গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে এসেছে সরাসরি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে। মার্কিন সেনাদের মোতায়েনের মধ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে এক যৌথ নিরাপত্তা কাঠামো, যাতে যুক্ত থাকবে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশও। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের নিশ্চয়তাই শেষ পর্যন্ত হামাসকে চুক্তিতে রাজি করাতে বড় ভূমিকা রেখেছে। সব মিলিয়ে, বহু প্রতীক্ষিত এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
পেন্টাগনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২০০ সেনা ইতিমধ্যে ইসরায়েলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তারা সেখানে অবস্থান করবে মূলত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা সমন্বয়ের দায়িত্বে। এজন্য একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। তবে এও স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, কোনো মার্কিন সেনা গাজার ভেতরে প্রবেশ করবে না।
মার্কিন সেনাদের সঙ্গে যুক্ত হবে কাতার, মিশর, তুরকিয়ে ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেনারা। এই দেশগুলোর সেনারাই গাজার ভেতরে প্রবেশ করে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখার কাজে অংশ নিতে পারে। যৌথ এই নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য হলো চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন না হয় তা নিশ্চিত করা। এ ধরনের একটি পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরেই ‘জরুরি প্রয়োজন হলে’ বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত রেখেছিল।
হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা অবশেষে এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে পেরে সন্তুষ্ট। তবে কিছু অংশে পরিবর্তন আসতে পারে।" তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, "যতই ইতিবাচক অগ্রগতি হোক না কেন, এটি এখনো খুব নাজুক একটি সময়। বহু উপায়ে পরিস্থিতি আবার খারাপ হয়ে যেতে পারে।"
এদিকে, সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে এক মার্কিন কর্মকর্তা আগেই জানিয়েছিলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য ওয়াশিংটন প্রায় ২০০ সেনা পাঠাবে। একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আল-জাজিরার ওয়াশিংটন সংবাদদাতা হেইডি ঝৌ-কাস্ত্রো। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন, যদিও তাঁরা আবারও পরিষ্কার করেছেন যে কোনো মার্কিন সেনা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রবেশ করবে না।
রয়টার্সও দুই মার্কিন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই ২০০ সেনা যৌথ টাস্কফোর্সের মূল ভিত্তি গড়ে তুলবে। সেখানে মিশর, কাতার, তুরকিয়ে ও সম্ভবত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেনারাও যুক্ত হবেন।
এখনো নির্ধারণ হয়নি, মার্কিন সেনারা ঠিক কোথায় অবস্থান করবে। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা একটি নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপন করবে, যাতে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় রক্ষা করা যায় এবং অপ্রত্যাশিত সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়।
সব মিলিয়ে, যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন নিয়ে যে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা ছিল, সেটি কাটতে শুরু করেছে। তবে এই চুক্তি কতটা টেকসই হবে, তা নির্ভর করছে শুধু কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতির ওপর নয়, মাঠপর্যায়ে এই যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতার ওপরও।
এদিকে, গাজায় বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়েছে। শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি সরকার নিশ্চিত করেছে, তারা হামাসের সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ অনুমোদন করেছে।
আল জাজিরা আরবির গাজাভিত্তিক এক সংবাদদাতা জানিয়েছেন, অনুমোদনের পর থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে ইসরায়েলের বিমান হামলা বন্ধ রয়েছে। অবরুদ্ধ অঞ্চলের মানুষ আপাতত কিছুটা স্বস্তি পেলেও পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত।
কারণ, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে সময় লাগবে আরও প্রায় ২৪ ঘণ্টা। অর্থাৎ, হামলা বন্ধ হওয়া স্থায়ী কি না তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
আমার বার্তা/এমই