেও কোনো প্রমাণ ছাড়াই হামলার জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী করে আসছে ভারত। এ নিয়ে দিল্লির কিছু পদক্ষেপ উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর হুমকি-ধমকির মধ্যে প্রতিদিনই সেনাদের মধ্যে সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই দেশ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালিয়েছে। যুদ্ধের যে আশঙ্কা তা দিনদিন বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে। এ অবস্থায় ভারতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে ৫৭টি মুসলিম দেশ নিয়ে গঠিত সংস্থা ওআইসি।
সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবাল এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওআইসি। সংস্থাটি বলেছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ভিত্তিহীন অভিযোগ দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তাজনিত উত্তেজনা আরও বাড়াচ্ছে।
যৌথ বিবৃতিতে ওআইসি আরও জানায়, ভারতের এই ধরনের অভিযোগ ইতোমধ্যেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলছে। তবে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট এবং আমরা যে কোনও রূপের সন্ত্রাসবাদকে নিন্দা জানাই, তা যেই করুক এবং যেখানেই করুক।
কাশ্মির ইস্যুতে সংস্থাটি বলে, দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত এই সমস্যা দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তার মূল অন্তরায়। জম্মু ও কাশ্মিরের মানুষ এখনও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী তাদের নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত।
পরিস্থিতি শান্ত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে হামলায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করে একাধিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তানিদের ফিরে যেতে বলা হয়েছে। সব ধরনের বাতিল হয়েছে ভিসা। সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতও করেছে ভারত।
পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে একই ধরনের পদক্ষেপ দিয়েছে পাকিস্তানও। সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতে ভারতের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের আকাশসীমা নিষিদ্ধ, সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ জানান, সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতের পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে দেখছে পাকিস্তান। তিনি বলেছেন, যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ হুঁশিয়ার করে বলেন, যদি পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, আমাদের থামাতে কেউ পারবে না। মোদি যদি উত্তেজনা বাড়ানোর পথ বেছে নেন, তবে আমরা তাকে তার বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করব। আমরা আমাদের বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করেছি। কারণ এখন সামরিক আক্রমণ আসন্ন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের ‘রক্ত ফুটছে’। হামলায় জড়িত প্রত্যেককে কঠিনতম শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। শুধু তাই নয়, সীমান্তে যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় নিজের তিন বাহিনীকে অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছেন মোদি।
বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকরা বলছেন, পাকিস্তান যে কাশ্মীরা হামলা চালিয়েছে, তার জোরালো প্রমাণ এখনও দেখাতে পারেনি ভারত। এ অবস্থায় দিল্লি কোনো পদক্ষেপ নিলে বিশ্ব মঞ্চে তার ন্যায্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চমলান সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা যদি বাড়তে থাকে তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে।
আমার বার্তা/জেএইচ