ই-পেপার বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

যৌতুক উপহার নয় ভিক্ষাবৃত্তি

কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী
৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৪

মানুষের মনুষ্যত্ব ও নীতি নৈতিকতা দিনদিন লোপ পাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে মানুষের অধপতন ও চারিত্রিক বিপর্যয় ঘটছে। এ বিপর্যয় থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও মানুষের মনুষ্যত্ববোধ কে জাগ্রত করা। বিবাহ একটি সামাজিক বন্ধন। এ পবিত্র বন্ধন হচ্ছে- আল্লাহর হুকুম এবং হজরত মুহাম্মাদুর রাসূল (দ.)’র সুন্নাত। এ বন্ধন মানুষকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি একে অপরের পরিপূরক। বর্তমান সময়ে এ বন্ধন কে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছে এক ধরণের অসভ্য সমাজ। যৌতুক একটি ঘৃণিত ও পাপিষ্ঠ কাজ। যৌতুক সামাজিক কুপ্রথা ও কুসংস্কার। যৌতুকের অভিশাপে শতশত মা-বোন অকালে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। এজন্য কোন ধর্মকে দায়ী করা যাবেনা। প্রতিটি ধর্ম শান্তির কথা বলে।

বর্তমানে আমরা লেবাসে ধার্মিক; প্রকৃত অর্থে- বকধার্মিক। যৌতুককে ঘিরে প্রতি দিন-রাত ঘটছে নারী নির্যাতন আর নিপীড়নের বীভৎস চিত্র। শারীরিক মানসিক নির্যাতনের বলির পাঁঠা হচ্ছে নারীরা। নারী নির্যাতনের আর্তনাতে কাঁদছে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস। যৌতুক হলো- বর পক্ষ দর কষাকষির মাধ্যমে জোরজবরদস্তি ভাবে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজ, মোটরযান ইত্যাদি মূল্যবান জিনিস পত্র কনে পক্ষ হতে আদায় করার চুক্তি। মানুষ কতটা অমানবিক হলে কনে পক্ষ থেকে টাকা চায়, আমার বুঝে আসেনা। এটা সভ্য সমাজের কাজ নয়। একটা মেয়েকে লালন-পালন, পড়াশুনা এবং শিক্ষিত একজন আদর্শবান নারী হিসেবে গড়ে তুলতে একজন বাবা-মায়ের কত পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয় তা বলার অবকাশ রাখেনা। আর উপযুক্ত করে বিবাহ দিতে গেলে মা-বাবার উপর নেমে আসে বিশাল টাকার ঋণের বোঝা। যার বাস্তব একটি ঘটনা আমি বর্ণনা করছি, যাতে আপনারা বিষয়টি বুঝতে পারেন।

একদিন আমি আর আমার প্রবাসী বন্ধু শাহাবুদ্দিন খান- পল্টন থেকে যাত্রাবাড়ী আসার জন্য এক ভদ্র লোকের রিকসায় উঠি। বঙ্গভবনের মোড় ঘুরতে জিজ্ঞেস করলাম, মামা কেমন আছেন। বললেন এই তো আছি। পারিবারিক অবস্থা জানতে চাইলাম। বলল বাবা! মেয়ে বিবাহ দিয়েছি এক মাওলানার সাথে । ১ লক্ষ টাকা নগদ দিয়েছি। সব মিলে ৩ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে কোন মতে জীবন চলছে। এ কথা গুনে অন্ধকার যুগের কথা মনে পড়ে গেল। ইসলাম নারী জাতিকে যতটুকু সম্মানের আসনে সমাসীন করেছেন; পৃথিবীতে আর কোন ধর্ম নারী জাতিকে এভাবে সম্মানিত করেনি। অনেক ধর্ম নারীকে উলঙ্গ করে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে; অথচ ছেলেরা পোশাক পরিধান করে শরীর আবৃত করে চলাফেরা করছে। যৌতুক প্রথার প্রধান কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে- অর্থলোভ ও সামাজিক দুর্নীতি।

ইসলামী শরিয়তে যৌতুকের কোন অস্তিত্ব নেই; যৌতুক গ্রহীতাকে ইসলাম জালিম হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। প্রকৃত অর্থে- বিবাহ হলো একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে নিষ্পন্ন বৈধ বন্ধন ও সামাজিক চুক্তি । বৈধ বৈবাহিক বন্ধন কে ইসলাম উৎসাহিত করেছে। একজন ব্যক্তি তখনই বিবাহ বয়সী হবেন; যখন মানসিক, দৈহিক ও আর্থিকভাবে বৈবাহিক জীবন নির্বাহ করতে সমর্থ হবেন। যৌতুক প্রথার প্রাদুর্ভাবের কারণে হাজারো সংসার অকালে ভেঙ্গে যাচ্ছে। কত নারী নিজেদের পরিবারকে বাঁচাতে হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করছে, কত নিষ্পাপ শিশু অকালে মা হারাচ্ছে, কত মা-বাবা অকালে মেয়ে হারাচ্ছে তা আসলেই আমাদের ভাবা উচিত, কত নারী নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করছে, কত নারী গাড়ী বা ট্রেনের নিচে পড়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করছে, কত নারী অবুঝ ছেলে সন্তানদের সাথে নিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করছে; এ দৃশ্য গুলো গা শিউরে ওঠার মত। এ নির্মম দৃশ্যপট প্রতিদিন ভেসে আসছে পত্র-পত্রিকার নিউজে ও টিভির পর্দায়। আজ আমরা যৌতুক নিচ্ছি; কাল বোনের কিংবা নিকটাত্মীয়দের বিবাহে ছেলে পক্ষকে যৌতুক দিচ্ছি। অর্থাৎ- যে লাউ সে কদু । এ বিষয়গুলো আমাদের বিবেক দিয়ে চিন্তা করা দরকার। যৌতুক প্রথা নারী নির্যাতনেরই এক বীভৎস রূপ। মুসলিম সমাজে যৌতুক প্রথার অস্তিত্ব ছিলো না। আধুনিকতার নামে এ প্রথাটি ইসলামে সংযোজিত হয়েছে; এটি ইসলামের কলঙ্কময় অধ্যায়। যারা অর্থলোভে পাত্রী গ্রহণ করতে চায়। যারা বছরের বিভিন্ন উৎসবে উপটোকন হিসেবে ভিক্ষা নিতে চায়। আসলেই তাঁরা মুসলমান নামধারী বেঈমান। এ রকম ভিক্ষাবৃত্তির স্থান ইসলামে নেই । বরঞ্চ যারা পরের হক নষ্ট করে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে লাঞ্ছনার স্বীকার হবে- এটাই ইসলামের বিধান।

ঈদ ও কুরবানিতে যারা ফকির মিসকিনের মত গরু-ছাগলের জন্য হাত পাততে চায়, নগদ টাকা চায়; তারা আসলে জন্মগতভাবে ফকির ও বদমাইশ। এটা তাদের হীনম্মন্যতা নয় বরঞ্চ মুদ্রাদোষ। যৌতুকের বিরূপ প্রভাবটা মূলত গরীব সমাজের উপর বেশি প্রভাব বিস্তার করে। এ কারণে এ পরিবার গুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঋণগ্রস্ত হয়। যৌতুকের জন্য যারা বিবাহ যুদ্ধে নেমে পড়েন। তারা নিশ্চয়ই নির্লজ্জ কাপুরুষ। কারণ তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব লোপ পায় এবং হিংস্রতা বৃদ্ধি পায়। তারা আসলেই মানবরূপী দানব। তারা মানুষের কাতারে পড়ে না। মানুষের মাঝে দানব বা হিংস্র প্রাণীর বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান হলে বুঝতে হবে; এরা নষ্ট জন্মের ফসল। এরা উর্বর মাটিতে বিনা ইনভেস্টে ফসল বুনতে চায়। অথচ এরা স্ত্রীকে সঠিকভাবে দেনমোহর প্রদেয় করে না। স্ত্রীকে ন্যায্য অধিকার দেয় না। ইসলাম, স্ত্রীকে স্বামীর কাছে আমানত হিসেবে ন্যস্ত করেছে; গোলাম বা দাসী হিসেবে নয়। যারা স্ত্রীকে আমানত হিসেবে না দেখে চাকরানি হিসেবে দেখে এরা ইসলামের শত্রু এবং প্রকৃত মুনাফিক। মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্মস্তরে অবস্থান করবে। মামলা-হামলা দিয়ে যৌতুক বন্ধ করা যাবে না। মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় না হলে এবং মনুষ্যত্ব ফিরে না আসলে যৌতুক প্রথা বন্ধ হবে না।

কবি কাজী নজরুল তাঁর নারী নামক কবিতায় লিখেছেন,

বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী;

প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী।

নারী সৃষ্টি সৃজনে, মননে শক্তি জোগায়। অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছতে সহায়তা করে। প্রতিটি মানুষের বিজয়ের পেছনে একজন নারীর অবদান থাকে চিরন্তনভাবে। অথচ আমরা এ নারী জাতিকে অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অবহেলা, অপমান করে যাচ্ছি। আসুন, আমরা যৌতুক মুক্ত সমাজ গড়ি। যৌতুকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করি।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কবি

আমার বার্তা/জেএইচ

আসন্ন নির্বাচন এবং ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা : সাকিফ শামীমের ভাবনা

বাংলাদেশে ২০২৬ সালের সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন উত্তাপ বাড়ছে, তখন দেশের অর্থনীতি

বাবা, তুমি আমার নীরব ভালোবাসা

আমার বাবাকে আমি অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলতে পারিনি— “বাবা, আমি তোমাকে অনেক

বিশ্ব বাবা দিবস : বাবা হচ্ছে সংসারের একজন বটবৃক্ষ

বিশ্বের প্রায় দেশেই জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করে আসছে। সে হিসেবে এবছর

এফবিসিসিআইয়ের সংস্কার উত্তর  নির্বাচন ও কিছু কথা

গত ২০ মে ২০২৫  তারিখে ব‍্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান গণ অভ‍্যুত্থানের মাধ‍্যমে গঠিত সরকার
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দিনাজপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে ৩৪ লাখ টাকা ছিনতাই নাটকের রহস্য উন্মোচন

বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কেজিপ্রতি চালের দাম বাড়ল ৫-৭ টাকা

সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ

বিচারপতি সিনহাকে তাড়ানোর সেই ঘটনা আপিল বিভাগে তুলে ধরলেন শিশির মনির

এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনে শিক্ষা উপদেষ্টা

দশ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনবে সরকার

আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে প্রসিকিউশন

বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে “ওয়ার্ল্ড ওশানস ডে ২০২৫” উৎযাপন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ

বিএনপি হয়তো ভাবছে, তারা অবধারিতভাবে ক্ষমতায় আসবে: সারজিস আলম

সম্ভাবনার নতুন দুয়ার পদ্মা সেতুর তিন বছরপূর্তি

যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে পাকিস্তান

ঢাকার আকাশে জমেছে মেঘ, বৃষ্টির সম্ভাবনা

পবিত্র আশুরার ছুটি কবে জানা যাবে সন্ধ্যায়

বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যার ৬ বছর আজ

দৌলতদিয়ার মাছ বাজারে পদ্মার এক কাতলের দাম ৩৯ হাজার টাকা

হজ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন ৫১৬১৫ হাজি

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলা বইমেলা

ইসরায়েলকে বাঁচিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, বললেন ট্রাম্প