ই-পেপার সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কারে সুইডেনের মডেল ও ডিজিটাল পেমেন্টের ভূমিকা

রহমান মৃধা:
১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৩

বাংলাদেশের পুলিশ সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি সুপরিকল্পিত ও যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুলিশ প্রশাসন সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে—যেমন আমলাতন্ত্রের প্রভাব, রাজনৈতিক প্রভাব এবং দুর্নীতি। তবে সুইডেনের মতো দেশগুলির পুলিশের কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশে এমন একটি পুলিশ সংস্কার প্রণয়ন করা যেতে পারে, যা জনকল্যাণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

সুইডেনের পুলিশ প্রশাসনের মডেল: সুইডেনের পুলিশ প্রশাসনকে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত করা হয়, যা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের প্রতি অটল থাকার সুযোগ করে দেয়। সুইডেনে পুলিশের উপর সরকারের বা রাজনৈতিক মহলের সরাসরি কোনো প্রভাব নেই।

১. সংবিধানিক ও আইনি কাঠামো: সুইডিশ পুলিশ প্রশাসন সংবিধান ও আইনের দ্বারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। তাদের কার্যক্রমের লক্ষ্য হল জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। পুলিশ প্রধান সরাসরি সরকারের অধীনে না থেকে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করে। সুইডেনে “পুলিশ অথরিটি” একটি একক সংস্থা হিসেবে কাজ করে, এবং তারা সরাসরি মন্ত্রীসভা থেকে স্বাধীন।

২. প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা: সুইডেনে পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় যা শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ নয়, বরং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান, জনসেবা ও নৈতিক আচরণ বিষয়ে গভীর জ্ঞান দেয়। এই প্রশিক্ষণের ফলে তারা সাধারণ জনগণের কাছে সহযোগিতামূলক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।

৩. প্রভাবমুক্ত ও স্বচ্ছতা: পুলিশ প্রশাসনে কোনোরকম রাজনৈতিক প্রভাব বা পক্ষপাতিত্ব নেই, যা তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। পুলিশের কার্যক্রম জনসম্মুখে স্বচ্ছ এবং সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। এই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কারণে জনগণ পুলিশের উপর আস্থা রাখতে পারে।

৪. জনমুখী পদ্ধতি: সুইডেনের পুলিশ প্রশাসন জনকল্যাণমুখী, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ জনগণকে সাহায্য করা। পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা হয়, যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অশান্তি তৈরি না হয়। তারা সঠিকভাবে তথ্য দিয়ে, গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং মানবিক আচরণের মাধ্যমে সেবা দেয়।

>> বাংলাদেশে প্রস্তাবিত সংস্কার মডেল:

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, পুলিশ সংস্কারের মাধ্যমে একটি জনকল্যাণমূলক ও সেবা প্রদানে সক্ষম প্রশাসন তৈরি করা সম্ভব। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:

১. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন: বাংলাদেশে পুলিশের উপর রাজনৈতিক প্রভাব কমাতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এই কমিশন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং আইনগতভাবে সুরক্ষিত থাকবে। এই কমিশনের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও শাস্তি নির্ধারণ করা হবে।

২. মানবিক প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন: বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যদের অধিকতর মানবিক এবং জনকল্যাণমূলক আচরণ শিখানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। সুইডেনের মতো প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার এবং নৈতিক আচরণ সম্পর্কে বিশেষ জোর দেওয়া যেতে পারে।

৩. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা: পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী মনিটরিং সিস্টেম তৈরি করতে হবে। স্বতন্ত্র নিরীক্ষা সংস্থা এবং অনলাইন রিপোর্টিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, যেখানে জনগণ সহজেই পুলিশি কর্মকাণ্ডের সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে এবং অভিযোগ জানাতে পারবে।

৪. জনগণের অংশগ্রহণ: পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্প্রদায়ের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় সভা এবং কর্মশালা আয়োজন করা উচিত। জনগণকে আইন প্রয়োগ প্রক্রিয়ার অংশীদার করা হলে তাদের আস্থা বাড়বে এবং তারা পুলিশের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখাবে।

৫. দুর্নীতি প্রতিরোধ: পুলিশের ভেতর দুর্নীতি দূর করার জন্য কঠোর আইন ও নীতি গ্রহণ করতে হবে। যেমন, বেতন কাঠামো উন্নত করা, অপ্রয়োজনীয় প্রশাসনিক চাপ কমানো এবং দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।

৬. ক্যাশ লেনদেনের সীমাবদ্ধতা ও ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের ব্যবহার: দেশের সকল সেক্টরে ঘুষ লেনদেন রোধে ক্যাশ লেনদেনের উপর নির্ভরশীলতা কমানো অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। ক্যাশ লেনদেনের ফলে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া গোপনে করা সহজ হয়, যা প্রতিরোধ করা কঠিন। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের বাধ্যতামূলক ব্যবহার করলে প্রতিটি লেনদেনের রেকর্ড রাখা সম্ভব হবে, এবং এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। এছাড়া, এই পদ্ধতি সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে। সকল সেক্টরে যদি সরকার এ বিষয়টির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়, তবে এটি দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কার্যকারিতা ও সফলতার নিদর্শন:

১. জনকল্যাণের জন্য সেবা: একটি দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতাপূর্ণ পুলিশ প্রশাসন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করবে। জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা বৃদ্ধির ফলে তারা পুলিশের সাথে সহযোগিতা করতে উৎসাহী হবে।

২. দুর্নীতি হ্রাস: একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতাপূর্ণ প্রশাসন নিশ্চিত করা গেলে পুলিশের ভেতরে দুর্নীতির মাত্রা হ্রাস পাবে, ফলে সাধারণ জনগণ সঠিক বিচার ও সেবা পাবে।

৩. আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা: সুইডেনের মতো দেশের উদাহরণ অনুসরণ করলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পুলিশি সেবা দিতে সক্ষম হবে, যা দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং মানবাধিকারের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশে পুলিশ প্রশাসনে সংস্কার আনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সুইডেনের মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি স্বাধীন, দক্ষ, মানবিক এবং স্বচ্ছ পুলিশ প্রশাসন গঠন করা যেতে পারে। এই সংস্কার শুধু আইন প্রয়োগেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং জনগণের কল্যাণে সঠিক ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে, যা জনগণের কাছে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

আমার বার্তা/জেএইচ

এনটিআরসিএ’র নিয়োগ বঞ্চিত ১-১২ তম ব্যাচের নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতার দ্রুত সামাধান চাই

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে কাজ করার লক্ষ্যে গঠিত

নিরাপত্তাহীনতার নাগপাশে বন্দি বাংলাদেশ

ঘরে-বাইরে এক অদ্ভুত আতঙ্ক। জনতার চোখে বিস্ময় নয়, ভয়। বৃদ্ধের কাঁপা ঠোঁটে আস্থার কথা নেই,

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাস

বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি প্রধান উন্নয়নশীল মিশ্র অর্থনীতি। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি

রাষ্ট্রের অর্জিত স্বাধীনতা ও তার রক্ষাকবচ

রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা রক্ষা করা বলতে সাধারণত আমরা কোনো রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমারেখা ও সার্বভৌমত্বকে বহিঃশত্রুর হাত
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মে মাসে এলো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স ২৯৭ কোটি ডলার

ইশরাকের শপথ ইস্যুটি পুরোটাই ছিল ইসির এখতিয়ারাধীন: আপিল বিভাগ

নগদের নিয়োগে অনিয়মের সত্যতা মিলেছে, স্ত্রীসহ আতিক মোর্শেদকে দুদকে তলব

কেন ভারতের মুসলমানদের বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয়

বিকেল ৪টা নয়, ৩টায় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা

৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা সোমবার

ডিএসআর কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা বাড়ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধীন দপ্তরের

জামায়াতের নিবন্ধন ফেরতের সংক্ষিপ্ত আদেশ প্রকাশ

পশ্চিমা বিশ্ব ১৯ মাস আগে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে

সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে ফের ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ, কড়া প্রতিক্রিয়া

উপদেষ্টা পরিষদ ছাত্রদের ভুল পথে পরিচালিত করছে: মেজর হাফিজ

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বসবেন সোমবার

ক্রিকেটারদের অতিরিক্ত চাপ দিতে চান না বিসিবি সভাপতি

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমাদেরকেই করতে হবে

নাগরিক সচেতনতায় ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভূমিকা রাখতে আহ্বান চসিক মেয়রের

নদীখেকো শাহ সিমেন্টকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি টিআইবির

ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে নারীকে লাথি মেরে বহিষ্কৃত জামায়াতের সেই কর্মী গ্রেপ্তার

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দূর্নীতির অভিযোগে বিআরপি নেতা নাজমুল করিম বহিস্কৃত

বাড়বে জাপানি বিনিয়োগ, পাঠানো যাবে ১ লাখ কর্মী: শফিকুল আলম

দেশের প্রথম মনোরেল নির্মিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামে, সমঝোতা চুক্তি সই