
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাজেট সংশোধন করে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সংশোধিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব জানান, নতুন সংশোধিত বাজেটে যে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে, আমরা আশা করছি এখন যেহেতু শীতকালের সবজি উঠে গেছে, এটা আরও কমবে। আপনারা জানেন, গত বছরের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ৭ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে। চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭-এ নেমে আসবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে একই সময়ের জন্য দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করে চলতি অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আদায় সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে আহরিত হবে ৫ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরিত হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত সূত্র থেকে আহরিত হবে ২০ হাজার কোটি টাকা। মোট সরকারি ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা থেকে সেটা ২ হাজার কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে রিভাইজ বাজেটটা হচ্ছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি মানে এডিপির আকার ২ লাখ কোটি টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। মূল বাজেট ছিল ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা, এটা জিডিপির আগে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল। বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় বাজেটের তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। সংশোধিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক স্থানীয় মুদ্রায় আহরণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৭২ হাজার কোটি টাকা এবং ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় সহ অন্যান্য ব্যয় ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। মোট সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা, জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে সংগৃহীত হবে ৬৩ হাজার কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেট যাতে আমাদের নিজেদের ওপর নির্ভরতা, আমরা যাতে আরও বেশি বাড়াতে পারি। আমরা অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঋণ নিয়ে আমরা অনেক প্রজেক্ট করি, সেগুলো থেকে আস্তে সরে এসে— কত বেশি নিজস্ব অর্থায়নে কত বেশি প্রজেক্ট নেওয়া যায়, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন।
‘এডুকেশন বিশেষ করে কোয়ালিটি অব এডুকেশনের কথা উনি খুব বলেছেন। এটা সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। কোয়ালিটি এডুকেশনটা আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগের বছরগুলোতে আমাদের ফোকাসটা ছিল— আমরা কীভাবে এডুকেশন এসটাবলিশমেন্ট বাড়াবো, বিভিন্ন ধরনের স্কুল, কলেজ বা এমপিওভুক্তিকরণ এগুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আসলে আমাদের এডুকেশনের কোয়ালিটিটা রেপিডলি নিচে নেমেছে। এখানে প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন। আরেকটা হচ্ছে পল্লী উন্নয়ন— বাংলাদেশের কৃষকরা এ বছর রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করছে, তাদের যাতে ফোকাস করে। তারা যাতে এই বাজেটের বেনিফিটটা পান বা তাদের জীবনযাত্রাকে যাতে আরও বেটার করা যায়। পল্লী উন্নয়ন যত ফোকাস দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে উনি বলেছেন।’
উনি (প্রধান উপদেষ্টা) তরুণদের উপর ফোকাস দিতে বলেছেন— বাংলাদেশ একটা তারুণ্যের খনি। আমাদের এই তরুণদের যেভাবেই হোক, তাদের প্রতি ফোকাস দিতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীদের ওপরে বাজেটের আরও ফোকাস বাড়াতে বলেছেন এবং তাদের সার্বিক উন্নতি আসলে দেশের উন্নতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং এটা উনি খুব ভালোভাবে তুলে ধরেছেন। আরেকটা হচ্ছে যে স্থানীয় উৎপাদন— বাংলাদেশের লোকাল প্রোডাকশন অনেক কিছুই আমরা করি, আবার অনেক কিছু আমরা করি না। আমরা যাতে সব কিছুতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি, সে বিষয়ে উনি লোকাল প্রোডাকশনের ওপর জোর দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা স্বাস্থ্য খাতের ওপর জোর দিয়েছেন।
আমার বার্তা/এমই

