দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শুল্ক ছাড় পাওয়ার বিষয়ে খুব সীমিত সাফল্য পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো তার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা বজায় রেখেছেন। যদিও আসিয়ান দেশগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টায় ব্যস্ত আছে।
এপ্রিলে ঘোষিত ব্যাপক শুল্ক (পরে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত) আরোপের পর আসিয়ানের বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্র মে মাসজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ব্যস্ত ছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এসব প্রচেষ্টার স্পষ্ট কোনো ফলাফল মেলেনি।
মালয়েশিয়ার মায়ব্যাংকের বিশ্লেষক চুয়া হাক বিন নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘বিভক্ত করে শাসন’ কৌশল নিয়েছে। প্রতিটি আসিয়ান দেশকে ভিন্ন ভিন্ন শুল্কহার ও অভিযোগের মুখে ফেলা হচ্ছে, ফলে তাদের পক্ষে সম্মিলিতভাবে আলোচনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সোমবার কুয়ালালামপুরে আসিয়ান নেতাদের এক বৈঠকে জানান যে, তিনি ট্রাম্পকে চিঠি দিয়ে একটি ইউএস-আসিয়ান সম্মেলনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যেন শুল্কের প্রভাব কমানো যায়।
বাস্তবে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলো যৌথ শক্তিকে কাজে লাগানোর চেয়ে নিজেদের আলাদা আলাদা আলোচনার পথ বেছে নিচ্ছে। তারা কেবল প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজ নিজ দ্বিপাক্ষিক ছাড়পত্র আদায়ের চেষ্টা করছে।
মায়ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ২০টি দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনা চালাচ্ছে, যার মধ্যে আছে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।
থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন এই তালিকায় নেই।
কম্বোডিয়া সবচেয়ে বেশি (৪৯ শতাংশ) শুল্কের মুখোমুখি, সিঙ্গাপুর সবচেয়ে কম (১০ শতাংশ)।
ভিয়েতনাম ৪৬ শতাংশ শুল্কের হুমকির মুখে রয়েছে এবং জুলাইয়ের আগে চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য সবচেয়ে আগ্রহী বলে মনে করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ভিয়েতনামের বাণিজ্যমন্ত্রী গুয়েন হং ডিয়েনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দ্বিতীয় দফা আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যান।
মূলত ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশটি এরই মধ্যে বোয়িং কোম্পানি থেকে বিমান কেনা, এক্সনমোবিল থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েস্টিংহাউজ ইলেকট্রিকের সঙ্গে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। ভিয়েতনাম চীনা পণ্যের ট্রানশিপমেন্ট দমনেও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মালয়েশিয়া এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু করছে।
প্রথম দফার আলোচনা ওয়াশিংটন ও দক্ষিণ কোরিয়ার এপেক সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত হলেও কোনো চুক্তি হয়নি।
মালয়েশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জাফরুল আজিজ জানিয়েছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে এবং আমরা আশাবাদী যে ফলাফল মালয়েশিয়ার পক্ষে যাবে।
ইন্দোনেশিয়া ৬০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। দেশটি এরই মধ্যে মার্কিন প্রশাসনকে খুশি করতে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস, অপরিশোধিত তেল, সয়াবিন ও গম আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে।
জ্বালানিমন্ত্রী বাহলিল লাহাদালিয়া জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি আমদানি ১০ বিলিয়ন পর্যন্ত বাড়াতে পারে এবং সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি কমিয়ে সেই চাহিদা পূরণ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিভক্ত করে শাসন কৌশল আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে একতা গড়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে তারা শুল্ক প্রশ্নে যৌথ অবস্থান নিতে পারছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান এখনো পর্যন্ত তাদের সম্মিলিত দরকষাকষিতে শক্তি প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।
ম্যাক্রোইকোনমিক বিশ্লেষণ সংস্থা বিএমআই -এর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ঝুঁকি বিশ্লেষণ প্রধান ড্যারেন টে নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, আসিয়ান এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালাতে তাদের সম্মিলিত শক্তি ব্যবহার করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, এই বৈশ্বিক বাণিজ্য দ্বন্দ্বে কারোরই আসলে জয় নেই, সবাই কোনো না কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।