ই-পেপার বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১

সময়ের সাথে সাথে বদলেছে ঈদ সংস্কৃতি

হেনা শিকদার:
৩০ মার্চ ২০২৫, ১৪:৪১

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। দীর্ঘ এক মাস সংযমের পর এই দিনটি আসে এক নতুন বার্তা নিয়ে। ছোটবেলার ঈদ আর এখনকার ঈদের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সময়ের সাথে সাথে আমাদের জীবনযাত্রায় যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি ঈদের সংস্কৃতিতেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। ছোটবেলার ঈদ মানেই ছিল এক অন্যরকম উন্মাদনা। নতুন জামা, নতুন জুতো, বন্ধুদের সাথে দেদার ঘোরাঘুরি, আর বড়দের কাছ থেকে পাওয়া সালামি – এই সবকিছু মিলিয়ে ঈদের দিনটা যেন এক স্বপ্নপুরী। সেই সময় ঈদের আনন্দ ছিল বাঁধভাঙা, কোনো চিন্তা বা ক্লান্তি সেই আনন্দে ভাগ বসাতে পারত না। সময়ের স্রোতে শৈশব পেরিয়ে কৈশোর, তারপর যৌবন এবং অবশেষে প্রৌঢ়ত্বে এসে সেই ঈদের আনন্দের তীব্রতা যেন কিছুটা হলেও স্তিমিত হয়ে আসে। কেন এমন হয়? বয়স বাড়ার সাথে সাথে কি সত্যিই ঈদের আনন্দ কমে যায়, নাকি আনন্দের সংজ্ঞাটাই বদলে যায়?

মনে পড়ে, ছোটবেলায় ঈদের চাঁদ দেখার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। আকাশে একফালি চাঁদ দেখা গেলেই চারিদিকে আনন্দের ঢেউ উঠত। আব্বু-আম্মুর সাথে বাজারে গিয়ে নিজের পছন্দের জামা-জুতো কেনার সেই উত্তেজনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। দর্জির দোকানে গিয়ে জামার মাপ দেওয়া, ঈদের আগের রাতে জেগে অপেক্ষা করা কখন সকাল হবে – এই স্মৃতিগুলো আজও মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। ঈদের সকালে ঘুম থেকে উঠে নতুন পোশাকে সেজে ঈদগাহে যাওয়ার সেই আনন্দ, বন্ধুদের সাথে কোলাকুলি করা, আর নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে এসে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে সালামি নেওয়ার সেই অনুভূতি – যেন এক অসাধারণ প্রাপ্তি ছিল।

দুপুরের খাবারের এলাহি আয়োজন, আত্মীয়-স্বজনদের আগমন, হাসি-ঠাট্টার রোল – সব মিলিয়ে ঈদ যেন এক মহা মিলনমেলা ছিল। বিকেলে বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়া, মেলায় নাগরদোলায় চড়া, আর নানা ধরনের মুখরোচক খাবার খাওয়া – এই ছিল ঈদের দিনের প্রধান আকর্ষণ। সেই সময় ঈদ মানেই ছিল শুধু আনন্দ আর খুশি। কোনো দায়িত্ব ছিল না, কোনো চিন্তা ছিল না, শুধু নির্মল আনন্দ উপভোগ করা।

কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঈদের সেই চিত্রটা যেন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসে। কৈশোরে এসে ঈদের আনন্দের সাথে যুক্ত হয় কিছু নতুন ভাবনা। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, পছন্দের মানুষের সাথে দেখা করা – এগুলো মুখ্য হয়ে ওঠে। তবে তখনও সেই বাঁধভাঙা আনন্দটা পুরোপুরি বজায় থাকে।

যখন যৌবনে পদার্পণ করি, তখন ঈদের আনন্দের সাথে যুক্ত হয় কিছু দায়িত্ব। নিজের জন্য তো বটেই, পরিবারের অন্যদের জন্যও কেনাকাটা করার দায়িত্ব এসে পড়ে। ঈদের দিনের রান্নার আয়োজন, ঘর গোছানো – এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে ঈদের সেই আগের মতো নির্ভেজাল আনন্দটা যেন কিছুটা হলেও চাপা পড়ে যায়। কর্মজীবনের ব্যস্ততা এবং নানা ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা ঈদের সেই চিরাচরিত আনন্দকে কিছুটা ম্লান করে দেয়।

প্রৌঢ়ত্বে এসে ঈদের আনন্দ হয়তো অন্য রূপে ধরা দেয়। তখন আর নিজের জন্য নতুন জামাকাপড়ের তেমন চাহিদা থাকে না। বরং নাতি-নাতনিদের হাসিমুখ দেখলে, তাদের নতুন পোশাকে ঝলমল করতে দেখলে মন ভরে ওঠে। ঈদের দিনের সেই কোলাকুলি হয়তো কিছুটা নিয়ম রক্ষার মতোই মনে হয়, তবে প্রিয়জনদের সান্নিধ্য এবং তাদের মুখের হাসিই তখন ঈদের প্রধান আনন্দ হয়ে দাঁড়ায়।

আসলে বয়সের সাথে সাথে ঈদের আনন্দের তীব্রতা হয়তো কমে আসে, কিন্তু আনন্দের ধরণটা পরিবর্তিত হয়। শৈশবের সেই নিঃশর্ত আনন্দ হয়তো আর পাওয়া যায় না, তবে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা ঈদের আনন্দকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে অনুভব করি।

এর কিছু কারণও রয়েছে। ছোটবেলায় আমাদের কোনো দায়িত্ব থাকে না, তাই ঈদের আনন্দটা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারি। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের কাঁধে অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে। পরিবারের সদস্যদের খুশি রাখা, তাদের প্রয়োজন মেটানো – এই সমস্ত কিছু করতে গিয়ে ঈদের সেই ব্যক্তিগত আনন্দটা হয়তো কিছুটা হলেও কমে যায়।

এছাড়াও, সময়ের সাথে সাথে আমাদের চারপাশের অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে যায়। হয়তো ছোটবেলার সেই বন্ধুগুলো আর আগের মতো একসাথে হয় না। প্রিয়জনদের মধ্যে কেউ হয়তো এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। এই সমস্ত কারণেও ঈদের আনন্দে একটা বিষাদের ছায়া পড়তে পারে।

তবে কি সত্যিই বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঈদের আনন্দ কমে যায়? আমার মনে হয়, আনন্দের সংজ্ঞাটাই বদলে যায়। ছোটবেলায় ঈদ মানে ছিল শুধু নিজের জন্য আনন্দ করা। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা সকলের জন্য আনন্দ খুঁজে নিতে শিখি। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি দেখলে, গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করতে পারলে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা হয়তো শৈশবের সেই বাঁধভাঙা আনন্দের চেয়েও বেশি মূল্যবান।

তাই হয়তো বয়সের সাথে সাথে ঈদের আনন্দের তীব্রতা কিছুটা কমলেও, এর গভীরতা বাড়ে। আমরা শিখি কীভাবে অন্যের খুশিতে খুশি হতে হয়, কীভাবে ঈদের আনন্দকে ভাগ করে নিতে হয়। ঈদ এখনও আসে, সেই একই বার্তা নিয়ে – ভালোবাসা, ক্ষমা আর সহানুভূতির বার্তা। হয়তো এখন আমরা সেই বার্তাটিকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি।

তাই এই ঈদে আমরা বয়সের বেড়াজাল ভেঙে সেই ছোটবেলার ঈদের আনন্দের স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে আনি। প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাই, তাদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিই। যারা কষ্টে আছে, তাদের পাশে দাঁড়াই। কারণ ঈদের আসল আনন্দ তো এখানেই – সকলের সাথে মিলেমিশে খুশি থাকা। হয়তো শৈশবের সেই বাঁধভাঙা আনন্দ আর ফিরে পাওয়া যাবে না, তবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ঈদের আনন্দকে খুঁজে নিতে হবে এবং সেই আনন্দকে অন্যদের সাথে ভাগ করে নিতে হবে। তবেই ঈদ হয়ে উঠবে সত্যিকারের ঈদ – আনন্দ আর ভালোবাসার এক অমলিন উৎসব।

লেখক : শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/হেনা শিকদার/এমই

আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজ আজ কোথায়

জুলাই বিপ্লব ২০২৪ নিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.

চোখের বালি : অন্তর্জগতের জটিল রহস্য

চোখের বালি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি সামাজিক উপন্যাস। ১৯০১-০২ সালে নবপর্যায় বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে

ঈদের পরে যে বিষয় গুলোতে সচেতন থাকতে হবে

”ঈদ আমাদের অন্যতম প্রধান উৎসব। ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে একত্রিত হই আমরা। অনেকেই শহর

এনসিপি : পরিবর্তনের আশা, সন্দেহ এবং চ্যালেঞ্জ

বছরখানেক আগেও কি আমরা ভেবেছিল বাংলাদেশের রাজনীতির পুরনো মঞ্চে একদল তরুণ ঝড় তুলবে?জুলাই অভ্যুত্থানের পরে, 
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লিবিয়ায় ২৩ অপহৃত বাংলাদেশি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২

চট্টগ্রামে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১০

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৪২ ফিলিস্তিনি

আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজ আজ কোথায়

ক্যানসারের সঙ্গেও লড়তে সাহায্য করে ছোট এলাচ

যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব মানতে নারাজ রাশিয়া

বার্নাব্যুতে ৮ গোলের রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে ফাইনালে রিয়াল

চোখের বালি : অন্তর্জগতের জটিল রহস্য

ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে ঈদে গ্রামে যাওয়া মানুষ

ঈদ মিছিলে মূর্তিবাদী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে: হেফাজতে ইসলাম

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ৭ জন নিহত

২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা

ঈদের পরে বদহজম বা ডায়রিয়া : কি করবেন, কি করবেন না

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে

দেশে মানবিক আইন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে: ডা. শফিকুর

সবাই মিলে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে: খালেদা জিয়া

আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে দাঁড়াতে দেব না: মাহফুজ আলম

কুমিল্লায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বাসের ধাক্কায় নিহত ৩

চীন সফর বর্তমান সরকারের একটি বড় সাফল্য: মির্জা ফখরুল

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া